somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভূতের সাথে একরাত

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগেই বলে রাখি ঘটনা কিন্তু কাল্পনিক। কোন ভূতের সম্নানহানী এ লেখার উদ্দেশ্য নয়।)
একেতো শীতকাল তার উপর রাত, গ্রামের রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। আমি ফিরছিলাম শিকরামপুর হাট থেকে। হাট থেকে বেরোলেই এক খোলা মাঠ। সেই মাঠ পেরোলেই আমাদের গ্রাম। সঙ্গী না থাকায় একা হনহন করে হাটছি। গ্রামের কাছাকাছি পৌছে গেছি। এই সময় দেখি তিনি পথ আগলে দাড়িয়ে আছেন। গ্রামের একেবারে সামনে পথের ধারে বিরাট এক তালগাছ ছিল। তার এক পা সেই তালগাছের মাথায় আরেক পা কবিরাজ বাড়ীর বটগাছের উপর। ভাবখানা কেউ ঐ দু’পায়ের ফাঁক গলে ওপাশে যাওয়ার চেষ্টা করলে চেপে ধরবে। এমন শয়তান ভূত।

আমি তো পড়লাম মহা মুসকিলে। গ্রামে ঢোকার পথে এই ঝামেলা। এখন বাড়ী যাই কি করে। এদিকে শীতের রাত হওয়ায় পথে লোকজনও তেমন একটা নাই। আমার হাতে ঝুলানো ইয়াবড় বোয়ালমাছ। বোয়াল মাছ আবার ভূতের প্রিয় খাবারের একটি। ব্যাটা ওৎপেতে আছে ঐ মাছ খাওয়া জন্য।

আমিও ছাড়ার পাত্র না। আগেই জানতাম আগুন হলো ভূূতের যম। আগুন দেখলে ভয় পায় না এমন ত্যাদর ভূত ত্রিভূবনে নাই। আগুন দেখলে ওদের আতœায় পানি থাকে না। পকেটে ম্যাচ ছিল। খুজে একটা বড় শুকনো গাছের ডাল জোগাড় করলাম। তারপর সেই গাছের ডালে ম্যাচ জ্বেলে আগুন ধরালাম। জ্বলন্ত ডালখানা একহাতে ধরে সামনে এগুতে লাগলাম। বাবাজিতো আগুন দেখে আগেই চম্পট। আমি নিশ্চিত মনে রাস্তা পেরোলাম। ওমা শুনিকি বাবাজি বলছে- “এ যাত্রা বেঁচে গেলিরে মানিক। তবে তোরে আমি আবার ধরব। ধরে ঠিক ঘার মটকে দেব ক্ষন। আমার সঙ্গে বাটপারি।” আমি মুচকি হেসে বললাম - “সে পরে দেখা যাবে ক্ষন। এখন তুমি বাড়ী গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।”

আরেকবার। চকের পানি তখন অনেক নিচে নেমে গেছে। লোকজন সেই পানিতে বাধ দিয়ে মাছ ধরছে। আমি এবং বদি দু’জনে মিলে চকে বাধ দিলাম। রাতে বাধে মাছ ধরছি। মাছে খালই ভর্তি হয়ে গেলে একটু দূরে রাখা নৌকার খোলে সেগুলো ঢেলে রেখে আসছি। পাশের উচু জায়গায় নৌকার ছই দিয়ে তৈরী ডেরাতে ঘুমিয়ে আছে বদি। রাতের মাঝামাঝি সময় তাকে ডেকে দিয়ে আমি ঘুমাবো এমন পরিকল্পনা।

তো আমি এক মনে গর্তের পানি সেচে যাচ্ছি। রাতের বেলা মাছ ধরা পড়ছে প্রচুর। আধঘন্টা পরপরই খালই খালি করতে হচ্ছে। হঠাৎ শুনি কিছু খাওয়ার শব্দ। আমি নৌকার দিকে তাকালাম। দেখি একটা মেছো ভূত আপন মনে মাছ খেয়ে যাচ্ছে। আমি কষ্ট করে মাছ ধরছি আর সে মজা করে সে মাছ খাচ্ছে। দিলাম ব্যাটারে দৌড়ানি। সে পানিতে ঝপঝপ আওয়াজ তুলে দূরে চলে গেল। ওমা কিছুক্ষন পর আবার এসে হাজির। আবারও দিলাম দৌড়ানি। কিছুক্ষন পর আবারও আসে। এদিকে শব্দ করায় মাছও ঠিকমত আসছে না। মাথায় রক্ত চড়ে গেল। আমি মাছ ধরা বাদ দিয়ে ঐ ব্যাটাকে তাড়া করে টেকের কলইক্ষেতে গিয়ে ঝাপটে ধরে ফেললাম। ভূত ব্যাটা বুঝলো আর দৌড়ে লাভ নেই। সে ঘুরে আমাকে থাবড়া দিল। আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম। তারপর ঝাপিয়ে পড়লাম তার গায়ে। দু’জনের মধ্যে তুমুল মল্লযুদ্ধ শুরু হ’ল। একবার ভূতে আমাকে নিচে ফেলে তো আবার আমি তাকে নিচে ফেলি। এভাবে চলতে লাগল। কিন্তু ব্যাটাকে কিছুতেই কাবু করা যাচ্ছে না।

এদিকে বদির ঘুম ভাঙ্গলে সে আমাকে ডাকতে লাগল। আমি জোড়ে চিৎকার দিয়ে বললাম যে আমি ভূতের সাথে কুস্তি লড়ছি। একথা শুনে বদি ছুটে আসলো। হাতে তার ইয়া বড় রাম দা। কখন কোন বিপদ হয় সেজন্য সে আগেই এই রাম দা এনে রেখেছিল। সে কাছে এসে - “মানিক তুই ওর মুখ চেপে ধর। আমি রাম দার কোপে শালার মাথা দু’টুকরো করে ফেলবো” বলে দিল কোপ। কিন্তু ভূতটা খুব দ্রুত মাথা আরেকপাশে সরিয়ে নিল। কোপ লাগল না। সে আবারও কোপ দিল কিন্তু এবারও লাগল না। এভাবে যতবার কোপ দেয় প্রতিবার একই ঘটনা। কোন কোপই লাগে না। আর লাগবেই বা কিভাবে সে তো আর আমাদের মত মানুষ না। ভূত বলে কথা।

আল্লাহর কালাম শুনলে ভূত পালায়। এটা আমার কথা না পাগলা মদনের কথা। আবার দিনের আলো ফুটলেও ভূতগুলো সব অদৃশ্য হয়ে যায়। কেননা দিনের বেলা ভূত দেখা গেছে এমনটি কখনও কেউ শোনেনি। যাই হোক রাতভর চলল এ মারামারি। ভোররাতের দিকে আমি ভূতটাকে নিচে ফেলে দু’হাতে চেপে ধরে আছি এসময় দূরের মসজিদে ফজরের আজান শোনা গেল। ভোর হচ্ছে। ওমা দেখি আমার হাতে ধরা একটা পোড়া চেলাকাঠ। ভূত ব্যাটা নাই। শালায় চিতাখোলার আগুনে পোড়া চেলাকাঠ ধরিয়ে দিয়ে পালিয়েছে। সারারাত এই পোড়া চেলাকাঠের সাথে কুস্তি লড়লাম? আমি বিরাট ধন্দার মধ্যে পড়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৭
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×