সেই জটাধারী সাধুবাবা যাহার জটপাকানো দীর্ঘ চুলগুলো মাথার মধ্যখানে উচু ডিবির মত পেচাইয়া রাখিত। একখানা ছোট কোষা নৌকায় চাপিয়া ভরা বর্ষায় প্রায় প্রতিদিন কোথায় চলিয়া যাইতো। আবার জলদাস জেলে ছোট ছিপ নৌকায় করিয়া নদীতে জাল পাতিয়া মাছ ধরিত। কত বিচিত্র মাছ তাহার জালে ধরা পড়িত। চারিধারে বর্ষার পানিতে আবদ্ধ দ্বীপের মতো বাড়িতে বসিয়া বালক এসব দেখিত আর ছটফট করিত- আহা তাহাদের মতো যদি অবাধে ঘুরিয়া বেড়ানো যাইত।
একদল লোক বর্ষার মাঝামাঝি বড় ভেদি নৌকায় চাপিয়া কোথায় যেন চলিয়া যাইত। বলিত টেঙ্গর যায় ধান কাটিতে। ফিরিয়া আসিত বর্ষাশেষে নৌকায় ধান বোঝাই করিয়া। টেঙ্গর কোথায়?
অজানাকে জানিতে অদেখাকে দেখিবার অভিপ্রায়ে বালক মন ব্যাকুল হইয়া পড়িত।
সেসময়ে কলেরার প্রকোপ ছিল বিস্তর। বর্ষার পানি চলিয়া যাইবার পর গ্রামে এই রোগের দেখা মিলিত। কলেরা হইতে পরিত্রাণ পাইতে গ্রামবাসী গ্রামের চারিধার ঘুরিয়া জিকির করিত। সিন্নির আয়োজন চলিত। সে এক এলাহী কান্ড। সম্ভব হইলে সেই গল্পও বলিব।
অজো পাড়াগায়ের এক বালকের সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করিয়া বিদ্যালয়ে পড়িতে যাওয়া, পরিবারের চরম দূর্দিনে দেশ ত্যাগ, কলিকাতায় বসবাস আবার সেইদেশে টিকিতে না পারিয়া দেশে ফিরিয়া আসা, নিজ গ্রামে থিতু হইতে যাইয়া প্রতিবেশীদের অসহযোগীতা, পক্ষাঘাতে বাবার শরীর বিকল হইয়া বিছানায় পড়িয়া থাকা, অতঃপর মৃত্য। ভয়ানক সেই জীবন সংগ্রামের কথা কি পাঠক বুঝিবে?
কিংবা সেই পল্লী বধূ যাহার স্বামী নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। এক পুত্র সন্তান হারাইয়া যায় মেলা দেখিতে যাইয়া অপর পুত্র অভাবের যাতনায় বাড়ী ছাড়িয়া পালাইয়া যায়। না খাইতে পাইয়া কন্যার করুণ মৃত্য হয়। অভাগীর সেই মর্মপীড়া পাঠককে বুঝাইবো কি করিয়া?
জীবন নাপিত যাহার কন্যা ধর্মান্তরিত হইয়া মুসলমান ছন্নছাড়ার সহিত ভাগিয়া গিয়াছিল। অভাবের সংসারে এনজিওর কিস্তি না দিতে পাড়িয়া সেই কন্যা গলায় ফাঁস দিয়া আত্নহত্যা করিয়া পাপের পাশ্চচিত্ত করে। এসব কি লিখিয়া যাইতে পারিব?
চলিবে...