somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যানিলার চিঠি পড়ে

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা।সিনেমার ডিভিডি বাছাই করছি একটা এক সুন্দরীর ছবি মনে ধরেছে।সিনেমার নাম ম্যানিলা আর ঐ সুন্দরি ছিলেন মনিকা বেলুচ্চি ।একটা টিনএজ ছেলের লুকিয়ে তাকে দেখতে যায়। বেলুচ্চি কে ভেবে রাতে মাস্টারবেশন করে । তার পরিবারের সবাই বিষয়টা জেনে ছেলেটাকে একদিন বাবা নিজেই পতিতালয়ে নিয়ে যায়।এই বয়সের একটা ছেলের চিন্তা ভাবনা,কাজ নিয়ে যে একটা সিনেমা হতে পারে চিন্তা করি নাই। ঐতিহাসিক অনেক কাহিনী ছিল সবটা মনে নেই। সিনেমাটা ভাল লেগেছি খুব এই টুকুই মনে আছে। আর মনে আছে সিনেমার সুন্দরি নায়িকার মুখ।

একটা নাম যত বেশি শুনা হবে ততই তার প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা তৈরী হয়। নিজের নামটা তাই মানুষের খুব প্রিয়।
মিডিয়াতে এত সব পণ্যের যে বিজ্ঞাপন দেয়।আপনি হয়তো খুব বিরক্ত। আমিও বিরক্ত কোন অনুষ্ঠান এই বিজ্ঞাপনের জ্বালায় দেখতে পারিনা। অনেক বিজ্ঞাপন আবার এতই জঘন্য দেখলে বমি আসে। আর মনে মনে আমার মতো হয়তো আপনিও ভাবেন যতই বিজ্ঞাপন দিক এই পণ্য আমি কোন ভাবেই কিনব না,। কিন্তু যখন দোকানে এই পণ্যটা আপনি ঝুলাতে দেখবেন আপনি মনে মনেই এই চেনা নামটার প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা অনুভব করবেন। আপনি না চাইলেও এই দুর্বলতায় আপনি আক্রান্ত হবেন। এই মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতেই কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করেন। নাহলে এই যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা এই পণ্য গুলোর জন্য খরচ করে তার আর কি কারন থাকতে পারে?

লাইব্রেরি যখন এই ম্যানিলা নামটা দেখি আমিও এই নামের প্রতি দুর্বলতা বোধ করি। নিজের অজান্তেই মনিকা বেলুচ্চির মুখটা মনে পড়ছিল। বইটার নাম ম্যানিলার চিঠি। লেখক জামসেদ ফয়েজি।এই নামে তিনি পত্রিকায় লিখতেন। তার আসল নাম মোহাম্মদ আবদুল মুঈদ।USAID এর বৃত্তি নিয়ে ১৯৬৪ সালে এক বছরের একটি কোর্স করার জন্য ম্যানিলায় গিয়েছিলেন। তখন কার লেখা ডাইরি থেকে ১৯৮৮ সালে দৈনিক নব অভিযান পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পায়। এবং বই আকারে বের হয় ২০০২ সালে।এই হল ম্যানিলার চিঠির পেছনের কথা।

ভ্রমন কাহিনী লেখকদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় অন্নদাশঙ্কর রায়। তার পরেই সৈয়দ মুজতবা আলি। আর কাউকে এমন প্রিয় তালিকায় নিতে পারছিলাম না। এই ম্যানিলার চিঠি পড়ার পরে এই তালিকায় আর একজনকে সংযুক্তি করে নিলাম। যদিও তিনি লিখেছেন অল্প কয়েকটি বই। আর ভ্রমন কাহিনী এই একটিই।

