কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শকুন্তলার উপাখ্যানঃ
এরপর মুনি বলেন -শুন পরীক্ষিত পুত্র, ভরত বংশের কথাও অদ্ভূত।
জগৎবিখ্যাত রাজা ছিলেন দুষ্মন্ত। তিনি সংসারে এসে যেমন বসুন্ধরাকে ভোগ করেন তেমনি ধর্মের সাথে প্রজাপালন করেন এবং দুষ্টের সংহার করেন। তিনি রূপবান সুপুরুষ-একছত্র অধিপতি, মৃগয়াপ্রিয়।
একদা তিনি বনে মৃগয়া করতে গেলেন। সসৈন্য মহারাজ এক মহাবন ঘিরে ফেললেন। অসংখ্য সিংহ, ব্যাঘ্র, ভল্লুক, বরাহ, মৃগ শিকার করলেন। সৈন্যরাও নির্বিচারে শিকার করল। কিছু রথে রাখা হল, কিছু কাধে নিয়ে যাওয়া হল-কেউ কেউ আবার সেখানেই পুড়িয়ে খেল।
হিরণ্য নামে এক অতি মনোরম বন-যেখানে কণ্বমুনির আশ্রম ছিল। নানাজাতির বৃক্ষ তাতে নানা ফুল-ফল, নানা শ্রেণীর পাখি সেথায় সদা গান গায়। গাছে গাছে যেন মধুচক্রের অবস্থান। বায়ুর তেজে সেথায় সদা পুষ্পবৃষ্টি হয়। সেই বনের পাশ দিয়ে বয়ে যায় মালিনী নদী। মুনিরা এই নদীর দু’তীরে বসে ধ্যান করেন।
সেই বনে মুনির আশ্রম আছে বুঝতে পেরে দুষ্মন্ত এগিয়ে গেলেন এবং সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন তিনি না ফেরা পর্যন্ত এই স্থানেই তারা অপেক্ষা করবে। এই বলে তিনি কণ্বমুনির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। কিন্তু আশ্রমে মুনি নেই দেখে তিনি বিষণ্ণ হলেন।
সে সময় মুনির পালিতা কন্যা শকুন্তলা এসে রাজাকে পাদ্য-অর্ঘ্য নিবেদন করলেন। শকুন্তলার রূপে রাজা মোহিত হলেন।
কামান্ধ রাজা শকুন্তলাকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কে, কি ভাবে এখানে এসেছেন।
শকুন্তলা বললেন –পিতা কণ্বমুনি ফলের সন্ধানে বেরিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে আসবেন।
রাজা পুনরায় প্রশ্ন করলেন দারাত্যাগী জিতেন্দ্রিয় মহা ব্রহ্মচারী কণ্বমুনির কন্যা তিনি হতেই পারেন না! সত্য পরিচয় জানতে তিনি উৎসুক।
তখন কন্যা তার জন্মরহস্য উদ্ঘাটন করলেন। তিনি প্রকৃতই মুনির কন্যা। তার পিতা বিখ্যাত বিশ্বামিত্র মুনি।
বিশ্বামিত্রের তপস্যার তেজে পুরন্দর কম্পমান হন। তার ভয় হয় এই মুনি তার ইন্দ্রত্ব হরণ করবেন। সব দেবতাদের সাথে অনেক পরামর্শ করে তিনি শেষ পর্যন্ত অপ্সরা মেনকাকে ডেকে পাঠান।
মেনকাকে তিনি বলেন রূপে, গুণে তার তুল্য ত্রিভূবনে কেউ নেই। নিজ গুণে মেনকা যেন ইন্দ্রের সাহায্য করেন। বিশ্বামিত্রের তপস্যা যে করে হোক মেনকাকে ভঙ্গ করতেই হবে।
একথা শুনে মেনকা কম্পিত হন।
যোড়হাতে বলেন -বিশ্বামিত্র মহাতেজা ঋষি। তার ক্রোধে বশিষ্ঠের শত পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার আজ্ঞাতে কৌশিকী নদীর উদ্ভব। যাকে দেবরাজ ইন্দ্র ভয় পান-তার তপস্যা নষ্ট করতে মেনকারও সাহস হয় না।
যদিও দেবরাজের আজ্ঞা কোন মতেই লঙ্ঘন সম্ভব নয়, তাই কামদেব ও বায়ুকে সঙ্গে নিয়ে মেনকা হেমন্ত পর্বতে যেখানে বিশ্বামিত্র মুনি তপস্যায় রত সেখানে উপস্থিত হলেন।
মুনিকে দেখে মেনকার অন্তর কম্পিত হল। তিনি মুনির সামনে মায়ার ক্রীড়া শুরু করলেন। এই সময় প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হয়ে মেনকার সকল বস্ত্র উড়িয়ে নিয়ে গেল। ধিরে ধিরে মেনকা বস্ত্র আনতে গেলেন এবং বায়ুর নিন্দা শুরু করলেন।
এইসব কৌতুক দেখতে দেখতে মুনির শরীরে কাম পঞ্চশর ভেদ করলেন। কামান্ধ মুনি মেনকাকে নিজের অবয়বে ধারণ করলেন। কামে মত্ত হয়ে শৃঙ্গার রসে তারা মত্ত হলেন। এভাবে বহুদিন ক্রীড়ারসে গেল। জপতপ ত্যাগ করে মুনি কামের বশ হলেন।
একদিন সন্ধ্যাকালে বিশ্বামিত্র সন্ধ্যা আহ্নিকের জন্য মেনকাকে জল আনতে বললেন।
শুনে মেনকা হেসে বললেন -ভাল, এতদিনে সন্ধ্যার কথা স্মরণ হল!
একথা শুনে মুনি অত্যন্ত কুপিত হলেন। তা দেখে মেনকা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।
তার গর্ভে মুনির ঔরসে সন্তানের উদ্ভব হয়। সে সন্তান তিনি অরণ্যে প্রসব করে আবার স্বর্গে ফিরে যান। সেই সন্তানই হলেন শকুন্তলা।
এভাবে মেনকা মুনির তপস্যা ভঙ্গ করে শকুন্তলাকে অরণ্যে ফেলে চলে যান। অদ্ভুতভাবে বাঘ, সিংহ-পশুরা কেউ শিশুকে হিংসা করল না। পাখিরা শিশুকে ঘিরে রাখল। সে সময় কণ্বমুনি তপস্যা করতে সে বনে উপস্থিত হন এবং দয়া বশত অনাথাকে নিজ কুটীরে এনে পালন করেন। সেই থেকে তিনি কণ্বমুনির কন্যা। শকুন তথা পক্ষীরা তাকে আগলে রাখে তাই তার নাম হয় শকুন্তলা।
এক মুনি কন্বকে শকুন্তলার জন্ম কথা জিজ্ঞাসা করলে শকুন্তলা সে কাহিনী জানেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২২
Click This Link
৩২টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন