somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নদী ও আমি।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নদীর সাথে সেই ছোট বেলাতেই যোগাযোগ। খুব শৈশবে এবং কৈশোরে নদীকে বেশ কাছ থেকেই দেখেছি। আমার নদী ছিল ডাকাতিয়া। মেঘনার শাখা নদী, ছোট নদী। শুনেছি নদীটি খুবই খরস্রোতা ছিল, বর্ষায় দুকুল ছাপিয়ে সব ভেংগে নিয়ে যেত তা থেকেই ডাকাতিয়া নাম হয়ছে, অন্য গল্প কাহিনিও রয়েছে।

আমি আর আমার বড় বোন পিঠেপিঠি। থাকতাম হাজিগঞ্জ থানায় সে ১৯৮০ সনের আগেকার কথা। বোনের সাথে নিয়ত ঝগড়া মারা মারি থাকলেও বিকেলে ঠিকই এক সাথেই নদীর তীরে চলে যেতাম বেড়াতে। যখন স্কুলে ভর্তি হবার বয়স হল তখনই চলে আসি ফরিদগঞ্জ উপজিলায়। এখানেই নদীকে খুব আপন করে পাওয়া। প্রায় ৬ বছর ছিলেম এই অঞ্চলে। আমরা যেখানে থাকতাম তা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলেই নদীকে ছুতে পারতাম। আমার আব্বা আমাদের সবাইকে নিয়ে সাধারনত শুক্রবারে চলে যেতেন নদীতে গোসল করতে। নদীর পাড়েই ছিল একটি সরিষা ভাঙ্গানোর কারখানা, আর রাইস মিল। ওদেরই একটি ঘাট ছিল নদীতে, পাকা করা সিঁড়ি একদম নদীর অনেক নীচে চলে গিয়েছিল। ওখানেই সবাই মিলে মহা আনন্দে গোসল করতে যেতাম। গোসল করতে গেলে দেখতাম নদীতে হরেক রকমের মাছ দৌড়াদৌড়ি করছে পানিতে। ধরতে চাইতাম পারতাম না।

আবার আমাদের বাসার পাশ দিয়ে রাস্তা পার হলেই বিশাল মাঠ, ধানের ক্ষেত, কিংবা সব্জির ক্ষেত বিস্তীর্ণ প্রায়ই চলে যেতার মাঠ পার হয়ে নদীর কাছে। পাড় ধরে কত হেঁটেছি। নদীর পাড়ে দাড়িয়ে দেখেছি নানান ধরনের পাল তোলা নৌকা। নানান রঙের বাহারি পাল দেখে আনন্দে মেতে উঠেছি, রোমাঞ্চিত হয়েছি। দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেছি সেই অনেক দূর থেকে পালতোলা নৌকাটি আসছে, কখন কাছে আসবে আবার কাছে আসলে ওটা পার হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থেকেছি।

নদীর পাড় ধরে ইচ্ছে মত চলে যেতাম অনেক দূরে। দূরে নদীর ওপারে সংযগ খালে একটি ছোট পুল ছিল, ভাবতাম ওখানে যদি যেতে পারতাম। আবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসার আগে পশ্চিমা আকাশে যে লালিমা দেখা যেত। নদীর পাড়ে বসে কত দেখেছি। একটু ভয়ও যে লাগেনি তা কিন্তু নয়। কারন তখন শুনেছি ঐ লালিমা রসুলের দহিত্র হাসান হোসেনের রক্ত। এজিদ ওদের হত্যা করলে রক্ত আকাশে উঠে যায় আর সন্ধ্যার আগে পশ্চিম আকাশে দেখা দেয়।

আর এ নদী ধরে কত যে নানু বাড়ি গিয়েছি নৌকো করে, গুন টেনে মাঝিদের একজন নৌকো টেনে নিয়ে যেত কত সময়, মজা পেতাম, একটু বড় হয়ে বুঝতে শিখেছি ব্যপারটা কত কষ্টের ছিল। একসময় চলে আসি ফরিদগঞ্জ থেকে অন্যখানে, ওখানে নদী নেই। অনেক কিছুর সাথে নদীকে হারাতে হবে সে জন্য সম্ভবত কেঁদেই ফেলেছি। অনেক দিন নদীটিকে মিস করেছি। আর ভাবতাম ইস এখানে একটা নদী হয়না কেন? তার পর আর নদীকে পাওয়া হয়নি।

