somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠশালার কবিতা : কবি সৈকত হাবিব

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১৮ অক্টোবর ২০০৮, শনিবার সেলিম আল দীন পাঠশালার পক্ষ থেকে তরুণদের কবিতাপাঠ ও আলোচনার আয়োজন করা হয়। তাতে অংশগ্রহণ করেন নব্বইয়ের দশকের ৫ জন কবি। তারা হলেন : চঞ্চল আশরাফ, জাফর আহমদ রাশেদ, মুজিব মেহদী, সাখাওয়াত টিপু ও সৈকত হাবিব। অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন ড. আজফার হোসেন।

ইতঃপূর্বে ৪ জন কবির কবিতা ব্লগের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে চেষ্টা করেছি। এবারে পাঠশালার এই অধিবেশনের শেষ কবি সৈকত হাবিবের কবিতা নিয়ে হাজির হলাম একই উদ্দেশ্যে। আশা করছি পরবর্তী পোস্টে এই আয়োজন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু কথা বলেত পারবো। কাব্যামোদী গৌড়জনদের নিরন্তর শুভেচ্ছা।



সৈকত হাবিব

জন্ম : ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। পেশা : সাংবাদিকতা। গদ্যপদ্য উভয় এলাকাতেই তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

তার কাব্যগ্রন্থ দু’টি : শহর, যৌবন ও রাত্রি (২০০৪), আমরা কেবলই চায়ের টেবিলে ঝড় (২০০৭)।
কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ : কবিতার ডানা (২০০৭)।

এছাড়া জীবনানন্দ দাশের উপর রয়েছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদনাগ্রন্থ। বইটির নাম : বনলতা সেন : ষাট বছরের পাঠ (২০০৪)।
নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজ প্রতিশিল্পের যাত্রা তারই হাত ধরে। তিনি ছিলেন এর সূচনা-সম্পাদক।



নারায়ণের ঘাট

নারায়ণের ঘাটে গিয়েছি কতদিন
তবু আজও মনে হয়, আমি কি দেখেছি
তোমায় মাঝি, হে নারায়ণ, দেখেছি কি
কোনো জন্মে, তিতাসপাড়ে?

কত কৈশোরসন্ধে ও কুমারীসৃদশ ভোর
গোধূলিবিকেল আর ঘরেফেরা পাখিসন্ধ্যায়
আমি হেঁটেছি, হেঁটে হেঁটে
চলে গেছি তিতাসহিজলছায়া মেখে...

আর অনেক অনেক রাতে সৌরজ্যোৎস্না
মেখেছি তিতাসহাওয়ায় আর গভীর
গভীর শুনেছি দূরগামী দাঁড়িদের
নিশি-জাগার শব্দ, পাখিডানার গান...

তবু, আজ, এই নির্ঘুম, শাহরিক রাতে
মনে হয়, তিতাস দেখিনি আমি কোনোদিন
দেখিনি তিতাসছায়া, সেই নারায়ণ মাঝিকে
কখনো দেখিনি আমি এই জন্মে
দেখেছি কেবল নদীর শব আর রক্ত
আর ধূলিদীর্ণ এক নারায়ণ-মুখ।


আমার সন্তানের প্রতি

আমিও সূর্যের পুত্র, তোমার মতো। তবু তুমি কারো পুত্র নও, আমিও নই পিতা।

সৃষ্টির নিহিত-অর্থে মানুষের নিজের বিধানে আমরা জড়িয়েছি পুত্র ও পিতায়।
বীর্য সেই অমোঘ নিয়তি, আমাদের যা এনেছে টেনে এই রক্তাভ-বন্ধনে।

একদিন আমি ছিলাম শূন্যে, নিঃসম্ভাবনায়। কোনো এক পুরুষের রেতঃপিপাসা
আর কোনো মাতৃসম্ভবা কুমারীর অবুঝ আবেগ আমাকে এনেছে এই নরকে,
অনুরূপ তুমিও।
আমরা রোপণ করেছি এক ভালোবাসা-গাছ, পুত্র ও পিতায়। কিন্তু ঘৃণা কি করব
কোনোদিন? তুমি আমাকে, আমি তোমাকে; কিংবা ঘৃণা এবং প্রেমে, প্রেম এবং
ঘৃণায়...

সেদিন কি রাত ছিল, তোমার বীজমুহূর্তে? আমরা কি জেনেছি তুমিই সেই অনাগত?

