somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানোর ক্ষুদ্রতম চেষ্টা, নীলফামারি।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছর ঠিক এই সময়ে আমরা শীত বস্ত্র বিতরন করেছিলাম কুড়িগ্রামের উলিপুরে। তখন আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম সোয়েটার। আমাদের কোম্পানি সোয়েটার এক্সপোর্ট করে। বছর শেষে অনেক সোয়েটার থেকে যায়। কিছু ভালো কিছু খারাপ এমন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সোয়েটার বিতরন করবো। সে অনুযায়ী প্রায় ৮০০০ পিসের মত সোয়েটার বিতরন করেছিলাম সেখানকার রেডক্রিসেন্টের সহায়তায়। কিন্তু বিতরনের সময় আমরা এখটু অস্বস্তিতে পড়লাম কারন সবাই কম্বলকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো বাচ্চাদের বিতরনের সময়। কারন সাইজ মিলেনি। কারো ছোট কারো বড় এমন হয়ে গিয়েছিলো। তাই এবার শুরুতে আবার শীত বস্ত্র বিতরনের সময় সোয়েটার বিলি করবো এভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। পরে এটা থেকে সরে এসে কম্বল বিতরনের সিদ্বান্ত নিয়েছি আমরা। প্রথমে কম্বল কেনার জন্য বিভিন্ন মার্কেটে খোজা হলো কিন্ত পরিমান মত মিললো না এবং নিম্ন মানের। পরে যারা ফ্যাব্রিক তৈরি করে তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম কিন্তু তারা তাদের এক্সিম ব্যংকের নিকট সেল করে দেয় আগের দিনই। পরে আমাদের গোডাউন চেক করতে পাঠানো হলো কারন আমরা আমাদের সোয়েটারে এবছর বেশ কিছু ফেব্রিক এটাচ করেছিলাম। সৌভাগ্য বসত বেশ কিছু বড় লট পাওয়া যায়। ২০০০-২২০০পিসের মত কম্বল হবে দেখা গেলো। বংগবাজারে লোক বাজারে লোক পাঠালাম অন্তত আরো ১০০০ কম্বলের জন্য। এরি মধ্যে পুরো তিন হাজার পিস কম্বলের ফেব্রিক মিলে গেলো স্টোরে। স্টোর ম্যানেজার এটা গোপন করে রেখেছিলো বকা খাবে ভেবে।

যা হোক ২ দিন লাগিয়ে ফেব্রিক কেটে, সাইড সেলাই করে কম্বল বানানো হলো। প্রতিটি ৪.৫ফুট বাই ৮ ফুট। ফেব্রিকের ডায়ার কারনে সাইজে একটু এদিক ওদিক হয়ে যায়। এবং সুন্দর করে প্রতিটি প্যাকেট করা হয়।আমাদের যাত্রা দিন ছিলো ১জানুয়ারী রাত ১১টায়। ২টা নাবিল বাসের সব সিট নিয়ে আমরা প্রায় ৬৮ জনের একটা দল যাত্রা করি। এবং বহরে থেকে একটা কাভার্ড ভ্যান।
১)


গাড়িতে উঠে সবাই মোটামুটি হইচই করেই ২ ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া হল। এর মধ্যে বেশির ভাগ লোকেই ঘুমিয়ে পড়ে। যখন বাস দুটো এসে সিরাজ গন্জ ফুড ভিলেজে থামে তখন দেখি রাত ১.২০ বাজে। সাথে সাথে চোখ বড় হয়ে গেলো শালা করলো কি? তুফান বেগে গাড়ি চালালো। ফুড ভিলেজে খেয়ে দেয়ে আবার রওয়ানা করি। যথারীতি সবাই ঘুম দিলো। আমি কিছুক্ষন জেগে থেকে ড্রাইভারের তামাশা দেখছিলাম। এমন স্পীডে চালাচ্ছিলো যে মনে হলো সে মুখস্ত বাস চালাচ্ছে। ঘন কুয়াশাকে কোন পরোয়া নাকরেই গাড়ি টেনে নিয়ে গেলো। আর সইতে না পেরে আমিও চোখ বুজে থাকলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম। বাস যখন আমাদের হোটেলের সামনে দাঁড়ালো তখন ভোর ৫টার কাঁটা ছুই ছুই।বাস থেকে নেমে ঠান্ডায় জমে গেলাম। যাহোক নেমে সোজা হোটেলে ঢুকে পড়লাম। আমরা ২জন এক টি ডবল রুম পেলাম ভাগে। বাকি সবাই বেডশেয়ার করে উঠে পড়লো। আসলে হোটেলের ক্রাইসিস ছিলো শুরু থেকেই। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যাব দেখি হোটেল থেকে পাতলা একটা কম্বল দিলো কি করবো গায়ে নিলাম। মেজাজ টাই গরম হয়ে গেলো কম্বলে সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ। বাসা থেকে বের হবার সময় আমার একমাত্র আপন বউ আমার ব্যাগে একটা কাঁথা দিয়ে দেয়। সেটা বের করে কাঁথার উপরে কম্বলটা একটু নীচের দিকে নামিয়ে শুয়ে পড়ি। আমরা রুম মেট আমার বস শীতে এবং পুরোনো কম্বলের শুয়ে মোটামুটি অবস্থার ব্যবস্থা হয়ে গেলো।সকাল ৭.৩০টায় ঘুম থেকে উঠলাম, ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমেই দেখি সহ কলিগরা খেজুরের রসওয়ালা এনে হাজির তা আর কি করা রস খেয়ে রসাল হতে চাইলাম, পারলাম না কারন রসে ভেজাল ছিলো।
২)