আজ ঢাকায় আছি ১ যুগেরও বেশি হবে। ছোট বেলায়ি পড়েছি ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। ইংরেজি ট্রান্সলেশন করেছি কত। সে বুড়িগঙ্গার বেহাল অবস্থা দেখে মনই খারাপ হয়ে গেল তারচে আমার অখ্যাত ডাকাতিয়াই কত ভাল নদী ছিল। নদীতে বর্জ্য ফেলে দুষিত করে ফেলা হয়েছে। তখন ভেবে উঠতে পারিনি নদী আবার দখল করা যায় কেমন করে? সবসময় জেনেছি নদীর তীর ভেঙ্গে চর হয়, ঘর বাড়ি গ্রাম ভেঙ্গে নিয়ে যায়। কিন্তু নদীই দখল হয়ে যেতে পারে সেটা শুনেছি বেশি দিন হয়নি। পরে কত কামনা করেছি নদী যদি তার আগের মত করে সব দখল হয়ে যাওয়া এলাকা ভেঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনা………। না হিংস্র মানুষের থাবার সাথে নদী আর পেরে উঠেনা। নদী সরু থেকে সরুতর হতে থাকে। কোথাও কোথাও বুড়িগঙ্গা নদী একটি চওড়া নালায় পরিনত হয়েছে।

আমার নদীর সাথে আবার বেশ যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায় কয়েক বছর হল। প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে আমাকে নদী পাড় হতে হয়, অবশ্য ব্রিজ দিয়ে। তুরাগ নদী। শুরুতে নদীটিকে দেখেছি এখন যেটুকু চওড়া হবে তার অন্তত আড়াই গুন হবে। গেলো সাত বছরে সেই নদী আজ সরু হয়ে গেছে। গাবতলি পাড় হয়ে ব্রিজে উঠলে দেখা যায় নদীর দু পাড় এগিয়ে আসছে নদীর বুকে দখল হয়ে যাচ্ছে মনুস্য জানয়ারের হিংস্র থাবায়। বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলছে। এখন তো কোন কোন জায়গায় দুটো নৌকা পাশাপাশি রাখলে হেঁটে নদী পাড় হয়ে যাব। গাড়ি থেকে যখন দেখি এই করুন পরিণতি বুকটা হাহাকার করে উঠে।


নেট থেকে

এই সেদিন শুনলাম ঢাকার নদী উদ্ধার করা হবে, নদী খনন করা হবে, দুই পাড়ে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ হবে। যাতে কেউ আরা দখল করতে না পারে। নদীতে নাব্যতা তৈরি করা হবে। নদীকে দূষণ মুক্ত করা হবে। শুনেছি নদী খননে ড্রেজার সংকট, আনা হচ্ছে ড্রেজার। পরিবেশ বাদিদের নানান প্রচারনা, উচ্চ আদালত থেকে নানান নির্দেশনা আসছে নদী উদ্ধারের জন্য। রাষ্ট্র যন্ত্র নরে চড়ে উঠলো। আশায় বুক বেঁধে উঠলো, নাহ নদী এবার উদ্ধার হবেই। আবার পেয়ে যাব সেই বুড়িগঙ্গা, সেই তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু শীতলক্ষা, আমার প্রিয় ডাকাতিয়া, ডাকাতিয়া নদিও আজ আর আগের মত নেই, মরে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম আবার সুদিন আসবে, নদীতে নৌকো করে ঘুরে বেড়ানো যাবে, পাল তুলে না হোক ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলবে এখানে সেখানে, নদীতে জেলের জালে মাছ খেলা করবে।

আজ দুই বছর পার হয়ে গেলো মাননীয় সরকার, বিচারালয়, প্রশাসন আমি আশায় বুক বেঁধে ছিলাম, সে বাঁধ আজ জমাট হয়ে হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিচ্ছে। সকল আশা গুড়ে বালি। একবার বুড়িগঙ্গা থেকে পলিথিন অপসারন করে আমাকে আন্দোলিত করেছিল, লোক ডেকে বলেছিলাম দেখিস নদী এবার প্রান ফিরে পাবে। কিন্তু সে আশা জাগিয়ে আবার নিভু নিভু।

নদী দখল চলছেই, কোন পরোয়া নেই। নদী আর দখল মুক্ত হয় না, ড্রেজিং হয় না, নদীতে মাছ খেলা করে না। নদীর পানি সুপেয় হয়ে উঠে না। আমার প্রিয় নদী আর বাঁচতে পারেনা, মরেই যাবে বোধ হয়।
এইতো শুনলাম তিন খানা ড্রেজার এসেছিল নদী বাঁচাতে, অথচ কেনার দুর্নীতিতে ড্রেজার নিজেই মৃত।

আমার নদীকে বাঁচিয়ে দিন, কেউ কি এগিয়ে আসবেন আমার নদীকে বাঁচাতে। জেনে রাখুন আমার নদীকে বাঁচিয়ে দিলে আমার নদী দেশের অর্থনীতিতে নানান ভাবে যে অবদান রাখতে পারবে তা বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করেও তার কাছে কেউ আস্তে পারবে। আমার নদী গুলোই পারবে অর্থনৈতিক ভাবে আমুল পরিবর্তন সাধন করতে।

হে মাননীয় মহারথীগন বাঁচিয়ে দিন না আমার নদী গুলো।

* সময় বের করে পোস্ট দিতে দেরি হয়ে গেলো! ভেবেছিলাম গতকালই দিব।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×