somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী পাঁচ-যখন ছেলের জন্ম হইল, মা ছিল না ঘরে

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্ম দাতায় দিলনা জন্ম, জন্ম দিল পরে,
যখন ছেলের জন্ম হইল, মা ছিল না ঘরে।
জয়ধন মুনির ধ্যান খুব সহজে ভাঙ্গেনা। জগৎ-এর সব কিছু তুচ্ছ জ্ঞান করেই, এজীবনের সার্থকতার সন্ধানে মানুষের কোলাহল ছেড়ে, গহীন অরণ্যে যোগী হয়েছে। বনের বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক ঐসবের ভয়, জয়ধন মুনিকে বিচলিত করে না। কারণ জয়ধন মুনি জানে, মানুষের চেয়ে ভয়ংকর প্রাণী ধরতি মাতা জন্মায়নি। এই গভীর অরণ্যে অন্তত মানবের উপদ্রব নেই। এই তার বিশ্বাস।

বিশ্বাস করেছিল জোস্নাও।
এতটুকু মেয়েকে মংগার কারণে ঝিয়ের কাজে পাঠিয়েছে হরু মাঝি। ভেবেছিল: বাঘু পাটনি পেটেভাতে খাটাক। কিন্তু বয়স কালে মেয়েটার একটা বিয়ে তো দেবে! আমি খাইয়েই বাঁচিয়ে রাখতে পারব না। মেয়ে হয়ে জন্মেছে কাজ তো স্বামীর ঘরে গেলেও করতে হবে। চুরিতো আর করছে না! মন খারাপ আমারও বউ! আঁচলে চোঁখ মুছতে মুছতে হরু মাঝির বউ স্বামির ব্যাবস্থা মেনে নিল।

সেই যে হরু মাঝি মেয়েকে রেখে গেল, সেই থেকে মেয়ে বাঘু পাটণীর হয়ে গেল। মেয়ে দেখতে শুনতে ভাল। কাজও ভাল করে। সবাই খূশী। বাধ সাধল মা ধরতী। পেট ভরে খেতে পায়। এত খাটা খাটনির পরে, যখন ঘুমোতে যাবার আগে বঘু পাটণী ডাকে: মা জোস্না একটা পান ছেইচ্চা দেতো। জোস্নার প্রণটা পিতৃ ভক্তিতে ভরে উঠে। ভূলে যায় সে এবাড়ীর চাকরাণী। তাও বিনে পয়সার। কিন্তু ঐ যে মা ধরতী! জোস্নার মন এবং শরীর দুই মার আর্শীবাদে পুষ্ট হল। মা ধরতী জোস্নার এত রুপ দিল যে, বাঘু পাটণীর মাথা ঘুরে গেল।
তার ফল ভোগ করতে জোস্না সমাজ ছেড়ে জঙ্গলে এল। দশ মাস দশ দিন পর বাঘু পাটণীর বীজ জোস্নার পেট ফুরে মা ধরতীর বুকে অঙ্কুরোদগম করতে চাইল। তা সামলাতে না পেরে জোস্না কেঁদে উঠল।
জয়ধন মুনি মানুষের কান্নায় ভয় পেয়ে মেয়ের দিকে ফিরে চাইল। এই একটি ভূলের কারণে জয়ধন মুনির সাধনা পূর্ণ হলনা। সে যে পাপী ছিল সে পাপীই রয়েগেল। মেয়েটির জন্য তার মায়া হল। অথচ এ মায়ার মোহ মুক্তিই ছিল তার সাধনা। ধরণীর আর সব কিছুর মতই জয়ধন মুনিও মা শিশুর দেখা শোনা করতে লাগল। জয়ধন মুনি জানে না কে বাঘু পাটণী। তার কাছে পৃথিবী খুব সহজ। "ভবে মানুষ রতন করগো তাহারে যতন"। কিন্তু এতটুকু বুঝেছে যে, মেয়েটি তারই মত বনবাসী হয়েছে। কারণ যাই হোক দুজনে একই বনের বাসিন্দা।
কিন্তু তাই বলে ধ্যান করা জয়ধন মুনি একে বারে ছেড়ে দেয়নি। এক দিন মুনি ধ্যানে বসেছে দেখে মেয়েটি ভাবল জল নিয়ে আসি। কিন্তু ছেলেটা যেতে চায়না। মুনিকে বলল বাবা ছেলেটাকে রেখে গেলাম। একটু নজর রেখ। মুনি শুনলকি শুনলনা। আবার ধ্যানে মগ্ন হল। কোন অদ্ভূত শব্দে মুনির ধ্যান ভেঙ্গে গেল। কিন্তু ছেলেটাকে কোথাও দেখতে পেল না। কারণ মুনি ধ্যানে বসার পর ছেলেটা মায়ের পিছু পিছু নদীর ধারে চলে গেছে। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে মুনি গেল দিশে হারা হয়ে। মা কে এখন কি বলব? কে জানে হয়ত ছেলেকে বাঘে নিয়ে গেছে! তুই আমাকে এত যন্ত্রনা কেন দিচ্ছিস ভগবান! ভগবানের দয়া হল। বলল ছেলে পাবি, অধৈর্য্য হসনে। মুনি বলল হে ভগবান, আমি তোর কাছে কিছুই চাইনে, শুধু মা ফিরে আসার আগে ছেলেটাকে আমার হাতে তুলে দে। অমনি ঝোপের আড়াল থেকে ছেলে মুনির পাশে এসে বসল। ছেলেকে কোলে তুলে চুমোয় ভাসিয়ে দিল মুনি। আর বলল: এখন থেকে আমার ধ্যান জ্ঞন সব তুই। এমন সময় মা তার ছেলেকে নিয়ে নদীর ঘাট থেকে ফিরে এল।

