রাতের বেলা টহলরত পুলিশের একটি দল যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ এক পুলিশ কন্স্টেবল পেশাবের প্রচন্ড চাপ অনুভব করায় সেটা খালাস করতে গিয়ে বসল রাস্তার পাশের এক ঘরের কোনায়। কর্ম শুরু করবে ঠিক এই সময় সে শুনতে পেল ঘরের ভিতর একজন আর একজনকে বলছে - এইটা হইছে নবীজীর সুন্নাত। কাম করতে হইবো খুব আদবের সাথে। নে বিসমিল্লাহ বইলা শুরু কর। ধরছস ঠিক মত? অপরজন বলল - হ ধরছি।
- ঠিক আছে এহন হাত কাট।
পুলিশ কন্স্টেবল তো কর্ম না সেরেই দিল দৌড়, গেল তার বড় স্যারের কাছে।
- স্যার পাইছি।
- কি পাইছ?
- স্যার জঙ্গি পাইছি। এক্কেরে ঘর ভর্তি। শালারা বিরাট বড় গ্যাং। লোক একটারে ধইরা হাত কাটতেছে।
- কুনহানে?
- আরে আমার সঙ্গে চলেন আগে। সে বড় স্যারকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসল ঐ ঘরের কোনায়। কাটাকাটি তখনো চলছে।
- নে এবার পা কাট। গলা কাটবি সবার শেষে। খুব আদবের সাথে কাম করবি। আল্লাহ খোদার নাম মুখে রাখবি। বুঝছস?
কন্স্টেবল অমনি ঝাপ দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তারপর যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধরত গেরিলা সৈনিকদের মতো ক্রলিং করতে করতে বলল - বুঝলেন স্যার বিরাট জঙ্গি! কওয়া তো যায় না আবার কুনহানদিয়া ফুট্টুস কইরা গুলি কইরা ফুটা কইরা দেয়।
বড় স্যার ভাবে কথা সত্য। জঙ্গি বইলা কথা। তাও আবার একজন দুইজন না, পুরা ঘর ভর্তি। সে একটু দুরে গিয়ে ওয়্যারলেসে কন্ট্রোলরুমে খবর পাঠালো - ঘর ভর্তি জঙ্গি। দুই/চারজনে কিছু করা যাইবো না। আরও ফোর্স দরকার। তারাতারি। ওভার।
সারা পুলিশ প্রশাসনে তো হুলস্থুল কান্ড। ঘর ভর্তি জঙ্গি। ফোর্স দরকার। সয়ং পুলিশের বড় কর্তা বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে বসলেন। তিনি ওয়্যারলেসে ম্যাসেজ পাঠালেন তাদের সহযোগীতা করার জন্য।
মুহূর্তে ফোর্স চলে আসল। ঘরের চারপাশ ঘিরে ফেলল পুলিশে। ফোর্সের মধ্যে কেউ কাত হয়ে কেউ চিৎ হয়ে পজিশন নিল। কোন তেরিবেড়ি করলেই ডাইরেক্ট ফায়ার। সেরকমই নির্দেশ ওপর মহলের।
পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহকারে বড় স্যার এবার গিয়ে দাড়াল দরজার সামনে। ঘরের দরজায় কড়া নাড়ল সে। বলল - কোন অস্ত্র থাকা চলব না। শূন্যহাতে বেড়িয়ে আস। নো তেরিবেড়ি।
দরজা খুলে পাতলা চিকন তালপাতার সেপাই কিসিমের এক লোক বেড়িয়ে আসল। টুপি-পাঞ্জাবি পড়া, দাড়িওয়ালা। সঙ্গে আরও দুইজন অল্প বয়সী ছোকরা। বড় স্যার তো খুশিতে গদগদ। যা ভেবেছে ঠিক তাই। এক্কেরে পাক্কা জঙ্গি।
লোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল - হুজুর আমি খলিফা আর ওরা হইতেছে আমার সাগরেদ।
খলিফা হচ্ছে দর্জি। লোকে দর্জিকে খলিফা বলে ডাকে অনেক জায়গায়। যাদের আমরা চিনি টেইলার্স নামে।
- হ্যান্ডস আপ। হাত তোল। নট নড়ন চড়ন। বড় স্যার নির্দেশ জারী করল।
তারা হাত উপরে তুলে দাড়াল। বড় স্যার এবার ওয়্যারলেসে পুলিশের বড় কর্তাকে খবর পাঠালো - অপারেশন সাকসেসফুল। খলিফা আর তার সাগরেদ গ্রেপ্তার। ওভার।
- লাশ কই? বড় স্যার জিজ্ঞাসা করল। উত্তর না পেয়ে পূনরায় খেকিয়ে উঠে বলল - ঐ ব্যাটা লাশ কই রাখছস তাড়াতাড়ি বাইর কর। নাইলে খবর আছে কইলাম।
লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে জিজ্ঞেস করে - কোন লাশ হুজুর?
- আরে ব্যাটা একটু আগে যে লোকটাকে কাটাকাটি করলি সেই লাশ। বড় স্যার বলে।
খলিফা ওরফে দর্জি এবার আসল ঘটনা বুঝতে পেরে বলল - লাশ পাইলেন কই? আমিতো এতক্ষণ আমার সাগরেদগুলানরে কাপড় কাটা শিখাইতেছিলাম। পাঞ্জাবীর কাপড় ক্যামতে কাটতে হয় সেইটা দেখাইলাম তাগোরে। এই যে হেই কাটা কাপড় আর এই যে কেচি। সে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়। সাগরেদরাও তার কথায় সায় দেয়।
আর বড় স্যার তখন লা জওয়াব।
(বি: দ্র: ঘটনা কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তির সঙ্গে মিলে গেলে সেটা হবে নিতান্তই কাকতাল মাত্র। তার জন্য কোনভাবেই লেখক দায়ী নয়।)