এখন সন্ধ্যা। কিছুক্ষন হলো অফিস থেকে ফিরেছি। তারপর ফ্রেস হয়ে এসে ফ্লাটের বেলকনিতে বসে আছি। লোহার গ্রিলের বাহিরে পুরো শহরটা দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে সবকিছু কেমন শান্ত অনুভুত হয়। দুরে সাপের মত রাস্তার ল্যাম্পপোষ্ট গুলো বড় মনোরম লাগে। লাল হলুদ বাতি জ্বালিয়ে আসা যাওয়া করছে শত শত গাড়ি। নবনি এসে দাড়াল আমার গা ঘেসে। হাতে চায়ের কাপ। আমি ওর হাত থেকে চা নিতে নিতে বললাম, একটা নাম ঠিক করেছি।
নবনি বলল, কি নাম?
' সুমর্মি। '
'এটা তো মেয়েদের নাম। কিন্তু যদি ছেলে হয়? '
' উহু, আমাদের মেয়েই হবে। তুমি দেখে নিও। '
' তুমি বসে বসে বুঝি এসব ভাবছো? '
' হুম, তবে আজ কেন জানি মবিনের কথা মনে পড়ছে। '
' মবিন আবার কে? '
' কেন তোমাকে বলিনি মবিনের কথা? '
' কই না তো। '
' ওহ, হবে হয়তো। আচ্ছা শোন,বলছি। মবিন আমার কলিগ ছিল। জুনিয়র। একটু বোকা, সহজ সরল বলতে যা বুঝাই আরকি। আরেকটু গাধা টাইপের। ওকে কোন কাজের জন্য বললে 'না' বলতো না। এই সুযোগে অফিসের সবাই ওকে সদ্বব্যবহার করতো।
কারো ফাইল আটকে আছে, অথবা ধরো কেউ কোন দরকারে বাহিরে যাচ্ছে, তাদের কাজ গুলো শিফট হয়ে যেত মবিনের টেবিলে। সেও মুখ গুঁজে ফাইল দেখে যেত।'
' এমন মানুষও আছে নাকি দুনিয়াতে? '
' হাহাহা। আরো শোননা। আমরা সবাই তখন কোম্পানির একোমন্ডেশনে থাকতাম। তো এই মবিন ব্যাটা বাসায় এসেও শান্তি পেত না। কারো জন্য বাজার করতে হতো, কারো সাথে শপিংয়ে যেত হতো, কারো টাকা মানিগ্রাম করতে হতো।
তোমাকে এসব বলছি কেন জানো? এই সহজ সরল মবিন একদিন এক দুঃসাহসী কাজ করে বসলো।
' কি কাজ? '
' সে একবার সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে গেল। ফিরে এসে আমাকে ডেকে বলল, বস একটা কাজ করে ফেলেছি।
আমি উৎকন্ঠিত হয়ে বললাম, কি করেছো মবিন?
সে বলল, বাড়িতে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি বস। এখন জানাজানি হবার পর আমার পরিবারের কেউ তো মানছেই না, তার উপর ওর ফেমেলি থেকে আমার নামে মামলা টুকে দিয়েছে। তাই ওকে নিয়ে ঢাকা পালিয়ে এসেছি।
আমি বললাম, ফেমেলিতে জানিয়ে করলেই পারতে।
সে বলল, ফেমেলি আগে থেকেই জানে। আসলে মেয়েটি আমার মামাতো বোন। আর আমার আব্বার সাথে মামার ঝগড়া। তাই কোনপক্ষই রাজি না। উপায় না দেখে.... '
' তারপর? '
' তারপর আমি ওকে নিয়ে আমাদের ম্যানেজারের কাছে গেলাম। অনেক বলে কয়ে ওদের জন্য একটা ফেমেলি ফ্লাট বরাদ্ধ করিয়ে নিলাম। '
' ওরা কি এখনো সেখানেই আছে? আমাকে নিয়ে চলোনা। দেখা করবো। '
' আরে নাহ পাগলি। ওরা সেই ফ্লাটে ছিল পাচঁ-ছ'মাস। তারপর দুজনের ফেমেলি ওদের মেনে নিল। আবার অনুষ্টান করে বরণ করে নিল। তবু এতো কিছুর পরেও মবিন ছেলেটার জীবনে একটা অপুর্নতা রয়ে গিয়েছিল। '
' কি সেটা? '
' ওরা কোনদিন বাবা-মা হতে পারেনি। '
' কেন, কারো সমস্যা ছিল নাকি? '
' নাহ, ফিজিক্যালি ওরা ফিট ছিল। বিয়ের পরের বছরই মেয়েটি সন্তান সম্ভবা হয়। গ্রামে নাকি নিয়ম আছে - মেয়ের প্রথম সন্তান প্রসব বাপের বাড়িতে হতে হয়। তাই প্রসবের কয়েকদিন আগে বাপের বাড়িতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে গাড়ি এক্সিডেন্ট করলো। মেয়েটিকে তড়িগড়ি করে একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেল। ডাক্তাররা অপারেশন করে মৃত সন্তান বের করল। কাজের কাজ যেটা হলো, অপারেশন করার সময় ডাক্তার নাকি ভুল করে গর্ভাশয় কেটে ফেলে দিয়েছিল।'
' ইশশ....'