আছে মিলে খায় কতেক দিন যায়
এই ভাবে তিন জনের সংসারে চার জন হল। এক ছেলের যায়গায় দুই জন হল। দুজনেই মায়ের সন্তান। মা দু'জনকেই ছেলের আদরে মানুষ করতে লাগল। দেখতে দুজন একই রকম। যমজ ভাই। সব মানুষ একই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। জয়ধন মুনি ভগবানের লীলা ছেলে দুটির মাঝে খোজেন। কিন্তু মা ধরতী বসে নেই। ছেলে দুটি বড় হয়। মুনির ইহধামের সাজা কমে। এখন মুনির চোখ কদাচিৎ খোলে। পানাহারের যন্ত্রনা আর পোহাতে চান না। আজকাল জলটুকু পর্য়ন্ত মুখে তুলেন না। এভাবে ভবের খেয়া পারি দিয়ে একদিন মাটির ঢেলা মা ধরতিকে ফেরৎ দিয়ে, স্বর্গবাসী হলেন জয়ধন মুনি। মায়ের ভাবনার কারণ নেই। জয়ধন মুনির আশ্রয় এখন আর তার প্রয়োজন নেই। ছেলে দুটি মায়ের খুব দেখা শোনা করে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে তারা বর হচ্ছে। জীবনের সব চাহিদা একাই মেটাতে সক্ষম।

আল্লার আছে মর্জি, খোদার আছে কাম
জাগা বুইজা পইরা গেছে মালদাইরা আম।

তাদের সোনার সংসার তছনছ করে দিতে এক দিন কামান গর্জে উঠল। বর্ণহীন মানুষ জঙ্গল কেটে মঙ্গল করতে নীল চাষ করল। মা বৃদ্ধা বলে আর "জয়ধন মুনির বর" ছেলেটা চালাক বলে, আদি বাসে ঠাঁই পেল। অন্য ছেলেটা মা ধরতির বুকের মায়া, এই গাছ-বৃক্ষ কাটায় বাধা দিয়েছিল বলে বর্ণচোরা মানুষ গুলি তাকে দিপান্তর নিয়ে গেল। সেখানে নাকি তাকে লোহার বোঝা বইতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৪৩
৩৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×