somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাচের পুতুল!/ লিখেছেন; শুভ

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি শুভ; মানে আমার নাম শুভ। আমি কিন্তু মেয়ে, একটু কপাল কুচকে গেল! সবারই যায়; অনেকে বলে: শুভ আবার মেয়েদের নাম হয় নাকি! আমিও জানি শুভ মেয়েদের নাম হয় না। মেয়েদের নাম হয় 'আয়শা' বুশরা,অথবা ফাতেমা-এ জাতীয়, এবং এ জাতীয় আমার ও একটা নাম ছিল ।সে নামটাকে বাবা-মা ডাকার সুবিধার জন্য ছোট করে দিয়েছে;তারপর থেকে শুভ!
এ তো গেল নাম বৃত্তান্ত।স্বভাবতই লেখা উচিত আমার গুনের নকশীকাঁথা। কিন্ত বিধাতার কৃপনতায় পাইনি সেই গুনের মাথা! সবগুলো ছেলে-মেয়ে কে, বাবার সারাজীবনের ইচেছ দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়াবে । সে ধারাবাহিকতায় আমার ও তা নিতে হল । বাবা তার সারাজীবনের ইচ্ছের মাঝে তার সারাজীবনের কামাই এর শেষ কনাটুকু ঢেলে দিল ।

নাচতে পছন্দ করতাম, তার চাইতেও বেশী পছন্দ করতাম, নাচের সাজসজ্জা গুলো । খুব আদুরে এবং ভীষণ বড়লোকের ফর্সা তুলতুলে পুতুলের মত মেয়ে গুলো সাধারনতঃ নাচের জন্য নির্বাচিত হত আমাদের পাড়ায় । কি যে সুন্দর তাদের নাচের সেই সব বাহারি পোষাক গুলো! স্কুলে কোন অনুস্ঠান হওয়ার আগে, নাম নির্বাচক কমিটির সুনিতী দি ক্লাশে ঢুকেই চেচিয়ে বলতো, কৈ রে সুবর্ণ আয় নাচবি । ভদ্র মহিলা কোন এক অজানা কারনে সবার আগে আমার নামটাই নির্বাচন করতো । তারপর রোজ বিকেলে চলতো তার মহড়া; পুতুল পুতুল চেহারার মেয়ে গুলো কে, পুতুল পুতুল চেহারার মা গুলো হাত ধরে নিয়ে আসতো, আর নাচ শেখানোর ভাইয়া মা দের হাত ধরে, মেয়ে গুলো কে নিয়ে, মেয়ে দের হাত ধরে মা দের সামনে পরম যত্নে নাঁচ শেখাতো। তুলতুলে মেয়ে গুলো, পায়ে শব্দ করে তাল রাখতে পারতো না; মা গুলো দৌড়ে এসে, মেয়ের পায়ে হাত দিয়ে, তাল ঠিক করে দেবার চেষ্টা করতো, ভাইয়াও সে হাত গুলোর ওপর হাত রেখে, তাল ঠিক করার চেষ্টা চালাত । মাঝেমাঝে তার সাথে আমাকে সহকারী হিসেবে দাড় করাতো । ফাইনাল মহড়ার আগেই ওদের নাচের যাবতীয় পোষাক-গহনা তৈরী করে ফেললো। আর আমি মার সবচেয়ে দামি শাড়িটা দেবার জন্য কেঁদে-কেঁটে মাকে রাজি করিয়ে রাখলাম। টিফিনের জমানো পয়সা গুলো দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চুড়ি, মালা, আলতা, ফিতা কিনলাম। পলিথিনের ব্যাগে মুড়ে, সবাই যেখান থেকে তৈরী হবে সেখানে দৌড়ে গেলাম। সবাই ব্যস্ত; পুতুলের মত মা গুলো একটু পরপর আমাকে আদুরে গলায় বলছে ''আম্মু এটা একটু দাওতো, ওটা একটু দাওতো''। আমি ছুটে ছুটে দিতে থাকলাম। সবার সাজানো শেষ। আমি কোনরকম চুড়ি, আলতা পড়ে, ছোট হাতে শাড়ি গুজতে না পেরে, কোন এক আন্টি কে ডাকবো, ওমনি ভাইয়া স্টেজে ওঠার সিরিয়ালি নাম ডাকা শুরু করলো; উত্তেজনায় আমার ছোট শরীর টা থরথর করে কাপছে; কোনভাবে শাড়িটা গুজে নাম শুনতে লাগলাম। শেষ নাম অব্দি ঠোটে লেগে থাকা হাসিটা রইলো; ভাবলাম ভূল করে হয়তো আমার নামটি ডাকেনি ! নাচের ভাইয়ার কাছে জানতে চাইলাম; তিনি বললেন: আমার স্টেপ শেষের কিছুদিন ভূল ছিল; অন্য কোন সময় আমাকে নেয়া হবে! আমি ছোট মাথা কাত করে বললাম, আচ্ছা! মার পছন্দের শাড়িটা কোন একটা ঝোপের আড়ালে রেখে দিলাম। সেখানে বসে চীৎকার করে কেঁদে - কেটে ঘরে চলে এলাম। পরে শুনেছিলাম, কোন এক মেয়ের বায়নায়; তার মায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে, "নাচের" ভাইয়া আমার জায়গায়, সে মেয়েকে ঢুকিয়েছিলেন! আমি জানি সেদিনের সে স্টেপ টা ভুল ছিলনা; কিন্ত তার পরের স্টেপ টা ছিল ভুল! যখন আর কখনো নাচবো না বলে পণ করেছিলাম!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৩৬
৪৭টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×