somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০২: মরনের পরে ( অবশ্যই বাংলাদেশের আলোচিত এবং প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান সময়ে সবথেকে বেশী বিতর্ক হলো আর্ট ফিল্ম আর কমার্শিয়াল ফিল্ম নিয়ে। অনেকে মনে করেন কমার্শিয়াল ফিল্ম বাদ, শুধু আর্ট ফিল্ম বানাতে হবে। আবার কেউ মনে করেন উল্টোটা। তারা আর্ট ফিল্ম সমর্থম করেননা। আর আমরা গুটি কয়েকজন আছি যারা দুটোর উপরেই সমান জোর দেই। ব্যক্তিগত ভাবে " আর্ট ফিল্ম" এই কথাটা আমি বুঝিনা। আর্ট ফিল্ম মানে কি সেটাই আমি এখনো বুঝতে পারিনি।

আমি বুঝি দুইরকমের সিনেমা
এক. কমার্শিয়াল ফিল্ম।
দুই. অফ-ট্রাকের ফিল্ম।

==> অফট্রাকের ফিল্মগুলোই কি আর্ট ফিল্ম ?
= মোটেইনা। সাধারনত আর্ট ফিল্ম যে ফিল্মগুলোকে বলা হচ্ছে তারা অফ-ট্রাক হতে পারে কিন্তু সব অফ-ট্রাককে আর্ট ফিল্ম বলা হচ্ছেনা। সেইজন্য আমি আর্ট ফিল্ম বিশ্বাস করিনা। এবং বুঝতেও পারিনা। অফ ট্রাক যে আর্ট ফিল্ম নয় তার প্রমান শাবানা অভিনীত ভাত দে , মরনের পরে, ছুটির ঘন্টা ইত্যাদি ছবি। এগুলো অফ-ট্রাক অবশ্যই কিন্তু আর্ট ফিল্ম না। সেটা ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।

যাইহোক এইরকম একটা অফ-ট্রাকের ছবি মরনের পরে। অবশ্যই বাংলাদেশের আলোচিত এবং প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এই ছবি সম্নধে ফজলে এলাহি পাপ্পু বলেছেন, " এটা কমার্শিয়াল ফিল্ম। এটা যখন হলে দেখি তখন মানুষকে অঝরে কাদতে দেখেছি। হিট হয়েছিল কিন্তু ব্লক বাষ্টার হইনি "





অনেকরকম আগ্রহ থেকে " মরনের পরে " দেখা শুরু করলাম। প্রথম আগ্রহ এর নাম। যাই হোক শাবানার সাবলিল অভিনয় দিয়ে ছবির শুরু। ১৮ মিনিট দেখা হয়ে গেলো, মনে হচ্ছে এটা মিউজিকাল ফিল্ম। ১৮ মিনিটের ১৬ মিনিট খালি গান, তিনটা স্বয়ন-সম্পুর্ন গান। আমি প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছি।এবং তখনই ছবি অন্য রাস্তা নিল। প্রবেশ করলো একটা নতুন অধ্যায়ে, আমি পেলাম এক অসাধারন বাংলা চলচিত্রের অভিজ্ঞতা।


একটা মধ্যবৃত্ত সংসার। কর্তা ( আলমগির) একজন সংকৃতিমনা, গিটার বাদক এবং একটা মিলের আন্ডারগ্রাউন্ডের কর্মচারি । তার স্ত্রি ( শাবানা) অমায়িক, সংসারি, পরিপুর্ন বাংগালি বধু । এবং ৬ সন্তান নিয়ে সাজানো-গোছানো,পরিচ্ছন্ন, চমৎকার এই সংসার কিরকম করে ভেঙ্গে গেল ? কি করে একের পর এক নিয়তির থাবা দাগ বসাতে লাগলো অসহায় মুখগুলোতে, সেই গল্প নিয়েই নির্মিত মরনের পরে।

সংসারে প্রথম ভাঙ্গন আসে কর্তার অন্যকে বাচাতে গিয়ে নিচের দুহাত বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে। হাতহীন(?),প্রতিবন্ধি একটা মানুষকে কতটা শুনে,দেখে,গিলে বাচতে হয় তা খুব অল্প সময়ে বেশ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে এই ছবিতে। উচ্ছল মানুষগুলো আর তাদের প্রান্তবন্ততা এক নিমিষে কতটা নিস্তেজ হতে পারে তাও মনে করিয়ে দেয় এই ছবি। নিজের ব্যর্থতা, হোক সে শারিরিক অথবা মানসিক, একরকম ব্যর্থতার আঘাত যে যুক্তিবোধ নষ্ট করে দেয় সেই ছবিও খুব-ই ঘনিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।

২য় ভাঙ্গনটা আসে যখন জানা যায় শাবানার লান ক্যন্সার হয়েছে। স্বামীর দু হাত নেই। কর্মক্ষমতাহীন স্বামীকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। তার উপর তার মৃত্যু সংবাদ পুরো সংসারটার উপর ঘনিয়ে আনলো কালো ছায়া। সীধান্ত নেওয়া হলো সবগুলো সন্তানকে পালক দেয়া হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। চলচিত্র প্রবেশ করলো সবথেকে শক্তিশালী পয়েন্টে।
এই চলচিত্রে দেখানো কিছু ব্যস্তবতার আড়ালে লুকায়িত কথাটা আপনি জানেন। আপনি জানেন বিচ্ছেদ কতটা আঘাত দিতে পারে। আপনি অবশ্যই জানেন নিসংগতা কতখানি বিষের কাজ করেনা। কিছু না করতে পারার ব্যাথা, আর ব্যর্থতার বেদনা চোখের জল শুষে নিয়ে হৃদয়কে করে দেয় পাথর।


এবার এই ছবি সম্নধে আমার মতামত কিছু প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

==> আপনি কি ছবিটি দেখে কেদেছেন ?

