somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু রাশেদ (পুলিশ) (কপি পেস্ট)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দাঁড়া!
আমি ঘাড় কাত করে তাকিয়ে দেখি, আমার পেছনে একটি পুলিশের হোন্ডা দাঁড়ানো। হোন্ডার উপর একজন পুলিশ বসা। আতঙ্কে জমে গেলাম। পুলিশরা প্রথমে আপনি থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে তুইতে নামে। আমার ক্ষেত্রে সরাসরি তুইতে নেমে গেছে। বুঝতে পারছি, কপালে খারাপবি আছে। আমি আসলে খুবই সাদামাঠা মানুষ। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করিনি। এখন অফিসে যাই। আর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসি। পুলিশি ঝামেলা কল্পনাও করি না। শুনেছি, বাঘে ছুঁলে ষোল ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। আমার কাঁধে একটা ব্যাগ। এর মধ্যে কি আছে আমার মুখস্থ। একটা নোট প্যাড আর বলপেন। অবৈধ কিছু নেই। তবে আমার আতঙ্ক কমল না। পুলিশের কাছে ছুরি-কাঁচি টিনের পিস্তল স্টক থাকে। হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাংবাদিক ডাকে। হরতালের আগে রাখে টেপ মারা জর্দার ডিব্বা। টেপ মারা জর্দার ডিব্বাসহ ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে কিংবা টিভিতে ভিডিও ফুটেজ দিলে আমি শেষ। এখনও বিয়ে করিনি। মা-বাবা মেয়ে খুঁজছেন। ইহকালে এই কপাল থেকে বিয়ে উঠে যাবে!
—অ্যাই শালা দাঁড়া!
এখন তুই থেকে শালাতে নেমে গেছে। আমার অবস্থা উপায় নাই গোলাম হোসেন!
আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। পুলিশ সাহেব হোন্ডা থেকে নামলেন। হেলমেট খুলে এগিয়ে এসে বলল, শালা ইউনিফর্ম পরা দেখে তুই আমাকে চিনতে পারছিস না! আমি রাশেদ। তোকে কি দোষ দেব, এখন আমিই আমাকে চিনতে পারি না।
আমার কলেজ জীবনের বন্ধু রাশেদ। পাস করার পরে বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে পুলিশে চাকরি নিয়েছে। দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। আর এখন একটা আহলাদী ভুঁড়িও বানিয়ে ফেলেছে।
আমাকে জিজ্ঞাসা করল, নাস্তা খেয়েছিস?
—না
—তাহলে দাঁড়া, একসঙ্গে নাস্তা খাব।
—আমার একটু আশুলিয়া যাওয়া দরকার। আরেক দিন খাব।
—আরে শালা, আমি কি তোকে নিয়ে সারাদিন বসে নাস্তা খাব। ত্রিশ মিনিটের ব্যাপার। পকেটে টাকা নেই। একটু ওয়েট কর। টাকার ব্যবস্থা করে নাস্তা খেতে যাব।
কিছুক্ষণ পরে দেখে একটা হোন্ডা আসছে। ড্রাইভার তরুণ। কাত-চিত হয়ে চালিয়ে আসছে। আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসে বলল, নাস্তা এসে গেছে।
রাশেদ হোন্ডা থামিয়ে কঠিন ঝাড়ি দিল। এই কাগজ, সেই কাগজ। ছেলেটা হোন্ডার সিটের নিচ থেকে একটা চকচকে পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে ভাগল।
—চল নাস্তা খেয়ে আসি।
আমরা হোটেলে বসলাম নাস্তা খেতে। খেতে খেতে আবার কথা শুরু করলাম।
—এবার তো তোরা ফার্স্ট।
—মানে?
—টিআইবির রিপোর্টের কথা বলছি।
—আচ্ছা, মানুষ ডাক্তারের কাছে যায় কখন?
—রোগ হলে। রোগ, মানে বিপদে পড়লে ডাক্তারের কাছে যায়।
—ডাক্তার ফিস নেয় না?
—নেয়।
—এখন ডাক্তাররা বেতন পায় না?
—পায়।
—ডাক্তাররা টাকা নিলে হয় ফিস, আর আমরা নিলে হয় ঘুষ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা বদলাতে হবে। তুই জানিস আমার চাকরি নিতে কত টাকা দিতে হয়েছে?
—সাড়ে সাত লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ অফিসার হওয়ার জন্য ঘুরতি।
—সাড়ে সাত লাখ না। আমি দশ লাখ টাকা খরচ করে চাকরি নিয়েছি। আমাদের থাকার ঘরটা পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি।
—ডাক্তাররা না হয় ফিস হিসেবে ৫শ’ টাকা নেয়। তোরা মাঝে মাঝে এক লাখ খেয়ে বসে থাকিস।
—সেটা রুই-কাতলাদের কাছ থেকে নেই। কেন ডাক্তাররা রুই-কাতলাদের কাছ থেকে লাখ টাকা নেয় না।
—তোরা সাধারণ মানুষ থেকেও খাস।
—ডাক্তাররা অপারেশনের কথা বলে এক লাখ খায়, নবজাতক বাচ্চা আটকে রেখে টাকা আদায় করে। টাকার অভাবে দেশের কত মানুষ হাসপাতালের বারান্দায় মরে যায়।
—দেশের শতকরা ৭৯ ভাগ লোক তোদের ঘুষ দেয়।
—ডাক্তারকে শতকরা কত ভাগ লোককে ফিস দেয়? আরেকটা সত্য জেনে রাখিস। একেকটা টেস্টের জন্য ডাক্তারকে প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক থেকে ৫০ ভাগ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়। একশ’ টাকার টেস্ট করালে ডাক্তার পায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
—ডাক্তাররা তোদের মতো মানুষ পেটায় না।
—আচ্ছা আমরা হরতালে, মিছিলে মানুষ পেটাই। মানব অধিকার খর্ব করি। ধর এখানে একটা গ্যাঞ্জাম হলো। পাঁচজন পুলিশ আছে। দেখবি তারা পালাবে। বিষয়টা উপরে জানাবে। উপর থেকে নির্দেশ এলে এখানে এসে শক্তি বলিস আর তদন্ত বলিস তাই করবে।
—হরতালে তাহলে তোদের কোন হাত নেই।
রাশেদ উপরে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এসব বিষয় থাক। তুই কোথায় যাবি বললি?
—আশুলিয়া।
—চল।
রাশেদ আমাকে আশুলিয়ার বাসের কাউন্টারের সামনে নিয়ে গেল। কাউন্টারের টিকিট কাটতে যাব, এমন সময় থামিয়ে দিয়ে গাড়িয়ে উঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে বলল, আমার স্যার। জায়গা মতো নামিয়ে দিস।
আমি জানালার পাশে বসে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। বায়! বায়!!

আসল লিংক এখানে
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×