ঘটকদের স্বভাবতই কথাবার্তায় একটু কৌশলী হতে হয়। অনেকটা কুটনৈতিকদের মত। হয়তো দেখা গেল মেয়ে কালো। সে পাত্র পক্ষকে বলবে মেয়ের গায়ের রং কিঞ্চিৎ ময়লা অথবা উজ্জল শ্যামলা। তয় বিয়ের পর রং ছাড়বো। ছেলে বেকার। টোটো কোম্পানীর ম্যানেজার। কনের বাড়ীতে গিয়ে বলবে ছেলে ছোটখাট ব্যবসাপাতি করে আরকি। বাবার অগাধ ধনসম্পত্তি। কাজকাম না করলেও চলে। খাওয়া পড়ার চিন্তা নাই। মেয়ে আপনার রাজরানীর মত থাকবো।
মফিজ ঘটকের ব্যপারটাও কিঞ্চিৎ এরূপ। আমাদের এলাকায় মফিজ ঘটক এক সুপরিচিত নাম। ঘটক মফিজের নাম শুনেনি এমন লোক এ তল্লাটে খুজে পাওয়া দুস্কর। সে ছিল ভীষণ রকমের বাকপটু। বাকচাতুর্যে তার জুড়ি মেলা ভার। ঘটকালী করতে গিয়ে সে প্রায়ই বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিত। আর সেটা পুরো এলাকায় মুখরোচক গল্পে পরিনত হতো।
ছেলে ট্যারা? বিয়ে করাবে? ডাক মফিজ ঘটককে। মেয়ে কালো, পাত্র মিলছে না। ডাকো মফিজ ঘটককে।
মান্ধাতা আমলের শরীফ ছাতা বগলদাবা করে মফিজ ঘটক এসে হাজির।
ভাইসাব কিযে কন মফিজ পারে না এমুন কোন কাম আছে নি খোদার আলমে। এক সপ্তার মধ্যে সম্বন্ধ করাইয়া দিমু ইনশাল্লা। ভাবীসাব পানতো পাইলাম না। ভাইসাব পথ খরচাটা এট্টু বাড়াইয়া দিয়েন কইলাম। এই হ’ল মফিজ ঘটক।
তো এই মফিজ ঘটকের নিজের মুখে শোনা এক বিয়ের ঘটনা-
পাত্র গফুর। বিয়ের বয়স হয়েছে অথচ শারীরিক ত্রুটির কারণে বিয়ে করানো যাচ্ছে না। পাত্রীপক্ষের এক পা ওয়ালা ছেলে পছন্দ নয়। ডাক পড়ল মফিজের। মফিজ বলল - বিয়ের ব্যবস্থা হবে।
বাকীটা ঘটক মফিজের জবানীতেই শুনুন।
ছেলেতো লেংড়া। বিয়া করাই কেমনে? জুড়ি মিলাই কেমনে? অন্যগ্রামে এক বোবা মেয়ের সন্ধান ছিল আমার জানার মধ্যে। হের বাপরে গিয়া প্রস্তাব দিলাম পাত্রের পক্ষ থেকে। মেয়ের বাপ জিগায় - মেয়ে তো আমার বোবা। কতা কইবার পারে না। পাত্র রাজী তো? কইলাম রাজি মানে। পাত্র বিয়া করবার জন্য এক পায়ে খাড়া। মেয়ের বাপ খুশি হয়। বলে আলহামদুলিল্লাহ। যাক শেষ পর্যন্ত মেয়ের একটা গতি হইবো।
গফুরের বাপরে কইলাম - মেয়ে পাওয়া গেছে।
মফিজের বাপ জিগায় - মেয়ের বাড়ির লোকজন পুলার সমস্যার কথা জানে তো?
- জানে মানে! সবকিছু জাইনাইতো রাজি হইছে।
- পাত্রী রাজী আছে তো?
- “রাজী মানে! মেয়ের মুখে তো কোন কথাই নাই।” আমি কইলাম।
জবাব শুনে ছেলেপক্ষও খুশি। যাক বাঁচা গেল।
- তা পাত্রী কবে দেখাবা।
- আসছে শনিবার চলেন।
বিপদ ঘটল পাত্র-পাত্রী দেখাদেখির দিন। যথা নিয়মে পাত্র-পাত্রীর দেখাদেখির আয়োজন করা হ’ল। অবস্থা বুঝে দুই পক্ষকে সকল কথা খুলে বললাম।
বোবা মেয়ের কথা শুনেতো ছেলের বাপে রাগে ফায়ার। ঘটক তুমি এইটা কি কইলা। আমার পুলারে বিয়া দিমু বোবা মেয়ের সাথে। তুমি এইটা ভাবতে পারলা। তোমার সাহস তো কম না!
ওদিকে মেয়ে পক্ষও এক পা ওয়ালা ছেলে দেখে হুঙ্কার ছাড়তে লাগল। আরে ঘটক বেটা গেল কই। ওই বেটারে আগে সাইজ কর।
মহা মুছিবত। আমি তো পড়লাম মাইনক্যা চিপায়। দুই পক্ষ পারলে তখনই ডলা দিবার চায় আরকি।
সেই বার বহুত কষ্টে ওখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছিলাম।
আচ্ছা আপনারাই কন আমি কি মিছা কইছি? ছেলের এক পা নাই তাই মেয়ে পক্ষরে কইছি - ছেলে তো এক পায়ে খাড়া। আর মেয়ে তো বোবা তাই ছেলে পক্ষকে কইলাম - মেয়ের মুখে তো কোন কথাই নাই। ভুলডা কি কইলাম? কথাতো সত্য। কি কন আপনেরা।
বুঝলা ভাতিজা ঘটকালী করা অত সোজা না। সময় হইলে টের পাইবা কত ধানে কত চাল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৬