somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বপ্ন, আমার দায়

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ভাল করেই মনে আছে। প্রাইমারী পাশ করে হাইস্কুলে ভর্তি হবার কথা। হাই স্কুলে ভর্তি হবার ভয়ে আমি মনে মনে চাইতাম যেন পঞ্চম শ্রেণি পাশ না করি। আমি শুনে এসেছি সেখানে শিক্ষকদের শাস্তির কথা। সেই সব গল্পে কিছু মিথ থাকলেও কিছু বাস্তবও ছিল।

বাবা মায়ের হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেক শিশুর কাছেই ভয়াভহ। দু একটা ব্যতিক্রম বাদে বেশির ভাগ শিশুই দ্বিতীয় দিন স্কুলে যেতে চায় না। জোর করে স্কুলে নিয়ে গেলে একা ডেক্সে বসতে চায়না। একটা শিশুর মনে স্কুল ভীতিটা কি ভাবে তৈরী হয়। স্কুল সম্পর্কে তার বাসায় যে সব কথা বলা হয়, নিশ্চয় তার উপর ভিত্তি করেই স্কুলের উপর তার একটা ভাল লাগা অথবা মন্দ লাগা নিজেই তৈরী করে নেয়। অথচ এই শিশুটি মেলায় যাওয়া,শিশু পার্কে যাওয়া,চিড়িয়া খানায় যাওয়া,নানা বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার প্রতি কোন ভয় ভীতি কাজ করেনা। প্রথম বার শিশু পার্কে/চিড়িয়া খানায়/মেলায় গিয়ে পরের বার যেতে চায়নি এমন কি হয়! এসব কেন হয়?

শিশু একাডেমিতে অবশ্য বই ছাড়াই তাদের শুরু করে। অনেক কিন্ডারগার্টেনে এখন প্রি স্কুল চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা কি জানি শিশুরা প্রথমে কি শিখবে? কি ভাবে শিখবে? কি রকম ভাবে শিখবে?

বেশির ভাগ অভিভাবকই তাদের শিক্ষার অভিজ্ঞতা তার শিশুর উপর প্রয়োগ করে। সে ত্রিশ বছর আগে যে পদ্ধতিতে শিখেছে,সেই একই পদ্ধতি তার সন্তানের উপর প্রয়োগ করতে চায়।বাবা মায়ের যে আকাঙ্ক্ষাটা তার জীবনে পূর্ণ করতে পারেনি। সে তার সন্তানকে দিয়ে সেই আকাঙ্খা পূরন করতে চায়। এই চাওয়াটা হয়তো দোষের নয়। কোন বাবা মা-ই চায় না যে তার সন্তান বিপথে যাক। কোন বাবা মা-ই চায়না তার সন্তান অন্যের সন্তান থেকে পিছিয়ে থাকুক। কিন্তু সুপথ বলতে সে যা বোঝে তাই তার সন্তানের জন্য নির্ধারন করেন। একজন ধার্মিক বাবা তার সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে বেশি পছন্দ করেন।প্রগতিশীল হলে প্রগতিশীল শিক্ষাই দিতে চাইবেন। ধুর্ত বাবা তার সন্তানকে হয়তো চতুর বানাতে চাইবেন। প্রতিটা বাবা মা-ই তাদের নিজেদের বিবেচনায় সর্বোচ্চ ভালোটাই তার সন্তানকে দিতে চায়। কিন্তু এই যে বললাম বিবেচনা এইটা নির্ধারিত হবে কি করে? ব্যক্তি বিশেষে ভালোর তারতম্য থাকে। একজন ব্যবসায়ী বাবা তার ছেলেকে অধিক আয়ের জন্য তৈরী করবে। একজন সাহিত্যিক বাবা তার সন্তানকে সাহিত্য অনুরাগী হিসেবে তৈরী করতে চাইবে।আর আমি আমার সন্তানকে আমার মতো বাউন্ডুলে করার অনুপ্রেরণাই দিব।

অভিভাবকের সেই আশা পূরণের জন্য শিশু অবস্থাতেই তাকে বই এর বোঝা কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়। রাতারাতি তাকে ইংরেজী,বাংলা,গণিত,বিজ্ঞান,ধর্ম সব সকল বিষয়ে পণ্ডিত বানাতে চেষ্টা করা হয়। এই চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা নিয়ে যখন একটা শিশু হিমশিম খায়। একটা শিশু যখন আর পেরে উঠতে পারেনা । তখনই তাকে শুনতে হয় সে ছাত্র হিসেবে খারাপ। তাকে দিয়ে কিছু হবে না। জন্টু সব কিছু পারে,কারন জন্টু হরলিক্স খায়। সব সুযোগেই করপোরেট নেয়।

