somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুনদের হাতেই বাঁক নেবে বাংলা কবিতা: মুহম্মদ নূরুল হুদা (ম্যাজিক লণ্ঠন কবিতা আড্ডার আলোচনায়)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের আড্ডার কবি কাফি কামাল। যে নিজেকে দাবি করেছে, বাঘিনীর নাতি। কাফি কামাল, আড্ডার সভাপতি, উপস্থিত প্রিয় কবিবৃন্দ। আমার কি কোন ছায়া আছে? দেখুন, আমার কোন ছায়া নেই! ফরিদ (ফরিদুজ্জামান) কিন্তু বলেছে- আমার ছায়াতলে অনেক তরুন বেড়ে উঠছে। ছায়ার কথাটি বলছি এ জন্য যে, প্রতিদিন সকালেই কিছু না কিছু লিখতে হয়। আজকে সকালেও লিখতে বসেছিলাম। বসেই নোবেল বিজয়ীর কথা মনে পড়লো। এবার নোবেল বিজয়ী টমাস ট্রান্সটোমারের নাম আমি আগে শুনিনি। এটা কত বড় মূর্খতা আমার জন্য! আপনারা এখানে কয়জন তার নাম জানেন, জানি না। হয়তো এমনও হতে পারে আগামী কয়েকবছর যাদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে আমি তাদের নামও জানি না। তাদের লেখা পাঠ তো দূরের কথা। এ ভূমিকার মাধ্যমে আমি বলতে চাচ্ছি- অনেক কিছুই আমাদের অজানা-অচেনা থেকে যায়। কিছুই করার নেই। আমি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম, এখন ইংরেজি পড়াই। আমি সেক্সপিয়র সব কিন্তু পড়িনি। আমরা যারা কাজী নজরুল ইসলামকে পড়েছি, আমাদের বাংলাদেশের একেবারে প্রিয়তম কবি। আমরা কি তার সব রচনা পড়েছি? আসলে আমরা যা বলি তার বেশীরভাগই শোনা কথা। অথবা নিজে একটু পড়ে অন্যে যা বলেছে তার সঙ্গে কিছুটা মিশেল। আজকেও লক্ষ্য করেছি, এখানে যারা কথা বলেছেন তাদের বেশীরভাগই নিজে কিছুই বলেননি। এর কারণ হচ্ছে- আড্ডার কবি কাফি কামালের যে রচনাবলী তা আমাদের খুব বেশী পঠিত নয়। শুধু কাফি কামাল কেন, এই যে আগের আলোচক রেজাউদ্দিন স্টালিনের সব কবিতা কি আমি পড়েছি! অথচ তার নির্বাচিত কবিতা আমাকে উৎসর্গ করেছিল। আমি তার সব কবিতা পড়িনি। আমার ছায়ার সঙ্গে বেড়ে ওঠা ফরিদুজ্জামানের সব কবিতাও আমি পড়িনি। এটা অসম্ভব। এই বাস্তবতা থেকে যদি সরে আসতে হবে। তবে অনেকেই বলে- কবিতা লেখার পর চুপচাপ থাকাই উত্তম। আমি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না, বিরোধীতা করি। আমি মনে করি, কবিতা লেখার পর কবিরই কাজ হচ্ছে তা প্রকাশ করা। যেন পাঠক তা পড়তে পারে। যাহোক, আবারও আসছি টমাস ট্রান্সটোমারের কথায়। আসছি এ জন্যই যে, তার কবিতা উচ্চমার্গের। ইন্টার নেটে ঢুকে যেই ট্রান্সটোমারকে টোকা দিলাম অমনি ট্রান্সটোমার বেরিয়ে এলো। তার তিনটি কবিতা আমার সামনে এসে হাজির। আমি ভয় পাচ্ছি। বাংলার বই আমরা বুঝি না, তার উপর সুইডিস কবির কবিতার ইংরেজি অনুবাদ। ওমা একটি কবিতা পড়ে দেখি, একি! কবি বলছেন- ‘আমি চলেছি, আমাকে বহন করে চলেছে আমার ছায়া’। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই তিনটি কবিতা অনুবাদ করে ফেললাম। ছোট্ট কবিতা কিন্তু আমার এত ভাল লেগে গেল। আমার ছায়া বহন করছে আমাকে, যেভাবে একটি ভায়োলিনকে বহন করে একটি কালো বাক্স। এটাই শিল্পের সৃষ্টিশীলতা এবং সৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য।
