somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী কর্তৃক অব্যাহত পুরুষ নির্যাতন - সোচ্চার হওয়ার সময় হবে কখন? (২য় পর্ব)

১৫ ই জুন, ২০১০ ভোর ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরুষ নির্যাতন কাহিনী – ২.
কাহিনীটি আমি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে শুনেছি ১৯৯০ সালে।
দক্ষিনের এক জেলা শহরে এক থাকেন এক ডাক্তার। তিনি পঙ্গু, হাটুর নীচ থেকে ডান পা টি নেই। ওখানে তার বাড়ীঘর, স্ত্রী সংসার, নেই কিছুই। একটি মসজিদ সংলগ্ন রুম ভাড়া করে থাকেন। সারা দিন রোগী দেখেন। খুব রোগী আসে। ভিজিট নেন কম। চেম্বারে, ঘরে, মানুষের ঘরে, সর্বদাই রোগী।
তার সম্পর্কে মানুষের বেশ কৌতুহল। সংসার নেই। আবার কখনো কোথাও যান না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে শুধু মসজিদ যান। গন্তব্য শুধু চেম্বার আর নির্জন ঘর।
আমি আর আমার ভাই একদিন এক প্রয়োজনে তার কাছে গেলাম। আমাদের উনি বেশ সম্মান করলেন। শুনেছি কোন আলেম-হাফেজ দেখলে উনি খুব সম্মান করেন। ফ্রী দেখেন। ভিজিট নেন না কোন ভাবেই। তাকে জানতে ইচ্ছে হল। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার পরিবার, ছেলে মেয়ে কোথায়? তিনি বললেন, দু ছেলে এক মেয়ে। ঢাকাতে তার মায়ের সাথে আছে।
আপনি তাদের দেখাশোনা করেন না? খোঁজ খবর রাখেন না?
তিনি উত্তর দিলেন, দিলেন বললে ভুল হবে। উত্তরে বললেন:
বিশ বছর সৌদী আরবে ডাক্তারী করেছি। অনেক টাকা পয়সা কামিয়েছি। ঢাকার মহাখালীর অভিজাত এলাকায় ভাল একটা বাড়ী করেছি। সৌদী আরবে থাকা অবস্থায় দু বছরে এক মাসের জন্য দেশে আসতাম। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা দেখে আবার চলে যেতাম। একদিন স্ত্রীকে বললাম, আর বিদেশ করা ভাল লাগে না। দেশে চলে আসব। স্ত্রী বলল, দেশে আসার দরকার কী? দেশে কি কাজ করার পরিবেশ আছে?
আমি স্ত্রীর থেকে এ কথা শুনবো, কখনো আশা করিনি। আমার ধারনা ছিল বিপরীত। মনে করেছিলাম, আমার দেশে ফেরার আগ্রহ দেখে খুব খুশী হবে।
যা-ই হোক, আমি চলে আসলাম। চলে আসাটা কারো ভালো না লাগে, লাগুক। এমনি ভাব আমার।
এসে দেখলাম, আসল চেহারা। আমি দু বছর পর এসে এসে যা দেখি তা নয়। অন্য পরিবেশ। স্ত্রী সন্ধ্যার পর সেজে গুজে বের হয়। অনেক রাত করে আসে। জিজ্ঞাস করলে বলে,
-বাহিরে ঘুরতে গেছিলাম।
-কোথায় গিয়েছিলে?
-অত প্রশ্ন করো না। এখন নারী স্বাধীনতার যুগ।
মাঝে মধ্যে ভিন্ন পুরুষরা আসে ঘরে। আপার সাথে জরুরী কথা আছে। জরুরী কথা আবার এমন, যা দরজা বন্ধ করে ফিস ফিস করে বলতে হয়।
ছেলে দুটো মাঝে মধ্যে নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে ঘরে আসে। মেয়েটাও ও রকম। মনে করলাম, ঠান্ডা মাথায় সংস্কার করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে। আর করতে যেয়েই ঘটল বিপত্তি। প্রায়ই আমার সাথে তর্ক বাধত।

একদিনের ঘটনা। আমি ক্লিনিক থেকে ঘরে আসার পর আমার স্ত্রী গায়ে পরে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ তর্ক লাগালো। ছেলে দুটো তার মায়ের পক্ষ নিল। মেয়েটা ঘরে নেই। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী একটা লোহার পাইপ নিয়ে আমাকে মারতে লাগল। সে প্রচন্ড আঘাত! আমি বেহুশ হওয়ার বান করলাম। আঘাতের তীব্রতা যদি এতে কমে।কিন্তু কমেনি। আসলেই এখন আমার আর হুশ নেই। ঠিক কখন হুশ ফিরে আসল, বলতে পারব না।
হুশ ফিরে আসলে দেখি চারিদিক অন্ধকার। আমি অনুভব করি আমি একটি রেল লাইনে। আমার ঠিক পাজরের নীচে রেল লাইনের পাত। গায়ে কোন জোর নেই। মুখ খুলতে পারি না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকি। প্রার্থনা করি, একটু সামান্য শক্তি দিলেই হবে। যদি রেল লাইনটি থেকে একটু সরে যেতে পারি, জীবনটা বাচবে। আল্লাহ সত্যি শক্তি দিলেন। হাত-পা অবশ। একটু একটু করে দেহটা নাড়িয়ে সরে আসার চেষ্টা করছিলাম। এমনি সময় অনুভব করলাম, একটি ট্রেন আসছে। জোর দিয়ে চেষ্টা চালালাম। অনেকটা নিজেকে প্রায় সরিয়ে এনেছিলাম। শুধু ডান পা টা তখনও বাকী ছিল। পারলাম না। ট্রেনটার চাকা আমার ডান পায়ের হাটুর নীচটা অতিক্রম করে চলে গেল। অনুভব করলাম, পুরো ট্রেনটা একটি অগ্নিকুন্ড হয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। এরপর আর কিছু মনে নেই।
যখন হুশ আসল, দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শায়িত। গত রাতে একজন রোগীকে যেভাবে ক্লিনিকে রেখে এসছিলাম, আমি ঠিক সেভাবেই এখন।
ওরা আমার কাছে পরিচয়, ফোন নম্বর চাইল। আমি পরিবারের কারো কথা না বলে এক বন্ধুর ফোন নম্বর দিলাম। বন্ধুটি আসল। বললাম, তোমার প্রথম কাজ হল, আমার অবস্থান তুমি আমার ফ্যামিলিকে জানাবে না। তারা যখন বুঝবে তাদের অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে তখন আবার কিছু করার চেষ্টা করবে।
আমি পা হারালাম। ভাল হয়ে উঠলাম। তার সহযোগিতায় এ শহরে এসে আত্নগোপন ও সেবা দুটোই করে যাচ্ছি। আজ তিন বছর চলে গেছে। মাঝে মধ্যে বন্ধুটির কাছে পরিবারেরে কিছু খোঁজ খবর পাই। অসম্ভব রকম ব্যস্ততার মাঝেও সে চেষ্টা করে। শুনেছি মেয়েটি একটি বখাটের সাথে বিয়ে বসেছে। ভালো নেই। ছেলেগুলো এখন আর মায়ের কথা শুনে না। বাড়ীঘর বিক্রি করে টাকা চায়, আমেরিকা যাবে।
তবে আমি ভালে আছি। অনেক ভালো আছি। আর শুধু প্রার্থনা করি ওরাও যেন ভালো থাকে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১০ সকাল ১০:৩৬
২১টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×