' মবিন অবশ্য অনেক চেষ্টা তদবির করেছে। অনেক টাকা পয়সা জমিয়ে একবার মাদ্রাজ নিয়ে গেল। কিন্তু কোন ফল হয়নি। ওদিকে সন্তান না হওয়ায় মবিনের পরিবার তার স্ত্রীর উপর মেন্টাল টর্চার করতে থাকে। মবিনকে বুঝিয়ে বললাম, এই সময় তোমার উচিত মেয়েটির পাশে থাকা। সেও বুঝতে পারল। এরপর সে চাকরি বাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। '
' আহারে কি কষ্ট ওদের, তাই না। আচ্ছা তুমি এসব আমাকে ভয় দেখাবার জন্য শোনাচ্ছ নাতো ?'
' আরে নাহ। উল্টো তোমাকে ইন্সফিয়ার করার জন্য শোনালাম। '
' কেমন? '
' আহা দেখছো না, আল্লাহ চাইলে কাউকে ছেলে দেন, আবার কাউকে মেয়ে। কাউকে ছেলে মেয়ে দুটোয় দেন, আবার মবিনের মত কাউকে কিছুই দেন না। সুতারাং, তোমার টেনশনের কিছু নেই। ব্যাস আল্লাহর উপর ভরষা করো। যা হবার হবে। '
' হুমম। '
' তোমার সাথে বকবক করতে করতে সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে। যাওনা লক্ষীটি একটা সিগারেট এনে দাও। '
' উহু, তোমাকে না বলেছি ঘরে সিগারেট খেলে আমার কষ্ট হয়। আর আমার কষ্ট হলে আমাদের বেবীরও কষ্ট হবে। '
' ওহহ তাইতো। আচ্ছা একটু কাছে আসোতো। তোমার পেটে কান পেতে দেখি বেবীটা এখন কি করছে? '
' তোমার ছেলেমানুষী ছুতো দেখলে হাসি পায়। হেহেহে।'
' আমি আবার কি ছুতো ধরলাম? '
' এই যে বেবীর কথা বলে তুমি আমাকে স্পর্শ করতে চাইছো। আমি কি তোমাকে বুঝি না? '
' হা হা হা। ইদানিং তোমার দেখি অনেক বুদ্ধি হয়েছে। '
' কেন আগে বোকা ছিলাম নাকি? '
' তাতো ছিলেই। সেটা আবার বলা লাগে নাকি। '
' তাই না। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা......।'
' এইইইই পাগলি, এই কি করছো, আহা চুল ছিঁড়ছ কেনো। আরে আমার চুলে তোমার কি ক্ষতি করল। '
' তুমি আমাকে বোকা বললে। আজ তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে......'
' উফফ.... এতো বড় বড় ঘুসি দিলে তো আমি মরেই যাবো। তখন আদর করবে কাকে শুনি... '
' ইশশ, তোমাকে আদর করতে আমার বয়ে গেছে। হুহ।........ '
লিখেছেন: : আহমাদ মোস্তাফা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