কর্পোরেট চাকরিতে পাখি চেনার দরকার নেই।পাখির ডাক চেনার দরকার নেই,ফল চেনার দরকার নেই,ফুলের গন্ধ চেনার দরকার নেই।তাই স্কুল কলেজে এসব শেখানোর কোন তাড়া নেই। কবিতা পড়া অতিরিক্ত কোন যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয়না। খেলা ধুলো ও কোন বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে চিহ্নিত হয়না। বেঁচে থাকার জন্য একটা এমবিএ যতটা সহায়ক, দাবা খেলা কোন ভাবেই না। এই সমাজ বাস্তবতায় তাই বেঁচে থাকতে সার্টিফিকেটের জন্য ছুটি, শিক্ষার জন্য না।


শিশুদের শিক্ষার কি ভাবে শুরু হবে এই নিয়ে পণ্ডিতদের অনেক মতামত আছে। আমার কোন মতামত নেই। কিন্তু কিছু আকাঙ্খা আছে। আমি চাই স্কুল গুলার নিয়মে বিস্তর পরিবর্তন ঘটুক। আমি চাই শিক্ষকরা , অভিভাবকরা আবার চিন্তা করুক ,তাদের সন্তানদের কি মানুষ করবে? সু শিক্ষিত করবে ? নাকি বাজারে সব চেয়ে জনপ্রিয় পণ্য তৈরী করবে।

যদি সুশিক্ষিত-ই করতে চায়, তবে তার শিক্ষা কেন চারপাশ থেকে আগে শুরু হবে না। কেন কৃত্রিম বই থেকে প্রথম শিখতে হবে? কেন একটি শিশু ফুল দেখার আগে ফুলের ছবি দেখবে? কেন হরিণ দেখার আগে হরিনের ছবি দেখবে?

প্রথমে শিশুরা শিখবে শব্দ। পাখি চিনবে,পাখির ডাকের সাথে পরিচয় হবে। রং চিনবে,প্রকৃতিতে রঙ্গের খেলা দেখবে। গন্ধ শুকবে, গন্ধ শুকে বস্তু চিনবে। শব্দ শুনবে,পাথরের,কাঁচের,বেহালার,বাঁশির,ডোলের ,খঞ্জনির। বৃষ্টির শব্দ,জলের শব্দ,সাগরে ঢেউ এর শব্দ। ঝাউ গাছের বাতাসের শব্দ। বাঁশ ঝাড়ের শব্দ। আগে চিনবে তাদের চারপাশ। তার পর চিনবে অক্ষর। রাস্তায় বের হলে কত গাছ,কত ফুল,কত ঘাস। অথচ আমারা এসবের খুব কমই চিনি। এসব দিয়ে যদি চেনা,জানা শুরু না হয় তবে চেনা,জানার আগ্রহটা জন্মাবে কি করে?

আমি চাই একটা শিশু, প্রথম লিখতে শিখবে "মা"। তার পরে লিখবে "বাংলাদেশ"। যখন সে একটা লাইন লিখতে শিখবে সেই প্রথম লাইনটা হবে " আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালবাসি"। ভালবাসা ছাড়া শিশুর আর কোন শিক্ষার দরকার নাই। হোচট খেলে যে ব্যথা লাগে এটা শিখিয়ে দিতে হয়না। কিন্তু হাঁটা ঠিকই শিখাইতে হয়।

বৃষ্টি চিনবে, মেঘ চিনবে। পা ডুবিয়ে জল চিনবে। ধীরে ধীরে সাঁতার শিখবে। সাইকেল চালানো শিখবে। নৌকা দৌড়াতে শিখবে। এক সময় ট্রেন,জাহাজ,উড়োজাহাজ চালানোর আকাঙ্খা তৈরী হবে। হাডুডু,কানামাছি সহ সব খেলাই শিশুরা শিখবে। ধান গাছ চিনবে,আখ খেত চিনবে। কৃষকের কাজ দেখবে, শ্রমিকের কাজ দেখবে। ব্যংকের কাজ দেখবে,সংসদের কাজ দেখবে। আদালত দেখবে,থানা পুলিশ দেখবে। ডাক্তার দেখবে সবজী বিক্রেতা দেখবে, তাঁতি দেখবে প্রকৌশলীর কাজ দেখবে, তার পর সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে কি হবে সে?

আমি চাই একটা ছাত্র বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে মনে মনে বলবে। আমাকে এই শিক্ষিত করেছে রাষ্ট্র। কৃষক,শ্রমিক,রিকশাওয়ালা,ব্যবসায়ী সবার টাকাই আমার শিক্ষায় ব্যয় হয়েছে। আমাকে এই পথ তৈরী করে দিয়েছে রাষ্ট্র। আমাকে বেড়ে উঠতে শিখিয়েছে রাষ্ট্র,সমাজ, বাবা মার কিছু সহায়তা আছে। আমাকে মানুষ করে দিয়েছে আমার শিক্ষক, আমার সহপাঠি,আমার প্রতিবেশী সবার প্রতি আমার আছে অঢের ঋণ। আমার কর্তব্য হচ্ছে সেই রাষ্ট্রের, মানুষের এই ঋণ শোধ করা। আমাকে যেমন এই দেশের মানুষ সহায়তা করেছে বেড়ে উঠতে, আমারও পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি এই দায়িত্ব রয়েছে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×