= কান্না মানে যদি চোখ থেকে পানি পরা হয় তবে কাদিনি। কিন্তু খুব টাচিং ছিল, কোথাও কোথাও শিরশির করছিল। মোট কথা, আমার ইমোশনকে যথেষ্ট ছুতে পেরেছিল।

==> এটা কি একটা স্বার্থক চলচিত্র ?

= অবশ্যি স্বার্থক। এবং বেশী কিছু আছে বলে আমার মনেহয়।

==> যারা বাংলা ফিল্ম দেখেনা তারা এটা দেখে মজা পাবে ?

= সেটা আমি আপাতত বলতে পারছিনা। হয়তো এটা দেখার পর তাদের মতামত জেনে পরের ছবিগুলো সম্নধে আইডিয়া করতে পারবো। কিন্তু আশা করি ভালোলাগবে।

==> এটা কি আর্ট ফিল্ম?

= মোটেই না। হাই কমার্শিয়াল। কিন্তু অবশ্যই অফ-ট্রাকের চলচিত্র। একটা অন্যরকম চেষ্টা।

==> এই ছবির হিডেন মেসেজ কি ?

= এই মেসেজের ব্যাপারটা আমি একটু কম বুঝি। জেনেটিক বিবর্তনে আমি যথেষ্ট হিডেন মেসেজ নিয়ে এসেছি। তাই নিয়েই সর্বোচ্চ খুশি আমি। তাই চলচিত্র এবং সাহিত্যে মেসেজ খুজি কম। যেহেতু খুজিনা সেহেতু পাইনা। যেকেউ যেকোনরকমের মেসেজ এটা থেকে নিতে পারেন। একদম রুট ধরে আমি বলতে পারছিনা

==> ছবিতে আসলে কি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ?

= অনেক কিছুই। একেক্সময় একেক্রকম মনে হয়েছে। ব্যস্তবতার একটা পাকেজ বলা যায়। মাতৃত্ব,নিয়তীর মার-প্যাচ, প্রেম, প্রিতী,নিসঙ্গতা,বিরহ,ব্যর্থতা ইত্যাদি। পালক নিতে আসা চতিত্রগুলো দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম।

==> ছবিটি সম্নধে এককথায় কি বলবেন ?

= চমৎকার ভাবনা

==> ছবিটির নেতীবাচকতা ?

= পরিচালক যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আলমগিরের হাত যে পিঠের কাছে গুটিয়ে রাখা তা কোথাও কোথাও পাঞ্জাবি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। সংলাপ আরও সুন্দর হতে পারতো। প্রথম ১৮ মিনিট দিয়ে পরিচালক যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা ১৯-২০ অর্থাৎ ১ মিনিটেই বুঝেছি। প্রথম ১৮ মিনিটের ব্যবহার শুধু শুধু। তাছাড়া এত গান এতে যে আমার মনে হয়েছে এটার জেনার মিউজিকাল,ফ্যামিলি-ড্রামা।
ছবিটির ইতিবাচকতা ?

= অনেক-ই আছে। কাহিনিতো প্রচন্ড সুন্দর। আর আলমগীর যে একজন শক্তিশালী অভিনেতা এটা তার একটা দলিল। শাবানাকে নিয়ে কিছু বলার নেই। বরাবরের মতো। এবং স্পেশালী বলতে গেলে আহমেদ ইমতিয়াজকে ধন্যবাদ। ব্যক গ্রাউন্ড স্কোর প্রশংসা পাবার মতো। প্রধান সঙ্গিতটা সত্যি অসাধারন। " দুদিনে ভাঙ্গে খেলাঘর " গানটা হৃদয় ছুয়ে যায়। এবং আবেগের কুঠুরিতে আঘাত করে।



ছবির নামঃ মরনের পরে
মুক্তির সালঃ ১৯৯০
পরিচালনাঃ আজহারুল ইসলাম খান
অভিনয়েঃ শাবানা,আলমগির
সঙ্গিতঃ আহমেদ ইমতিয়াজ
টনি ফিল্মস এর ব্যনারে

জাতিয় চলচিত্র পুরুষ্কার জিতেছে ৩ টা

সেরা অভিনেতা - আলমগীর – মরণের পরে
সেরা অভিনেত্রী - শাবানা – মরণের পরে
সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী - আনোয়ারা – মরণের পরে

আমি আশা করবো যাদের সামর্থ্য আছে তারা স্বাদটা একটু জাগিয়ে নিন। ছবিটা দেখুন। ভালোলাগার মতো যথেষ্ট জিনিষ এতে আছে।
" বাংলা ছবি দেখুন, নিজের দেশকে ভালোবাসুন " এই ধরনের উপদেশ বাক্যতে আমার নিজের-ই এলার্জি আছে। দেখুন- দেখুন না বলে ভালো জিনিষটা মানূষের কাছে পৌছে দেওয়াটাকেই আমি সঠিক মনে করি। আমি দিলাম, বাকি সীধান্ত আপনাদের উপরে।

এই লিঙ্কে প্রবেশ করে সংগ্রহ করতে পারেন।

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০১: ভন্ড ( রুবেল,তামান্না,হুমায়ুন ফরিদী )


১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×