নাস্তা করতে গেলাম। নাস্তা করে একটা রিক্সা ঠিক করে শীতের মধ্যে শহর দেখতে বের হলাম। রিক্সা ওয়ালা মোটামুটি পুরো শহর দেখিয়ে নিলো। এক যায়গা পৌছে বলে এটা এমপি সাহেবের বাড়ি। মানে নুরের বাড়ি।
যাই হোক হোটেলের সামনে রিক্সা থেকে নেমেই নজরে পড়লো অগ্রনী ব্যাংকের শাখা। দেয়ালে কাগজ মত কি যেন সাঁটানো,ম কিন্তু মানুষ জন তেমন নেই ৩/৪ জন। যা হোক কাছে গিয়ে দেখেই মহা খুশি..............।

আমাদের বহরের কম্বল বাহী কাভার্ড ভ্যান তখনো পৌঁছায় নি। সবাইকে সময় দেয়া হয়ে ছিলো বেলা ১২টায়। কিন্ত অবস্থা দেখে ৯টায়ই জানিয়ে দিলাম ৩টায় কম্বল বিতরন হবে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে ২টার দিকে আমরা অনুষ্ঠান স্থল নীলফামারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যাই। কাভার্ড ভ্যান বিভিন্ন প্রতিকুলতা পেরিয়ে বিতরন স্থলে পৌছায় বিকেল ৩.১৫ মিনিটে। কাভার্ড ভ্যান আসতেই শুরু হয়ে গেলো আমাদের কার্যক্রম। আমাদের স্থানীয় ভাবে স হযোগীতা করেছিলো নীলফামারি প্রাইমারি শিক্ষক সমিতি। ৭দিন আগে থেকেই ওদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। সে অনুযায়ী ওরা আগেই স্লিপ বিতরন করে রেখেছিলো। বাকি টা ছবি কথা বলবে-
৩) কাভার্ড ভ্যান থেকে কম্বল নামানো হচ্ছে


৪) আমাদের কর্মকর্তারা নিজেরাই মাথায় নিয়ে কার্টন গুলো নিয়ে যাচ্ছে


৫)

৬)

৭) বিতরন স্থলে সারি করে রাখা কার্টন গুলো


৮) সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকা অপেক্ষা রত শীতার্ত মানুষ গুলো


৯)


১০)

১১) বিতরনের প্রস্তুতি

------


১২) বিতরনের সুচনা


১৩) কিছু ছবি.....


১৪)


১৫)


১৬)

১৭)


১৮)


১৯) আমার একটা ছবি তোলেন


৩শত মত এক্সট্রা সোয়েটারও নিয়ে গিয়েছিলাম। দিয়েছি শিক্ষক সমিতির কাছে যাতে আরো কিছু মানুষকে শীত থেকে বাঁচাতে পারে।

২০) আমাদের টিমের একটা অংশ


২১) আমাদের অফিস মাতিয়ে রাখা লোক, একদিন অফিসে না আসলে সবাই যাকে মিস করে। একজনের কোলে.......


২২) লুলামি সবখানেই


২৩) বিতরন শেষে আমাদের নীলসাগর ও অতিথি পাখি দেখতে যাওয়া ততক্ষনে সন্ধ্যা নেমে যায়। তাও রওনা করলাম।


২৪)



খুবই সুশৃংখল এবং সুন্দর ভাবে আমরা কম্বল বিতরন শেষে ফিরে আসলাম হোটেলে। একটা মামুলী কম্বল ফিরে নিয়ে এসেছে ওদের হাসি মুখ, কত অল্পতেই তারা সুখী হতে পারে এটা যদি আমাদের থিংক ট্যংকরা বুঝতো। এই অল্পটুকুই করার লোক কয়জন।

পরদিন আমরা তিস্তা ব্যরেজ ও তিনবিঘা করিডোর দেখতে গেলাম।




সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:০৯
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×