এই অঞ্চলের লাইব্রেরি গুলাতে আঞ্চলিক অনেক লেখকের বই শোভা পায়। সিলেটে অনেক লন্ডনি বই মেলার সময় দেশে আসেন। এক সাথে অনেক গুলো বই বাজারে প্রকাশ করে আবার চলে যান। শুনেছি এখানে নাকি কার কয়টা বই প্রকাশিত হলো এই নিয়ে লন্ডনে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। এর ফল স্বরূপ স্থানীর লাইব্রেরিতে বাজে বই এর স্তুপ জমে থাকে।আঞ্চলিক লেখকের বই কিনে তাই উৎসাহ পাই না। তার মাঝে ভাল যে লিখেন না এমনটা বলছি না। কিন্তু এত আবর্জনার ভেতরে একটা সুই খুঁজে পাওয়া সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু আমার কোন কাজ নেই বলে অবসর সময় আড্ডা দিতে যাই এই লাইব্রেরিতে। এমন এক কোণে দাঁড়িয়ে এই বই সেই বই পালা উল্টাতে থাকি। বিখ্যাতদের বই তো নাম দেখেই কিনি। কিন্তু যাদের এত নাম ডাক হয়নি,বাজারে বই এর কাটতি ভাল নেই। যারা নির্জনে ই সাহিত্য সাধনা করে যান তারা আমাদের আড়ালেই থাকেন। চায়ের দেশে থেকেও যেহেতু খাঁটি চা এখানে সুলভ না। এমনটাই ঘটে আমার ক্ষেত্রে। বই নিয়েই সময় আমার কাটে কিন্তু তবু অনেক মূল্যবান বই আমার হাত দিয়েই মানুষ নেয় অথচ আমি জানি না।

মি.ফয়জী একবছর ছিলেন ফিলিপিনের,ঘুড়ে বেড়িয়েছে সাগর থেকে পাহাড়,গ্রাম থেকে শহর। খেয়েছেন রেস্তোরাঁর থেকে রাজ ভোজন।মিশেছেন দেশী বিদেশী বহু মানুষের সাথে। ফিলিপিনে আছে বহু জাতির বাস। সেই সময় সেখানে বাস করতে হেড হান্টারা এবঙ একই সাথে হলিউডের সিনেমা আমেরিকায় মুক্তি পাওয়ার আগে ফিলিপিনে মুক্তি পেত। এত বৈচিত্র্য মানুষের দেশ ফিলিপাইন।

স্পেন দেশীয় নাবিক ম্যাজালান ১৫২১ খৃষ্টাব্দে পৌঁছে কলম্বাসের মতো মনে করলেন যে তিনি একটা নতুন দেশে পৌঁছে গেছেন। এশীয়দের কাছে সুপরিচিত হলেও তখন পর্যন্ত ঐ দ্বীপ গুলোর সমষ্টিগত কোনো নাম ছিলনা। সে সময় অস্ট্রিয়ার রাজকুমার ফিলিপ ছিলেন স্পেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী। ম্যাজালান সে কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখলেন ফিলিপিনস।

ফিলিপিনের শহর থেকে গ্রাম। ফুল থেকে নদী। পাহাড় থেকে সাগর,গাছ থেকে প্রাণী,ফুল থেকে অস্ত্র,ইতিহাস থেকে নৃতত্ত্ব ,শিক্ষা থেকে কুসংস্কার,ধর্ম থেকে সংস্কৃতি,সভ্যতা থাকে বর্বরতা,বিনয় থেকে নিষ্ঠুরতা,প্রেম থেকে সেক্স। সব বিষয়েই তিনি তুলে এনেছেন গল্পের ছন্দে। বইটা পড়তে পড়তে বার বারই মনে হয়েছিল অন্নদাশঙ্কর রায়ের পথে প্রবাসে,জাপানে পড়ে যেমন প্যারি সম্পর্কে,জাপান সম্পর্কে,ব্রিটেন সম্পর্কে নিখুঁত ধারনা পাই। তেমনি এই ম্যানিলার চিঠিটা পড়েও একটা মলাটে পেয়ে যাই পুরো ফিলিপিন কে। নিজের চোখে না দেখেও কোন একটা দেশকে এভাবে চোখের সামনে কল্পনা করিয়ে নেয়া সহজ কাজ মোটেও না। কত সহজ জিনিস বোঝাতে পৃষ্ঠার পৃষ্ঠা লিখি কিন্তু আমি রাম একতারা বাজায় শ্যাম এমন অবস্থা।

বইটার বর্ণনা দেয়া আমার উদ্দেশ্য না। আর আমি যদি বইটার বর্ণনা করে সব বোঝাতে পারতাম তাহলে তো একটা বইই লিখতে পারতাম, তাই না? এটা হচ্ছে আমার ভাল লাগা এবং বইটা পড়তে পড়তে আমার মনের মধ্যে যেসব ভাবনা উঁকি ঝুঁকি মারছিল তাদের কিছু অংশ তুলে দেয়া।তবে শেষ কথা হচ্ছে যারা ভ্রমন কাহিনী পড়তে পছন্দ করেন।অন্নদাশঙ্কর রায়,সৈয়দ মুজতবা আলী যাদের প্রিয় তারা নিরাশ হবে না।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×