আমি লক্ষ্য করেছি, কখনো কখনো কবিতা পড়ে বুঝা যায়। তবে কবির কণ্ঠে যদি আমরা শুনে ফেলি তখন ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়, অন্য একটা মেজাজ পাই। এ তো অন্যরকম শুনতে! এর কারণ কিন্তু অনেকগুলো। একটা কারণ হচ্ছে- ভাষার যে বিভিন্ন ধরনের ছায়া আছে সে ছায়ার ভেতর কোন কোন ভাষা বাংলাভাষা হয়েও বাংলাভাষা নয়। যেমন, আজকের আড্ডার কবি কাফি কামাল যে কবিতাগুলো পড়েছে। সেগুলো শুনে মনে হলো একি হুবহু বাংলা ভাষা? যে প্রমিত বাংলাভাষা নদীয়া থেকে এসেছে, কুষ্টিয়া থেকে এসেছে। যা প্রমথ চৌধুরীর কাছে, রবীন্দ্রনাথের কাছে শিখেছি। সে বাংলা ভাষায় কাফি লিখছে, কিন্তু তার উচ্চারণে কেমন যেন অন্যভাব। আর ওর কবিতায় কিছু শব্দতো ঢুকেই গেছে। যেমন- তার মেইট্টাল। একই বিষয়টি অন্যভাবে আমাদের চিন্তা করতে হবে। একজন কবিতো লেখক, কারণ কবিও লিখেই নিজেকে প্রকাশ করেন। নতুন এবং মৌলিক কবি প্রকাশ করেন তার আশপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ, সে পরিবেশের গন্ধ। তা যতই অন্যের কাছে অপছন্দ হোক, অপরিচিত হোক। সে বিষয়টিকে দেখা, লেখা এবং কথা বলা। আমার দৃষ্টিতে এসব বিবেচনাই কাফি কামালের প্রথম স্বাতন্ত্র্য। এখন কাফি কামালের নাম কাফি কামাল না হয়ে নাফি কামাল হলে কোন অসুবিধা হতো? কোন অসুবিধা হতো না। যদি রাফি কামাল হতো তাতেও কোন অসুবিধা হতো না। ঘটনাচক্রে ও কাফি কামাল নামটি পেয়েছে। কিন্তু মুল কাফি কামাল কিন্তু এই কাফি কামাল নয়। তার চারপাশে গড়ে ওঠা যে মানুষ সেই মানুষই (ভাবমূর্তি) কাফি কামাল। আমি কাফি কামালকে প্রথমেই অভিনন্দিত করছি। তার প্রথম বই ‘ডলুতীরে টংঘর’, থেকেই সে নিজেকে সনাক্ত করতে চেয়েছে। নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবেশ, মা-দাদিদের কবিতায় তুলে এনেছে। এখন তার জন্মাঞ্চলে বাঘের বসবাস নেই, কিন্তু মানবিক বাঘ তো আছে। সে যে বাঘিনীর কথা বলছে- এ অকৃত্রিম প্রকাশ ভঙ্গির জন্য এ অভিনন্দন।
আমরা সবাই মনে করি গদ্যে কবিতা লিখতে পারাটাই একটি বাহাদুরি। তার কারণ দুইটি। প্রথম কারণ হচ্ছে- অনেকেই গদ্য ছাড়া আর কিছুই জানে না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- পদ্যে কবিতা লিখতে গেলে কিছু কাজ করতে হয়। পদ্যের ভেতর যে একটি ছন্দ আছে। সে ছন্দ যদি জানতে হয়, ভাঙতে হয়। আর ভাঙতে হলেই প্রথাগত ছন্দটাকে জানতে হবে। সে ছন্দ আমরা অনেকেই জানি না। মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, স্বরমাত্রিক, এগুলোর ব্যাপারে আমরা বলি যে এগুলো বাতিল হয়ে গেছে। কেন বাতিল হয়ে গেছে? এগুলো রপ্ত করতে পারিনি বলে। যে মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত রপ্ত করেছে, সে ওই ছন্দে একটি কবিতা লিখতে পারার আনন্দটা অনুভব করতে পারে। ধরুন, মাত্রাবৃত্তে- কবিতা লেখার পর মনে হবে পিংপং বলের মত টুং টাং টুং টাং করে লাফাচ্ছে। উৎফুল্ল হয়ে, মানে ভালবাসা-প্রেমের যে মনোভাব এর ছন্দ হচ্ছে মাত্রাবৃত্ত। স্বরবৃত্তের কবিতা লিখলে মনে হবে- রাস্তায় দাড়িয়ে স্লোগান দেয়া হচ্ছে। আর গভীর কথা, একেবারে কানের কাছে গিয়ে প্রেমিকাকে বলার- ‘তোমারেই যেন ভালবাসিয়াছি, শত রূপে শতবার, জনমে জনমে...’ বা দেখার কথা ‘হাজার বছর ধরে আমি হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’ অথবা ‘তুমি যে তুমি ওগো সে ...’। এটা হচ্ছে বাংলাভাষার চিরায়ত সৌন্দর্র্য্য। এ সৌন্দর্য্য যে জানবে না- আমার ধারণা (বয়স যেহেতু ৬০ পেরিয়ে গেছে তাই বলতেই পারি) কেউ ভাল কবিতা লিখতে পারবে না। বাংলাভাষার ভাল কবিতা সে লিখতে পারবে না অক্ষরবৃত্তের উপর দখল যার নাই। বাংলাভাষার সব ভাল কবির, বড় কবির, প্রধান কবির, তাৎপর্যপূর্ণ কবির, এমনকি বলতে গেলে- যার কবিতা পড়তে ভাল লাগে তেমন কবির কবিতায়ও অবশ্যই অক্ষরবৃত্তের ব্যবহার আছে। কাফি কামাল ভাল লেখে। তার কবিতায় অক্ষরবৃত্তের নিটোল ব্যবহার প্রথম থেকেই আমি লক্ষ্য করছি। তার যে কবিতার বইটি এখন আমার হাতে (ডলুতীরে টংঘর) তার একটি কবিতা যখন সে পাঠ করছে, তখন মনে হল কি করছে ও? তার কি পতন (ছন্দ) হচ্ছে! কিন্তু কবিতা পাঠ করার পর আমার মনে হয়েছে- আমার ধারণা ঠিক নয়। সে সচেতন না হলেও তার কান সচেতন ছিল। তাই একটি ছন্দের ভেতরে যে নিরীক্ষা, যেটা সহজে কবিরা করে না, সে তাই করেছে। কবিতার নাম ১৪১০। ‘দিনগুলো বড় নির্মম নিশ্চুপ, রাতগুলো ুব্ধ লাঙলের ফলা’। শুনতেই মনে হচ্ছে, এটাকি স্বরবৃত্ত? স্বরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত না হোক মাঝামাঝি ‘স্বরমাত্রিক’ মনে হলো। কবিতার এক জায়গায় ‘পরে শতছিন্ন থামি’ এদিকেও ছয়, ওদিকেও ছয়। অক্ষরবৃত্তে ছয়-ছয় কিন্তু হয় না। আট-ছয় হয়, আট-চার-ছয় হয়। তাহলে ছয়-ছয় দিয়ে সে কি বলছে? তাহলে কি মাত্রাবৃত্ত লিখছে? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- আসলে এটা অক্ষরমাত্রিক। যেমন আমাদের মন্দাক্রান্তা ছন্দ আছে- ‘তোমাকে ভালবেসে বলতো কি পেলাম, বলতো কি পেলাম তোমাকে ভালবেসে’ এদিকে সাতমাত্রার দোল, ওদিকে ছয় মাত্রার দোল। একমাত্রা যে কোনদিকে কম থাকবে। এদিকে পাঁচমাত্রা হলেও ওদিকে হবে ছয়মাত্রা। রেলগাড়ি ঝমাঝম-এর মতো। জেনে হোক, না জেনে হোক; যেহেতু তার অক্ষরবৃত্তের কানটা ভাল ছিল, মাত্রাবৃত্ত জানাছিল, নিজের অর্ন্তবয়ানে - সে অক্ষরমাত্রিক একটি ছন্দ আবিস্কার করেনি, তবে লিখে ফেলেছে। এটা কারপক্ষে সম্ভব? যে ছন্দ সম্পর্কে মোটামুটি ভাল জানে। এটাও আমি বলব- তার কবিতার জন্য এটা একটা বড় ধরনের সাফল্য।
