হস্তিনাপুরে পঞ্চপান্ডবঃ
রাজা পান্ডু ও রানী মাদ্রীর প্রাণত্যাগের কথা শুনে শতশৃঙ্গবাসীরা সকলে সে স্থানে এলেন।
ঋষিরা মিলে বিচার করে দেখলেন পান্ডু তাঁর পুত্রদের সাথে আশ্রমে বাস করতেন, কিন্তু এখন রাজা প্রাণত্যাগ করায় কুন্তীসহ পাঁচপুত্র অনাথ। এ অবস্থায় তাদের অরণ্যে রাখা শোভন নয়। বিচার করে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করাই উচিত ঠিক হল। মৃতদেহ চারজন বহন করল। ঋষিরা কুন্তী ও পাঁচপুত্রকে নিয়ে হস্তিনানগরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
নগরে প্রবেশ করতেই রাজ অন্তপুরে সকল সংবাদ গেল। ভীষ্ম, সোমদত্ত, বাহ্লীক বিদুর, ধৃতরাষ্ট্র সকলে সভায় বসলেন। সত্যবতীসহ বধূ গান্ধারী এবং অন্যান্য পুরনারীরাও অন্তপুরে আলোচনায় বসলেন। ঋষিদের শ্রদ্ধার সঙ্গে আসন দেওয়া হল। তারা শতশৃঙ্গপর্বতে পান্ডুর ব্রহ্মচর্য্য পালনের কাহিনী শোনালেন। দেবতার বরে তার পাঁচপুত্রের জন্ম, কালের পরিহাসে তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হল- সব শোনালেন। মদ্র কন্যা অতি ধন্য তাই তিনি সহমৃতা হলেন।
এসময় যুধিষ্ঠিরের বয়স ষোল, ভীমের পনের, অর্জুনের চোদ্দ এবং নকুল-সহদেবের তের। এখন পান্ডু ও মাদ্রী বিনা কুন্তী ও পাঁচটি নাবালক সন্তান অসহায়। তাদের ঋষিরা স্বস্থানে রেখে নিজ দেশে গমন করলেন।
সকল কাহিনী শ্রবণ করে সকলে হাহাকার করে উঠলেন। সত্যবতী, ভীষ্ম, বিদুর, ধৃতরাষ্ট্র সকলে পান্ডুর মৃত্যুতে রোদন করতে লাগলেন। নগরের লোক বিলাপ করে ক্রন্দন করে, বাল-বৃদ্ধ-তরুনী সকলে শোক করে। ক্রন্দনের শব্দ যেন গগনভেদ করে। হস্তিনানগরে মহাকোলাহল সৃষ্টি হয়। ধৃতরাষ্ট্র শেষে বিদুরকে ডেকে গঙ্গাতীরে দুই শব দগ্ধ করার নির্দেশ দেন। চতুর্দোলায় বিভিন্ন উপাচারে সাজিয়ে ক্ষত্রিয়রা শব নিয়ে চলেন। শবের উপর ছাতা ধরা হল, চামর দোলান হল। অগুরু চন্দনকাঠ, কলসি কলসি ঘি থরে থরে আনা হল। ব্রাহ্মণদের মন্ত্রের সাথে সাথে অগ্নি জ্বলে উঠল। পাঁচপুত্র ক্ষত্রিয় বিধানানুসারে পিন্ডদান করল। ত্রয়োদশ দিবসে অগ্নি-শান্তি দান হল। স্বর্ণ, ভূমি এবং গরু দান করা হল। কাঞ্চন রত্ন ও বিধি অনুসারে দান করা হল।
.......................................
সত্যবতীর প্রাণত্যাগঃ
কিছুকাল পর একদিন বেদব্যাস মুনি হস্তিনানগরে এলেন। একান্তে মার পাশে বসে মুনি জননী সত্যবতীকে বললেন, মা কর্মকাল গেল, এবার পাপ উপস্থিত হবে। তোমার বংশে বড় দুরাচার হবে। সবাই কপট হবে হিংসা-অহঙ্কারে। এদের পাপের ফল সবাই ভোগ করবে। পৃথিবী শস্য হারাবে, মেঘে অল্প জল হবে। জ্ঞানীদের ধর্ম লুপ্ত হবে। নিজের লোকেদেরই সবাই হিংসা করবে। ধৃতরাষ্ট্রের কাপট্যে কুলক্ষয় হবে। ধর্মকে ত্যাগ করে সকলে অধর্মকে আশ্রয় করবে।
সে কারণে মুনি মাতাকে বলেন কুলক্ষণ এবং কুলক্ষয় নিজের চোখে না দেখে মাতা তার সাথে সংসার ত্যাগ করে তপোবনে তপস্যা করতে চলুন। এত বলে ব্যাসমুনি অন্তর্দ্ধান হলেন।
পুত্রের বচন শুনে সত্যবতী চিন্তিত হলেন। দুই বধূ অম্বিকা ও অম্বালিকাকে ডেকে মুনি যা বলেছেন সব জানালেন। তিনি অম্বিকাকে বলেন তোমার পুত্র দুর্নীতি করবে, কপট হবে এবং দুষ্কর্মে নিযুক্ত হবে। তার জন্য কুলক্ষয় হবে। সে কারণে সত্যবতী তপোবনে চলে যাচ্ছেন।
বধূরাও সব শুনে মাতার সাথে যাওয়া সঠিক বিবেচনা করলেন।
ভীষ্মকে ডেকে সত্যবতী সব কিছু জানালেন। অন্তঃপুরে যত বৃদ্ধানারীরা ছিলেন সকলে সত্যবতীর সঙ্গে তপোবনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
তপোবনে ফলমূল আহার করে সত্যবতী তপস্যায় নিযুক্ত হলেন এবং যোগবলে সবাই প্রাণত্যাগ করলেন।
.....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৯
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ
'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস
রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন