এ কে এম মকছুদ আহমেদ
মেইট্টাল, চট্টগ্রামী ভাষায় প্রথম গল্পগ্রন্থ। রচয়িতা তরুণ কবি ও গল্পকার কাফি কামাল। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত এ ভাষায় আর কারও মৌলিক কথাসাহিত্য প্রকাশিত হয়নি। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ডলুকুল এলাকায় জন্মগ্রহনকারী এক তরুন তুর্কি কাফি কামাল এই মহতী উদ্যোগ নেয়ায় চট্টগ্রামবাসীর প থেকে তাকে জানাই অভিনন্দন। সেই সঙ্গে এই মহতী উদ্যোগ যাতে থমকে না যায় সেদিকে ল্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সবিনয়ে আবেদন রাখছি।
চট্টগ্রামী ভাষায় প্রকাশিত প্রথম এ গল্পগ্রন্থ নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামের সাহিত্যপ্রেমীদের অনেক উৎসাহ যোগাবে। প্রেরণা যোগাবে চট্টগ্রামী ভাষায় আরো গল্প, কবিতা, উপন্যাস রচনায়। তাই ‘মেইট্টাল’ গল্পগ্রন্থের সমালোচনায় ভূলক্রুটি না দেখে এই উদ্যোগকে ধরে রাখার জন্য প্রয়াস গ্রহন করতে হবে।
গ্রন্থটিতে ৫টি গল্প রয়েছে। যথাক্রমে- মার বদিয়ালাম, আজারুদ্দিন লেই ল, রইত্থার পোয়া চৈইত্থা, কুর কুরইন্না আঁসি ও মেইট্টাল। প্রত্যেকটা গল্পেরই ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। যা পাঠকদের মনে ভিন্ন ভিন্ন আনন্দ দেবে। ‘মেইট্টাল’ গল্পের একটি অংশ ‘জঈরারল্লয় হতা হইতে হইতে মন্টু গান গাই ওডে... ‘অ ভাবী ভাবীরে... বদ্দারে হনা আরে... বিয়া গরাইবার লাই... এ্যান জোয়ান হালে নইলে বিয়া... আরতো বিয়ার মজা নাই।’ এসব গান চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। তিনি সে ঐতিহ্যকে ব্যবহার করেছেন সার্থকভাবে। সঙ্গে ওই গানের গীতিকারদের নামোল্লেখ করে সততার পরিচয় দিয়েছেন।
কাফি কামাল একটি অত্যন্ত দুঃসাহসিক ঘটনার অবতারণা করেছেন। এটাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলে মিলে চেষ্টা চালাতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, নাট্যকার, সাংবাদিক সকলেই যদি চট্টগ্রামী ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, কাব্যগ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশে এগিয়ে আসেন তাহলে কবি কাফি কামালের এ প্রয়াসের সার্থকতা আরও বাড়বে।
‘মেইট্টাল’কে চট্টগ্রামী ভাষার একটি ধাপ বলে মনে করি। এ ধাপকে আরও অনেক উপরে নিয়ে যেতে হবে। যে ধাপ বেয়ে চট্টগ্রামবাসী তথা চট্টগ্রামী ভাষাভাষীরা গর্ববোধ করতে পারে। বুক উচিয়ে মাথা তুলে বলতে পারে আমি চট্টগ্রামীভাষী। তাই কাফি কামালের এ মহৎ উদ্যোগ চট্টগ্রামবাসীর জন্য পাথেয় হিসাবে থাকুক এটা কামনা করছি।
চট্টগ্রামে তো অনেক সাহিত্য বিশারদ, ইতিহাসবিদ ছিলেন এবং আছেন। কিন্তু কেউ তো চট্টগ্রামী ভাষায় কোন গল্পগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, কবিতাগ্রন্থ, ইতিহাসতো রচনা করেননি। (এটা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়)। বর্তমান ‘মেইট্টাল’ গল্পগ্রন্থের মাধ্যমে যে পথচলা শুরু হয়েছে তাকে ধরে রাখতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। চট্টগ্রামী ভাষা হউক আমাদের প্রাণের ভাষা। এ ভাষার জন্য যা যা করনীয় সব কিছুই করতে হবে। টিকিয়ে রাখতে হবে এ আশা প্রকাশ করছি।
যদি চট্টগ্রামী ভাষার সাহিত্য চর্চার এ ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রামী লিপিও উদ্ভাবন সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম ভাষার নিজস্ব লিপি উদ্ভাবন হলে চট্টগ্রামের সাহিত্য চর্চার অবিস্মরনীয় নতুন প্রনোদনা তৈরী হবে। চট্টগ্রামের তরুন লেখকরা অতিশীঘ্রই সে শুভদিন উপহার দেবেন এ প্রত্যাশায় রইলাম।
[লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক গিরিদর্পণ (পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বপ্রথম সংবাদপত্র), রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা)।]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


