somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠশালার কবিতা : জাফর আহমদ রাশেদ

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের কিস্তিতে একটা ভূমিকা দিয়েছিলাম, এখানে তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। শুধু এটুকু বলে রাখি, গত ১৮ অক্টোবর `সেলিম আল দীন পাঠশালা'র পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিলো তরুণ কবিদের কবিতাপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান। নব্বইয়ের দশকের ৫ জন কবি এতে অংশ নিয়েছিলেন : চঞ্চল আশরাফ, জাফর আহমদ রাশেদ, মুজিব মেহদী, সাখাওয়াত টিপু ও সৈকত হাবিব। আলোচক ছিলেন ড. আজফার হোসেন।

কবিরা প্রত্যেকেই স্বকণ্ঠে স্বনির্বাচিত ৫টি কবিতা পাঠ করেছিলেন ঐ অনুষ্ঠানে। এবাবের পোস্টে কবি জাফর আহমদ রাশেদের কবিতা তুলে দিলাম ব্লগের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে।



জাফর আহমদ রাশেদ


জন্ম : ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭০, খাস্তগীর পাড়া, সূচক্রদণ্ডী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, ১৯৯২ সালে। মূলত কবি, পাশাপাশি গদ্যচর্চাও অব্যাহত রেখেছেন। তার বই তিনটি।

কাচের চুড়ি বালির পাহাড়, পদ্য, ১৯৯৭
যজ্ঞযাত্রাকালে, পদ্য, ২০০১
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প: জীবনোপলব্ধির স্বরূপ ও শিল্প, গদ্য ২০০১

সম্পাদনা
আড্ডারু, ১৯৯২-১৯৯৪





শীতের স্তন

বিদেশী আপেলের সহজতা নিয়ে অনেক দূরের পথ মাড়িয়ে মৃত্যু এসেছিল। আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি আলোকবর্ষের মতো দীর্ঘ মায়ামাঠ হেঁটে গেছি; অবিশ্রাম উদ্যমে আশ্বিনের আদিগন্ত ধানক্ষেত পেরিয়েছি মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়েই। পথে পথে ধানের সহোদরা জোনাকিদের বলেছি---‘তোমাদের সব আলো নিভে যাবার আগেই আমি এই পথে ফিরে আসব। অপেক্ষা করো, তোমাদের সঙ্গে যাব।’

সত্যি ফিরেছি আমি, একাকী ফিরেছি। তখন মাঠে মাঠে নাড়ার আগুন। একটিও জুনিপোকা নেই। সুদর্শন নেই।

অথবা আছে, হেমন্তশেষে শীতের স্তনের মতো যে আগুন জ্বলে উঠেছে, তার আভায় একটি জোনাকিও দেখা যাচ্ছে না।


তুমি ধান আমি তালগাছ

আমি যত বেয়ে উঠি মই
তুমি তত দিতে চাও ধান
পুকুরের দিকে ঝুঁকে
কোমড়ে নিয়েছে বাঁক
বড় তালগাছ
উঠে গেছে কই!

আমি পড়ে আছি নিচে, পাশে
বিপুল বাগান;
বহে
তালের সুবাস---
খেতে চাই তালবিচি
বয়সী বিচির মর্ম জন্মের শাঁস

তোমার বাড়িতে যাই
মাথায় উঠতে দেখি ঘড়া
ছুঁয়ে দিলে মনে হয়
মরা
পাথরের পেট;
ধরো
আমিই গবেট---

আমি সেই ভার নিয়ে
পুকুরে এলিয়ে থাকা---
একটাই বাঁক---বাঁকা
কোমড় পেরিয়ে
মই বেয়ে উঠে যাবো
গাছের মাথায়
রাজকীয় পাতার গোড়ায়
তালবাবুদের বাড়ি
রাতভর খাবো
কুসুমের মুখে মুখে হরষের ধারা
ঘোলা জলতাড়ি

ভরা ধান নিয়ে তুমি থাকো
মই তুমি নিয়ে যাও
তার আগে নিয়ে গেছ সাঁকো...


প্রথম দেখা

ডান হাতে সে তার আঁচল সরাল প্রকাশ্যে---তার ডানদিকের স্তন দেখলাম।
হবে পাঁচশ গ্রামের এক টুকরো মাংস, দেখলাম তার ঘা---চূড়ায় ও চতুর্দিকে, আর ছুরির ঘৃণা বা ঘৃণার তলোয়ার।

ভাবলাম এবার প্রকাশ্যে শোনা যাবে অসঙ্কোচে অবমুক্ত একটি নিঃসঙ্গ স্তনের গল্প; জানা যাবে আর একটি স্তন সে কাকে দিয়েছে।
ফলে তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম লাল দশ টাকা, তাতে শেখ মুজিবের ছবি। বৃষ্টি ও ঘামে ভিজবে, পুঁজে হলুদ হবে, লাল টাকা আর লালহলুদ স্তন।

আজ দুপুরে আগে গোপনেও আমি কোনোদিন স্তনের ঘা দেখি নাই। বস্তুত দেখা শেষ হয়ে গেলে তারপর স্তনে ঘা আসে।

দোনামোনা

দাইমা আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে আমার জন্ম জলভাগে। সেখানে বড় বড় সরীসৃপ মাছ-খেকো দেবাংশী সোনালি বুক অক্টোপাস আর অসংখ্য পাহাড় ও প্রবালের মধ্যে আমরা খেলেছিলাম বেঁচেছিলাম।

আশ্চর্য কেচ্ছাকার দাইমা আমার---আমি সব দেখেছি, মনে করতে পেরেছি। যে ফুলকো বিপুল জলে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল সে আর নেই, ফুসফুসের ওপরে তার চিহ্ন রয়ে গেছে।

দাইমা আমার মা অথবা মা-ই দাইমা আমাদের। মাছেদের এরকম হয়। অশেষ ভাই-বোন আমাদের মাছেদের।

শুধু মনে নেই কে আমাদের এমন রুক্ষ ডাঙায় ঠেলে দিয়েছে। এই তীব্র আতপে কখন এলাম! কোনো ভূমিকার কথা মনে পড়ে না যেখানে জলচরেরা একবার অন্তত বলবে---দেখা হবে!

সমুদ্রের টান এলে গুছিয়ে নিতে কেন এত দোনামোনা লাগে?


ভয়ঘণ্টা

বিশাল ব্রিজের নিচে দিনের প্রথম অন্ধকার নেমে এল। সারি সারি রেললাইনের দীর্ঘ পিঠের ঝিলিক আসছে শুধু। কতগুলো রুপালি ভূতের লম্বা শিরদাঁড়া জেগে উঠতে উঠতে অজগরের পেট, তারপরে আর কিছু নেই।

ভয়ে আমরা সেখানে পালিয়ে গেছি। রেলের সিঁড়ি বেয়ে দৌড়েছি রাতভর।

খুব ভয় পেয়েছি তবু সহসা ফিরিনি। বিরামহীন ভীতির ঘণ্টা বাজছিল যেখানে সেখানে আমার হাত রেখেছিলে তুমি। সেখানে তোমার দিনরাত্রির সব গন্ধ জমা হয়েছিল। আমার হাতের নিচে ভয় যেন বোবা ও ভোতা হয়ে এসেছিল।

কম্পন ও স্পর্শ আমাদের একাগ্র করে রেখেছে। আমরা দৌড়ে চলেছি একবার স্টেশনের দিকে মুখ করে আরবার দূরের লাল সিগন্যাল পেরিয়ে, নিরুদ্দেশে...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:১১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×