আরেকটি কথা অনেকেই বলেছেন- তা হচ্ছে ছন্দ। ছন্দ সম্পর্কে কাফি কামালের সচেতনতা অসম্ভব। ফলে সে বাংলাভাষার শব্দকে নতুন করে ভাংচুর করতে চেয়েছে। পাশাপাশি নতুন শব্দ তুলে এনে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন নতুন মাত্রায়। আমরা বলি, কবিতার ভাষাকে পাল্টাতে হবে। কবিতার ভাষাকে কিভাবে পাল্টাবেন আপনি? ‘আমি’র আর কোন শব্দ বাংলা ভাষায় আছে? আমি বলতে হলে আমি ছাড়া অন্য কোন শব্দে আপনি লিখবেন! ‘তুমি’ তুমি ছাড়া অন্য কোন শব্দে লিখবেন। সুন্দরকে সুন্দর ছাড়া মনোহর ... সবই তো জানা ভাষা। আমরা যে বলি, ভাষার নবায়ন আর হয়নি। এর অর্থ কি? এ বিষয়টা বুঝতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ভাষা লিখেছেন, নজরুল ইসলাম ভাষা লিখেছেন- ত্রিশের কবিরা ভাষা লিখেছেন। তাদের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? নাকি নেই, কি মনে হয় আপনাদের? আমি বলি আছে, শব্দের ব্যবহারে। শব্দের কোন ধরনের ব্যবহারে? ব্যবহারের ধরণটি কি? এটাই তো বুঝতে হবে। ‘বল বীর বল উন্নত মম শির, শির নেহারী আমার নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর’। অনেকেই নজরুলকে যেন তেন মনে করেন। চিৎকারের কবি মনে করেন। তারা কি চিন্তা করে দেখেছেন, ‘বল বীর বল উন্নত মম শির’- এর মধ্যে ‘বীর’ ‘উন্নত শির’ ইত্যাদি সবই আমরা জানি। কিন্তু এর ভেতর শব্দের দ্যোতনার পাশাপাশি যে চিত্রটা আকা হয়েছে ‘হিমালয়ের সামনে মানুষ নয়, মানুষের সামনেই মাথানত করছে হিমালয়।’ এই যে চিত্রটা, কেমন এ দেখাটা! এ নতুন দেখা যদি না হয়, এ দেখা যদি বর্ণনা না করেন তবে আপনার ভাষা নতুন হবে না। অর্থাৎ এটা দেখতে হলে কি করতে হবে- উৎপেক্ষন করতে হবে। উৎপেক্ষন বলে একটা শব্দ আছে। উৎপ্রেক্ষা মানে ভেতরে-বাইরে ভালভাবে দেখা। এখান থেকে যে শব্দটি এসেছে বাংলাভাষায় যা হচ্ছে- উৎপ্রেক্ষা। ইংরেজিতে মেটাফর। একটা জিনিষের সঙ্গে আরেকটি জিনিষকে তুলনা করা নয়, একেবারে অভিন্নভাবে প্রমাণ করে দেয়া। যেমন, কাফি কামালের ‘দিনগুলো বড় নির্মম নিশ্চুপ’। এখানে সে বলতে পারতেন ‘দিনগুলো নির্মমের মত, নিশ্চুপের মত’। কিন্তু তা না বলে এ দিন মানেই ‘এটা নির্মমতা, এটা নিশ্চুপতা’। ভাষা পাল্টে যায় মুলত এ একটি কাজের জন্য, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষার ব্যবহারে। এ জন্যই বড় কবিরা বলেছেন- যেমন, জীবনানন্দ দাশ বলেছেন- উপমাই কবিত্ব। তুমি যদি নতুন উপমা দিতে না পার তবে তুমি নতুন কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। নতুন উপমা দিলেই তোমাকে নতুনভাবে দেখতে হবে। একটির জন্য আরেকটি মিল যা প্রথাগত, সে তুলনাকে কোথাও ভাংচুর করে নিতে হবে। যেমন, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। খুবই ভাল একটি উপমা। তবে এটা প্রথম বলেছিলেন শেখ সাদি। আমরা জানি, সুকান্তের কথা। যাহোক, জেনে বা না জেনে সুকান্ত সেটা শেখ সাদির কাছ থেকে নিয়ে ভাংচুর করেন। তার যে বর্ণনাটা পাল্টে দেয়া, এ কাজটি করেছেন বলেই সুকান্তের ভাষা কিন্তু নতুনত্ব পেয়েছে।
কাফি কামালের কবিতায় রূপ সচেতনতা স্পষ্ট। তার কবিতায় সহজ-সরল বিবরনমূলক উচ্চারণের চেয়ে, অঙ্গিকারের চেয়ে; আলঙ্কারিক রূপক-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার প্রধান্য পেয়েছে। আমার ধারনা এটা একটি প্রক্রিয়া, একটি নিরীক্ষা। কবিতার তার এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হলে তিনি আমাদের সমকালীন বাংলার কবিদের ভেতর একজন আলাদা কবি হয়ে উঠবেন। সেদিন খুব বেশিদিন দূরে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ তার পরবর্তী যে কবিতাগুলো আমি এখানে এসে পড়লাম এবং শুনলাম তাতে দেখা যাচ্ছে, সে যে কোন বিষয়কে কবিতা করে তোলার চেষ্টা করছে। যেমন, কর্মক্ষেত্রে যখন সে বিচরণ করছে, রাজনীতির সংবাদ যখন করতে গিয়ে ভেতর-বাইরের পরিস্থিতি তুলে আনছে কবিতায়। ভাল কবির, বড় কবির লক্ষণ হচ্ছে- যে কোন বিষয়কে কবিতায় পরিণত করতে পারে। সে গুন তার আছে। আমি বলব, তার কবিতার মধ্যে একটা স্পর্ধা দেখা যাচ্ছে। কাফি কামালকে নিয়ে তাই আমি আশাবাদী। এ কবিতার আসরে যাদের কবিতা আমি শুনেছি, আড্ডার কবি হিসাবে অনেকের মধ্যে যে কয়জন তরুণকে পেয়েছে তাদের কবিতা আমাকে আশান্বিত করেছে। কাফি কামাল তাদেরই একজন। আরেকটি কথা বলেই আমি শেষ করব। ম্যাজিক লণ্ঠনের ৩৪৮তম আড্ডা হচ্ছে আজ। তার অর্থ কি? মানে সমকালীন বাংলা কবিতায় পুরোনোদের দিন প্রায় শেষ। শুরু হয়েছে নতুনদের, নতুন শতকের, নতুন দশকের কবির দিন। শুরুতেই নতুনদের অন্যরকম ভাষা, অন্যরকম নির্মাণ, অন্যরকম তৎপরতা দেখছি। আমার মনে হচ্ছে- বাংলা কবিতা অবশ্যই কাফি কামালের মত নতুনদের হাতে সযতœ চর্চিত হয়ে নতুন বাঁক নেবে। আর তাতেই বাংলা কবিতায় একটা জাদুকরি কাণ্ড ঘটে যাবে। জাদুকরি কাণ্ড সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রধান যে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে তা হচ্ছে একটি জাদুকরি বৈঠক। আমরা বলি- ম্যাজিক লণ্ঠন। কবিতা আসলেই ম্যাজিক লণ্ঠন। আজকের আড্ডার কবি কাফি কামালসহ সবাই সে জাদুকরি আলোয় আলোকিত হোন।
২৮শে অক্টোবর ২০১১, ১৩ই কার্তিক ১৪১৮।

ম্যাজিক লণ্ঠনে কাফি কামাল
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×