"হাদা" শব্দটা কে কখন আবিষ্কার করেছিলো আমার সঠিক জানা নেই।
"হাদা" কখন থেকে প্রচলিত হয়েছিলো তা ও সঠিক কোন তত্ত্ব আমার জানা নেই।
তবে এটা যে নিছক একটা কুসংস্কৃতির আওতাভুক্ত তা আমার কাছে পরিষ্কার।
"হাদা" আমাদের সিলেটের আঞ্চলিক শব্দ,কিন্তু সাধু ভাষায় কি বলে তা ও আমার জানা নেই।
শব্দটার সাথে আমাদের সিলেটের লোক খুবই পরিচিত।
কিন্তু এই শব্দটা মেয়ের মা বাবার কাছে আতংকের,কারনটা বিশেষত আমাদের সিলেটের সবার কাছে পরিষ্কার।
তবু ও বিষয়টাকে আমি ব্যাখ্যা করবো।
কারো যদি একটা মেয়ে জন্ম নেয় মোটামোটি খুশি,
যখন দুইটা মেয়ে জন্ম নেয় মুখে বলে রিযিকের মালিক আল্লাহ,কিন্তু ভিতরে ভিতরে অসন্তুষ্ট।
যখন পর পর তিনটা মেয়ে জন্ম নেয় তখন চিন্তায় চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
কেন??
কারন আমাদের কুসংস্কৃতি।
মা বাবা একটা কন্যা সন্তানকে সেই বাচ্ছা বয়স থেকে লালন পালন করে যখন প্রাপ্ত বয়সে রুপান্তরিত করে ৫/৬ লক্ষ টাকা খরচ করে স্বামীর সংসারে অর্পিত করে,তখন মা বাবা মনে করে আর যাই হোক অন্তত স্বসম্মানে মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিতে পারলাম।
কিন্তু এখানেই কি সমাপ্ত??
না!!!
মা বাবা যদি মনে করে এখানে সমাপ্ত তাহলে মেয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার সংসারের নিয়মিত সদস্য হয়ে যাবে।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন,
তার চেয়ে বেশী কঠিন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তার স্বামীর সংসার রক্ষা করা।
যেহেতু প্রসঙ্গটা "হাদা" নিয়ে তাই শুধু "হাদা নিয়েই বলবো।
মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর মেয়ের গর্ভের বাচ্চার বয়স যখন ৪/৫ মাস তখন মেয়ের বাবার চিন্তার শেষ নেই,কারন মেয়ের বাড়িতে "হাদা" দিতে হবে বাধ্যতামুলক।
অর্থাৎ কয়েক ধরনের পিঠা,নারিকেল,কলা আরো অনেক কিছু।
মেয়ের গর্ভের বাচ্চার বয়স যখন ৬/৭ মাস তখন মেয়ের বাবার চিন্তায় আরামের ঘুম হারাম,কারন বড় "হাদা" দিতে হবে।
অর্থাৎ মেয়ের স্বামীর ঘরে যতজন সদস্য আছে সবাইকে কাপড় চোপড় সহ মিষ্টি মিঠাই দিতে হবে বাধ্যতামুলক।
অপারগতায় মেয়েকে শুনতে হবে ইচ্ছেমত মুখের ধোলাই।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন মেয়ের বাবা এত ব্যায়বহুল খরচ বহন করতে হবে?????
মেয়ে জন্ম দেয়া কি পাপ???
ছোট থেকে লালন পালন করে এত টাকা খরচ করে স্বামীর সংসারে তুলে দিলো,তারপর প্রতিনিয়ত এটা ওটা দিতেই হচ্ছে।
আর্থিক দুরবস্থা সম্পন্ন একজন বাবা কেমন করে এত ব্যায়বহুল খরচ বহন করবে।
তাহলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা থেকে আমরা কম কিসে??
শুধুমাত্র ছেলের মা বাবার মুখ সমাজে উজ্জল করার জন্য মেয়ের মা বাবাকে আর্থিক এবং মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।
আমরা কি পারিনা এই বর্বর কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে???
অবশ্যই পারি এবং পারবো।
শুধু প্রয়োজন আমাদের সুস্থ মানসিকতা।
ছেলের বাবা হলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মনোভাব,আর মেয়ের বাবা হলে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মনোভাব।
এই মনোভাব আমাদের বর্জন করা অবশ্যই প্রয়োজন।
আপনার ছেলের বাচ্চা হবে খুশিতে আপনি (দাদা) পুরো গ্রাম মিষ্টি খাওয়াবেন,কিন্তু তা না করে উল্টো দুর্বলের উপর জুলুম করা হচ্ছে।
অবশ্যই অবশ্যই আমরা এমন কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তরুন প্রজন্মের প্রতি আমার উদার্ত আহ্বান সুন্দর সমাজ এবং সুন্দর সংস্কৃতি গঠনে তোমাদের ভুমিকা অপরিহার্য।
আসুন আমরা সবাই "হাদা" নামক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:২২