somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ক্রিকেট

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮-ই মার্চ,২০১২, রবিবার। মীরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ। এশিয়া কাপের পঞ্চম ম্যাচ। অথচ নড়েচড়ে বসেছি আমরা বাংলাদেশীরা। সমীকরণটা এমন যে যদি পাকিস্তান জিতে তাহলে বাংলাদেশ সরাসরি ফাইনালে, আর যদি ইন্ডিয়া জিতে তাহলে আমাদের পরের ম্যাচে জিততে হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আমার সারা ক্রিকেট জীবনে পাকিস্তানের সাথে যাদের ই খেলা পড়েছে সবসময় চেয়েছি পাকিস্তান হারুক। এদের হারতে দেখলে ৭১ এ আমার পূর্বসুরীরা যেরকম আনন্দ পেয়েছিল তেমন আনন্দ পাই। আর এখানে যেহেতু আমাদের শ্রীলঙ্কার সাথে সুযোগ আছে তাই এই ম্যাচে কে হারল জিতল তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা নিজেদের যোগ্যতাতেই ফাইনালে যাব, অন্তত পাকিস্তানের সহযোগীতায় না। বাংলাদেশ ফাইনালে গিয়েছিল, বীরদর্পে পরের ম্যাচ এ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে।

২২ মার্চ দিবা-রাত্রির ফাইনাল ম্যাচ। বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান। মাঠে গিয়ে দেখার জন্য অনেক খুঁজেও টিকেট পেলাম না। ইচ্ছা হল নিজেরাই বুয়েট ক্যাফের সামনে বড় স্ক্রিন এ খেলা দেখার ব্যাবস্হ্যা করব। খেলা শুরু ২ টায়। অনেকখানি সময় হাতে নিয়ে সামিন ভাইয়া, ফারিগ ভাইয়া, সাগর, সিরাত, শিব্বীরসহ বন্ধুরা মিলে কাজ শুরু করলাম। সামিন ভাইয়া আর ফারিগ ভাইয়া সেদিন প্রজেক্টরের স্ক্রীন এর জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ী করেছেন। শেষ পর্যন্ত স্ক্রীন না পেয়ে ব্যানার এর সাদা কাপড়ের ব্যাবস্হা হল। ক্যাফে তে ডিশ ছিল না। বিটিভি তে এই সিরিজ দেখিয়েছিল। তাই একটা এন্টেনা হলেই চলে। চানখারপুল আর স্টেডিয়াম দৌড়াদৌড়ি করে এন্টেনার ব্যাবস্হা হল। প্রজেক্টর বসানো হল অডিটরিয়াম এর সামনে। আরেক সমস্যায় দেখা গেল। অডিটরিয়াম বন্ধ আর ক্যাফে থেকে অডিটোরিয়াম অনেকখানি দূর। বাড়তি পাওয়ার ক্যাবল বানিয়ে আনা হল। তাও হল না। পড়ে হল থেকে বন্ধুদের মাল্টিপ্লাগ এনে জোড়াতালি দিয়ে পাওয়ার পাওয়া গেল। পড়ে অবশ্য অডিটোরিয়াম থেকেই পাওয়ার পাওয়া গিয়েছিল। হল থেকে আনা হল তাসনিম এর পিসি। অনেক দৌড়ঝাপ এর পর খেলা দেখা শুরু হল।

খেলার শুরুতেই মাশরাফী আর নাজমুলের হাত থেকে আগুন ঝড়ছে। এরপর রাজ্জাক আর সাকিবের কোনঠাসা করা বোলিং। কখনই বাংলাদেশকে মনে হয়নি তারা পিছিয়ে আছে। শুধু শেষ ওভারটিতে নো-ফ্রিহিট মিলিয়ে শাহাদাতের ১৮ রানের ওভারটি গলার কাটা হয়ে বিধে রইল। তারপরো ২১৮ রানের টার্গেটটা নতুন চেনা বাংলাদেশ এর কাছে নেহাতই ছোট মনে হচ্ছিল। ইনিংসের শুরুতে তামিমের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং এ মনেই হচ্ছিল ঠিক পথেই আছি আমরা যদিও অপর প্রান্তে নাজিমুদ্দিনকে বেশী ই ঠান্ডা মনে হচ্ছিল, মোটামোটি বরফ-৫২ বলে ১৬ রান। ৬০ রানে হঠাত তামিমের বিদায়ে কিছুটা বাজ পড়লেও পরে সাকিব আর নাসিরের ব্যাটিং এ আমরা আবার জেগে উঠলাম। জয়টাকে নিছক এ যখন সময় এর ব্যাপার মনে হচ্ছিল ঠিক ওখান থেকেই সাকিব-নাসিরের বিদায়। শেষদিকে মাশরাফি এসে ৯ বলে ১৮ রানের ইনিংস খেলে আবারো জয়টাকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসল।

অডিটোরিয়ামের সামনে তখন এক ঘোড় লাগা পরিবেশ। ঘোড় বললে ভুল হবে আসলে, আমরা সবাই তখন অন্য জগতের বাসিন্দা। দাঁড়িয়ে আছি না বসে আছি না শুয়ে আছি মাথায় কিছু নাই। মাথা সব ফাঁকা। হাতের নখ কোথায় যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নাই। অসংখ্যবার দোয়া পড়েছি। শেষ ওভারে ৬ বলে দরকার ৯ রান। ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ আর রাজ্জাক। মাহমুদুল্লাহ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান আর রাজ্জাক বোলার যিনি মাঝে মাঝে চোখ বুজে ছয় মারেন। এই রান কিছুই না।
না শেষ পর্যন্ত জিতিনি আমরা। মহাকাব্বিক শেষ ওভারের শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৪ রান। ওভারের পঞ্ছম বলে রাজ্জাক আউট হয়ে এটাকে ১ বলে ৪ রানের সমীকরনে নিয়ে গেলেন। শেষ স্ট্রাইক এ শাহাদাত। লেগ বাই ১ নিয়েছিল আর আমরা হেরেছিলাম ২ রানে। অডিটোরিয়ামের সামনে তখন আমার সবচাইতে শক্ত বন্ধুটির চোখ পানিতে চিকচিক করছে, কারও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, ফুটবল পাগল বন্ধুটি প্রথমবারের মত খেলা দেখতে এসেছে আর খেলা শেষ এ কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে, কেউ বসে পড়েছে, কারও মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় হচ্ছে না।

আমরা বাঙ্গালীরা আবেগী। আমরা ক্রিকেট খাই, ক্রিকেট দাই, ক্রিকেটে ঘুমাই। ক্রিকেট আমাদের হাসায়-কাঁদায়, চিৎকার করতে শেখায়, আমাদের স্বপ্ন দেখায়, কখনো স্বপ্ন ভঙ্গের কারন হয়। আজকে হয়তো আমাদের ক্রিকেট এর আরেক ইতিহাস রচনা হবে। আজকেও আমরা আবেগী হয়ে যাব। ভালবাসায় আবেগ তো থাকবেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×