somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রমিক কৃষক নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তের প্যাকেজ নেই

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৮ সালে বিশ্বমন্দার কালে যুক্তরাষ্ট্র বেল আউট ঘোষণা করে ৭০০ বিলিয়ন ডলার। সেই টাকা গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিগ করপোরেশনগুলোর পকেটে। কিন্তু যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাকিতে বাড়ি কিনেছিলেন তাদের বাড়িটাও আবার ব্যাংক নিয়েছিল। তো, বেল আউট হলো একটা মুফতে ব্যাপার, যার মাধ্যমে জনগণের টাকা চলে যায় ধনিদের পকেটে। বাংলাদেশে এর বেশি আশা যারা করেছিলেন তারা সব নাদান বালক।
বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই অর্থের মধ্যে সরাসরি ভর্তুকি আছে গড়ে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ। যাদের এই ঋণ দেওয়া হবে গত দশ বছরে এই ধনপতিরা গত দশ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আর অবলোপন ও খেলাপি ঋণ মিলিয়ে এর পরিমান ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ হলো এই ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোটিপতিরা মেরে দিছে। আপনাদের ধারণা কি? এই যে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে, তা কি ব্যবসায়ীরা ফেরত দেবে? যে ঋণে আবার সাড়ে চার থেকে ৫ শতাংশ ভর্তুকি আছে? নিশ্চিত থাকুন তাদের ৯০ শতাংশই ফেরত দেবে না। বড় মহামারিতে সাধারণ জনগণ মরে আর সেই গল্প সামনে এনে ধনিরা আরও ধনি হয়। এই হলো আপনার আরাধ্যের, প্রেমের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এবার তালি বাজান।
শ্রমিকদের জন্য কী প্যাকেজ আছে?:
শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা দেওয়ার কথা জানান। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথা জানান। এর অর্থ গরিব, কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য কোনো প্যাকেজ নেই। অথচ বাস্তব অর্থেই রাষ্ট্রের মালিক তারা।
জনগণের টাকা গেলে পাচার কম হতো, সরকারের রাজস্ব বাড়ত:
দেখুন এটা কোনো হায়রা ইকোনমিকস না-সোজা সাপটা কথা। ধরুন ৫০ হাজার কোটি টাকা দেশের মানুষের কাছে গেলে সেই অর্থ তারা কেনাকাটা করত এই জরুরি সময়। এসব অর্থ দিয়ে মানুষের রোজকারের কেনাকাটা করতেন। গ্রামের মানুষও এখন ১ টাকার মিনিপ্যাক শ্যাম্পু কিনে ব্যবহার করেন। সাবানও ছোট হয়েছে গরিব মানুষকে টার্গেট করে। এ রকম অসংখ্য পণ্য কিনে থাকে মানুষ। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষই এসবের প্রধান ক্রেতা, যাদের সংখ্যাও বেশি।
যদি সরাসরি নগদ প্রণোদনা দেশের খেটে খাওয়া মানুষ পেত তাহলে ওই সব পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। এতে ওই সব কোম্পানি অচল হয়ে যেতো না। তারাও সচল থাকত। সেই কেনাকাটার ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসলে সরকারের ঘরেই ফিরত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে মুনাফার ওপর ট্যাক্স বসলে সেখান থেকেও সরকারের ঘরে টাকা যেত। এখন যেটা হলো, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তাদের হাতে টাকা থাকবে না। কেনা কাটা বহুলাংশে কমে যাবে। এতে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর নগদ যে ঋণ পাবে তা সোজা কানাডায় পাঠিয়ে দেবে, সেই টাকায় তৈরি হবে সেখানকার বেগম পাড়া।
এই ঋণ যা দেবে সরকার তার ৯০ শতাংশ আর ফেরত আসবে না। কই যাবে টাকা? ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে টাকা পাচারের শীর্ষে এক নম্বরে ভারত, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মানে টাকা পাচারে ভারতকে টেক্কা দিতে পারিনি বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়, যদি ভারতের অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগও হতো বাংলাদেশ, তাহলে ভারতকে টাকা পাচারে এমন পেছনে ফেলতাম, তাকে ফের এক নম্বর হতে হলে বাংলাদেশকে দখল করে নেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকত না।
গত ৪ মার্চে যুগান্তর জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে প্রথম আলোর তথ্যমতে, ‘গত সেপ্টেম্বর (২০১৮ সালে) শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।’ এর মধ্যে ২০০৩ সালে নীতিমালা হওয়ার পর ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে।
তাহলে কি দাঁড়াল? ফাড়ল, বাংলাদেশকে যারা লুটেপুটে খাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সরকার। কারণ এই দুই সরকারের আমলেই এটা ঘটেছে। এখন অর্থনীতির আকার বেড়েছে, লুটের আকারও বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে। সেটা দখল না নিতে পেরে বিএনপির মন খারাপ আর আওয়ামী লীগের প্রতিদিনই ঈদের দিন।
বামপন্থীরা দোয়া দরুদ পড়তাছেন?:
এ রকম অনৈতিক রাষ্ট্রের প্যাকেজের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারত বামপন্থীরা। তারা প্রথমে যখন ৫ হাজার কোটির প্যাকেজ দিছে তখনো আইসোলেশনে ছিল। মূলত তারা শাসকশ্রেণির অংশ হিসেবে বহুকাল এখানে ভাড়া খাটছে। তারা মাঝে মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনে হম্বিতম্ভি করে। কারণ তাদের কিছু তরুন তরুনী সমর্থক এবং কর্মী আছে। তাদের বোঝায়, এইতো প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিপ্লেবর যাত্রা শুরু হলো বলে কমরেড।
এই বাম দলগুলো শ্রমিক কৃষকের রাজনীতির কথা বলেন। কিন্তু লাখে লাখে কাতারে কাতার শ্রমিক ভাই-বোনেরা কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে পথ পাড়ি দিচ্ছেন তখন কিন্তু তারা কিন্তু মালিকদের বাড়ি ঘেরাও করেনি। বলবেন, বামদের শক্তি নেই। কিন্তু সবগুলো বাম দলের একটি করে শ্রমিক সংগঠন আছে। যদি সবগুলো বাম দলের শ্রমিক সংগঠনের শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিও মালিকদের ঘেরাও করত তাহলে সেখানে কম করে হলেও ৪০০ লোক হতো। তারা সে কাজটিও করেনি।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×