আমি যখন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পৌছালাম তখন সূর্য হেলেছে পশ্চিমে। তারকারা বাড়ছিল সংখ্যায়। সামু’র তারকা ভূবনে আমিও অচ্যুত এক, হয়েছি হাজির। মঞ্চ আছে ব্যানার নেই। তাই চিনতে ভুল, জিজ্ঞাসায় দ্বিধা। তবু প্রশ্ন করলাম- সামু’র মিলনমেলা কোথায়? জাহিদ ভাই বললেন- আসুন ব্লগান, প্লিজ জয়েন। হাত বাড়ালেন ‘জানা আপু’। পাশে কয়েকজন। দ্রুতই জমে উঠলো আড্ডা। ধীরে ধীরে জমলো মেলা, প্রাণের খেলায়। আনুষ্ঠানিক আড্ডা শুরু করলেন- জানা আপু। বিষয়: ভাষা। প্রশ্ন আর চুম্বক মন্তব্যে কথার লতাকে বাড়িয়ে তুললেন, টেনে নিয়ে গেলেন ‘অন্যমনস্ক শরৎ’। ভাষা নিয়ে তুমুল আড্ডায় মেতে উঠলেন ব্লগার- জানা আপু, কবির হুমায়ুন, সৌম্য, কাজলরেখা, ইসমাইল সিরাজী, ইবনে রহমত, আরজুপনী ও আশকারী রহমান। মুহূর্তেই জমে উঠলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আঙ্গিনা। লাগলো তর্ক, মিষ্টি-মধুর। জানা আপু আর কবির হুমায়ুন বিশুদ্ধ বাংলার পক্ষে বললেন। সৌম্য ভাষার স্বাধীনতা চাইলেন। ‘শিপু ভাই’- এর সিরিয়াস আড্ডার প্রতি অনাগ্রহকে পাশ কাটিয়ে আমিও কেড়ে নিলাম দীর্ঘসময়। চট্টগ্রাম ভাষা, আমার চট্টগ্রামী ভাষা চর্চা এবং এ চর্চায় সামু’র অবদানের কথা বললাম জোর গলায়, মুক্তমনে, অবাধে। ব্লগারদের দেখে মনে হলো মজা পেলেন, মুগ্ধ হলেন, কেউ কেউ বিরক্তও। তথাপি আমাকে সমর্থন দিলেন অকুষ্ঠ। আড্ডার চারপাশে কয়েকশ’ কৌতুহলী মানুষ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আমাদের কথা, অনুভূতি, যৌক্তিক তর্ক-বিতর্ক। মাঝখানে বিস্কুট, সমুচা আর চা-কফি পর্ব। খানিক বিরতি শেষে সবাই নিজের পরিচয়ের সঙ্গে জানালেন নানা অনুভূতির কথা। বিকাল তিনটা থেকে সাড়ে ছয়টা, মধ্যখানে ২১০মিনিট। আমাদের কোলাহল বয়ে গেলো নীরবে। সামু’র আড্ডায় আমার মাতৃভাষা ‘চট্টগ্রামী’ নিয়ে অনেক কথাই বলেছি। সামু না হলে কি এসব কথা এত লোকের সামনে বলার সুযোগ হতো। নিজেকেই প্রশ্ন করি আর সামু কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে আসে।
জানা আপু: মনে হলো শরতের কাশফুলের মতো নরম মনের একজন মানুষ। এতো নরম গলায়, কোমল কণ্ঠে কথা বলেন! মনে হয়, তার হৃদয় যেন ঢেলে দিচ্ছেন প্রতিটি বাক্যে।
ছোট্ট পরী: জানা আপুর ছোট্ট পরীর মতো মেয়েটি। মায়ের মতোই স্বভাবে কোমল। জেনে অবাক হলাম- চারটি ভাষা জানে। বাংলা, নরওয়েজিয়, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ। বিদায় বেলায় বললাম- ভালো থেকো মা। তড়িৎ জবাব- তুমিও।
জানা আপুর জামাই: কী দূর্দৈব! নামটি ভুলে গেছি। মনে দ্বিধা ছিল- কেমন করে বলি, একটু কথা? শান্তির দেশের মানুষ তিনি। কি ভাষায় বলি? ওমা! কী চমৎকার দেখা গেলো! তিনিও বাংলা জানেন। বলেন তো পাখির মতোই। বিনয়ের অবতার যেন। চারদিকে ছুটোছুটি করলেন- সবার সঙ্গে ভাব বিনিময়, খোজ-খবরও নিলেন।