তবু তুমি আজ অনন্ত অন্ধকার থেকে বিকশিত এক আলোর কুসুম, যেন শস্যদানা থেকে বিস্ফোরিত ব্রহ্মাণ্ড।

জীবনকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি, মৃত্যুকেও; বরং হয়তো ঘৃণা করি
এই মানুষজন্মকেই।


তবু এই যে এসেছি পৃথিবীতে, তুমি আমি
চলো প্রেমে-অপ্রেমে তাকে গ্রহণ করি।



মঙ্গলপ্রভু বললেন অমঙ্গল বিষয়ে

মঙ্গলে ভোর হচ্ছে।
ভোরের বিভূতি পড়েছে ছড়িয়ে। চরাচরে নৈঃশব্দ্যের হিমেল সঙ্গীত।...বহুকাল পর ছিঁড়ে গেল নৈঃশব্দ্যের জাল। কেঁপে উঠল রক্তিম মাটি, গভীর ঘুম থেকে যেন আচমকা জাগরণ---সরব সব অদৃশ্য প্রাণ। কেঁপে কেঁপে ভেসে এলো গমগমে শব্দের বাণ---
মঙ্গলপ্রভু বললেন অমঙ্গল বিষয়ে :
‘ছিলাম বহুকাল শব্দহীন। হায়, সেই দিন বুঝি এলো ফুরিয়ে। নিকট পৃথিবীও গেছে কবেই বুড়িয়ে। হে আমার মঙ্গলপ্রাণীরা, আমরা কি ছিলাম না আমাদেরই মতো, এই গ্রহজন্মের পর, এতোদিন? বুঝি ফুরিয়ে এলো দিন! নিজের মাতৃগ্রহ যারা খুঁড়েছে এতদিন, ছিঁড়েছে জরায়ু যারা তার, কী এক অমঙ্গলে, তারা আসছে মঙ্গলে। তাদের থাবায়, এই প্রথম, মহা-ভীত আমি আজ। সবুজ গ্রহ নিঃশেষ, লোলজিব এই মানুষেরই হাতে। ছিঁড়বে এবার তারা মঙ্গলের বুক। দ্যাখো, কেমন বর্বর যন্ত্রঘর্ঘর শুরু হয়ে গেছে দিকে দিকে!
হে আমার সন্তানেরা, তোমাদের কোন পাপে এ অমঙ্গল আজ, এলো মঙ্গলে।’

আবার স্তব্ধ সব, বিষণ্ন তার উজ্জ্বলতা, হননভয়ে কম্পিতা, হিম-চুপচাপ শূন্যতা।



অপেক্ষা

অপেক্ষা করছে কেউ, তোমার জন্য, সুবোধ সোনালি মেয়ে

অপেক্ষা করছে কবোষ্ণ রাত্রি, নরম চাঁদ, আলোআঁধারি,
অপেক্ষা করছে ঘুম, জাগরণ, নৈঃশব্দ্য, রতি, স্বপ্ন, স্পর্শ,
উষ্ণ ঠোঁট। দিনে তোমার অপেক্ষা করে ফুটপাথ, কামুক
চোখ, মেয়েদের ঈর্ষান্বিত বোধ। পথ তোমার অপেক্ষা
করে---অপেক্ষা তোমার কর্ম, রোদ্দুর, হাওয়া ও ক্লান্তির।

তুমি অপেক্ষা করো স্বপ্নের সফলতার, মগ্ন পৌরুষের,
গাঢ়তর চোখ আর আলোকিত পুত্রকন্যাদের। চুপি চুপি
গাঢ় রাতে গোপন রক্ত ঝরার বেদনা ও পূর্ণতার আনন্দে
তুমি বিস্মিত, আলোকিত ও উন্মোচিত হও।

গোপন আয়নায় দেখো নিজের চোখের তারার সবুজাভ,
শস্যবতী কম্পন।


ভোরের আশ্চর্য রোদ

কোনো এক ভোরবেলায় যখন বাজায় রোদ তোমার ডোরবেল, অথচ ক্লান্ত তুমি রাত্রিজাগরণে, ভোরের আশ্চর্য রোদ তোমাকে স্পর্শ করে না, সে তোমাকে দেয় না কোনো মুক্তি, আনন্দবাতাস

এই নগর তোমাকে দিয়েছে কেবলই ক্লান্তি, কেননা তুমি তাকে রচেছো নিজের ঘামশ্রমরক্তে আর নিজেকে নিঃস্ব করে দিয়েছো তোমার সব, তোমার শরীরমন আর স্বপ্নসকল

অথচ, তোমার পিপাসা ছিল আরাম আর বিশ্রাম আর তৃপ্তি আর শান্তি আর
উজ্জ্বল ভোরের...

কিন্তু নগর খেয়েছে তোমার সব, তোমার সকল আনন্দ-আয়োজন, স্বপ্ন, পিপাসা, সুখ। কিছুই নেই নিজের ভেতরে তোমার আর, কেবলই ক্লান্তি, কেবলই দৌড় আর ঘুমের পিপাসা

নগরজন্মের পর ভোরের আশ্চর্য রোদ তোমাকে আর ছুঁতে পারে না
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×