somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পের পাঠ প্রিয়তা

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এটা ঠিক আজকাল প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় অণুগল্প লেখা হচ্ছে। অণুগল্পের বই বের হচ্ছে। খুবই ভাল খবর। বাংলা সাহিত্যের একটা দিক।
এই অণুগল্প কবে লেখা শুরু হয়েছিল, কে শুরু করেছিল, কোন লেখা অণুগল্প, কোন লেখা অণুগল্প নয় - এসবের চেয়ে খুব জরুরী যেটা সেটা হল এই অণুগল্পকে কিভাবে আরও ভালভাবে বেশি দিকে দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। কিভাবে সাহিত্যধারায় সম্পৃক্ত করা যায়। কিভাবে সাহিত্যধারায় স্পষ্ট উচ্চারিত করা যায়। সেই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত। তার জন্য যারা অণুগল্প লিখছে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে সবচেয়ে বেশী।
এই অণুগল্প লিখিয়েদের লেখায় বহু এক্সপেরিমেণ্ট দেখা যাচ্ছে। এই এক্সপেরিমেণ্ট অনেক পাঠকের বোধগম্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার সেই লেখা কিছু পাঠক বলছে অসাধারণ, এটাই হল আসল অণুগল্প।
উভয় ক্ষেত্রে লেখকই কিন্তু পাঠক। যারা শুধু পাঠক তারা এ রকম 'গল্প নয় অথচ অণুগল্প'কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। অথবা পড়ছে না মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আবার সেইসব শুধু পাঠক ছোট ছোট লেখা, দীপ্ত লেখা, মনগ্রাহী লেখা, অন্যভাবনার লেখা, ভাল বিষয় ভাবনার লেখা ঠিক পড়ছে। প্রশ্নোত্তর করছে। সেগুলো অণুগল্প কি না, গল্পের ফরম্যাটে আছে নাকি অণুগল্পের নিয়ম মানছে না, অণুগল্পের নিয়মটা কি ইত্যাদি নিয়ে সেইসব সাধারণ পাঠক বা শুধু পাঠক মাথা ঘামাচ্ছে না। তারা শুধু ভাল লাগা দেখছে।
কবিতার ক্ষেত্রে যেদিন থেকে জটিলতা, গদ্যের ঝলক, শব্দের ধাঁধা ইত্যাদি এল সেদিন থেকে কবিতার দিক থেকে অনেক পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেরকম ভাবে অণুগল্পের ক্ষেত্রে গল্প কিন্তু গল্প নয় এটা অণুগল্প, আখ্যান কিন্তু আখ্যান নয় এটা অণুগল্প, এটি গল্পের মত বলেছি কিন্তু হাজার দিকের কথা বলা আছে তাই এটা অণুগল্প - ইত্যাদি গোলকধাঁধাঁয় পাঠক হাবুডুবু খেতে চায় কি?
যদি এই গোলকধাঁধাঁয় সে এখন হাবুডুবু খায়ও এক সময় সে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? যেমন কবিতার ক্ষেত্রে অনেক পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তার জন্য অবশ্য অনেক লেখক পাঠককেই দায়ী করে। তাতে সাহিত্যের কি লাভ?
মোদ্দা কথা হল সহজ সরল সাধারণ লেখাই আসল লেখা। সহজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মগজমারি। সে লেখকের দিক থেকে যেমন পাঠকের দিক থেকে তেমনি।
ছোট কিন্তু সহজ সরলভাবে সুনির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে ভাবনার আড়ালে তুলে ধরার চেষ্টাই সাহিত্য। পড়ার সময় যেন সমস্ত শ্রেণির পাঠকের বুঝতে কোন অসুবিধা না হয়। আবার পড়ার পরে বিষয়ের গভীরে পাঠক যেন সহজেই ঢুকতে পারে। সেই লেখাই সাহিত্য। না হলে পড়তে পড়তে কিছুই বুঝতে পারলাম না আবার পড়ে তবে বুঝতে হবে তাহলে পাঠক সে লেখা আর পড়বে কি?
এক পাঠক কবিতা বুঝতে পারে নি বলে শ্রীজাত বলেছেন - "অসুবিধে নেই কিছু। আমিও মেটাফিজিক্স বুঝি না।"(ফেসবুক থেকে)।
অণুগল্পের লেখকও এমন বলতে পারেন। কিন্তু ওই যে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া পাঠক কি আর ফিরবে?
তাই অণুগল্পের ক্ষেত্রে সমস্ত এক্সপেরিমেনণ্ট একটা অবস্থানে জুড়ে যাক যেটা হল সমস্ত শ্রেণীর পাঠকের কাছাকাছি হওয়া। অণুগল্পের অস্তিত্বকে আরও পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়া।
যে কোন অবস্থানে গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ সাহিত্যধারায় আজও সমান জনপ্রিয়। কেন না তার সহজতা সরলতা পাঠকপ্রিয়তা। খুব বেশী এক্সপেরিমেণ্ট, খুব বেশি এটা নয় ওটা দারুণ, এটা অণুগল্প নয়, ওটাতে আপনি এটা দেন নি, এ করেন নি ও করেন নি ইত্যাদি (এসব তো চলতেই থাকবে) ভাবার চেয়ে বলার চেয়ে গভীর কিছু সহজ করে সাধারণভাবে সবাই লিখুক সবাই পড়ুক। সবগুলোই হোক অণুগল্প কিংবা অণুগল্প নয়।
লেখক নিজের শিক্ষা নিজে শিখুক। পাঠকের কাছে পৌঁছে যাক। সাহিত্য পাঠ করার সময় পাঠক কি ভাবে? এটা গল্পের মত পড়ব বা পড়েছি, এটা উপন্যাসের মত পড়ব বা পড়েছি, এটা প্রবন্ধের মত পড়ব বা পড়েছি, এটা কবিতার মত পড়ব বা পড়েছি কিংবা এটা অণুগল্পের মত পড়ব বা পড়েছি। তা কিন্তু পাঠক ভাবে না। পাঠক বিষয় ভাবনায় ডুবে যায়, ভাবনার আবেশে আবেশিত হয়, বিষয় ভাবনায় উদ্বেলিত হয়। সহজ পাঠের গভীর উপলব্ধিতে আরও সাহিত্য জীবন গড়ে তোলে। আরও বেশি সাহিত্য পাঠ করার আকাঙ্খা খুঁজে পায়।
তাহলে? সেই আরও বেশি সাহিত্য জীবনে, আরও বেশি সাহিত্য আকাঙ্খায় অণুগল্প তার অবস্থান আরও প্রসারিত করুক। সেই ভাবনাকে সামনে রেখে লেখা হোক আরও আরও অনেক অনেক অনেক অণুগল্প।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×