অন্যমনস্ক শরৎ: তিনি সত্যিই শরতের কাশফুল। তিনি সত্যিই কবি। কবিতার মতো তার কথা। ছোট ছোট প্রশ্নের ফুলকিতে তিনি আড্ডার আগুন ছড়িয়ে দিলেন সবার মাঝে। এতো প্রশ্ন! মনে হলো- যদি তিনি টক শো’-র সঞ্চালক হতেন? আমার নিশ্চিত বিশ্বাস- টক শো-তে বাগাড়ম্বর করতে ধারে কাছে ঘেষতেন না কোন বাচাল ব্যক্তিত্ব।
রেজওয়ানা: আমার প্রিয় ব্লগারদের একজন। পোস্টে পোস্টে তার অভিমত, প্রেরণা। আমাকে উদ্দীপ্ত করে। মুখোমুখি দেখে, কথা বলে মনে হলো- মন্তব্যের মতোন তিনি সুন্দর, মন্তব্যের মতোই তিনি সহৃদয়।
কাজলরেখা: প্রথমে ছিলেন চুপচাপ, শেষে মুখরিত। কম্পিউটারের পড়–য়া হয়েও এতো ভালো কবিতা লেখেন! কেবলই বিস্মিত হই। কাজলরেখার মতো তুলে নাও আমাদের নয়নপাতার সূচ। দেখি আলো, উজ্জ্বল জগৎ।
কালপুরুষ: দিলেন লাফ, কুপোকাৎ। ছুটোছুটি, কণ্ঠমুখর। চশমা ছাড়া সবটুকুনই শিশু, তিনি সত্যিই। এমন জমিয়ে তোলা মানুষ, মিলবে কমই। নামটিও যথার্থ তার কালপুরুষ। কখনো তর্ক, কখনো দুষ্টমি; তার মধ্যে নিজেকেই দেখলাম বারবার আমি।
শিপুভাই: তিনি চান না সিরিয়াস হতে। তিনি চান ছুটে যেতে আড্ডার রথে। হাওয়ায় হাওয়ায়...। তাই বড্ড সতর্ক তিনি আড্ডা কি ডুব দিলো গম্ভীর গভীরে?
সৌম্য: স্বাধীন পাখির মতো ডানা মেলে দিতে চান সর্বত্র। ভাষা হোক, হোক না প্রান্তর। জানালেন ঘুরেন প্রচুর।
কবির হুমায়ুন: বয়স লুকোয় তার আচরণে। মনে হয় কোথা থেকে এলো এক শিশু। বড্ড কৌতুহলী। বলেন, চমৎকার। চকলেটে জুড়ান রসনা।
ইবনে রহমত: মনে হলো আমার মতোই। কিছুটা অর্ন্তমূখী। তবুও কথা হলো, ফুটলো পলাশ।
আকাইমা পোলা: এমন চঞ্চল পোলা, চশমা ফেটে বেরুবে কি চাঞ্চল্যের পোকা। আমাকে কামড় দিও তোমার দাতের ধারে কেটে যাক আধারের পর্দা আমার।
আশকারী রহমান: যদি বলি- বলো বন্ধু, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রটি কোথায়? নিশ্চিত জবাব তার হবে নিশ্চয়- বাংলাদেশের হৃদয়ে। বুঝুন, এমন আত্মম্ভরিতা তার- নিয়ে বাংলাদেশ।
জাহিদুল হাসান: স্মার্ট বয়। ফটোগ্রাফি তার হোক অক্ষয়। শোনেন বেশি, বলেন কম।
ইসমাঈল সিরাজী: কথা ও কাজে নিপুন।
আপাতত তোলা থাক- দূরন্ত জেসি, কৌশিক, শান্তির দেবদূত, তিতাস, আরজুপনী, ফারজুল আরেফিন ও লাস্ট সামুরাইসহ অন্যরা। রেহাই মিলবে না কারো।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
২৪/২/১২
মুঠোফোনে ধরা কয়েকটি মুহুর্ত।
Click This Link
আড্ডা নিয়ে অন্যদের পোস্ট
ব্লগ আড্ডার এলোমেলো ছবিব্লগ: জাহিদুল হাসান
Click This Link
২৪শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার ২০১২ বাংলা ব্লগের একটি মিলনমেলায় ব্লগার বন্ধুদের সাথে কিছু সুন্দর সময় সাথে ছবি ব্লগ: ইসমাঈল সিরাজী
Click This Link
আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার ২০১২ বাংলা ব্লগের একটি মিলনমেলায় ব্লগার বন্ধুদের সাথে কিছু সুন্দর সময় সাথে ছবি ব্লগ: আরজুপনি
Click This Link
গতকালের ব্লগ আড্ডা: নাহুয়াল মিথ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০৩