তোমার ডান চোখের সামনে দোল খাওয়া অবাধ্য চুল গুলো এখনো অবাধ্য ই রয়েগেছে দেখছি । কিছুক্ষণ পরপর যখন তুমি তোমার বাধ্য অঙ্গুলির স্পর্শে অবাধ্য চুল গুলোকে বাধ্য করার চেষ্টা কর তখন তোমার গালের টোল দুখানা সেই আগের মতই চোখে পরে । অনেকদিন পর, হু ,অনেক দিন, প্রায় চার বছর পর তোমার সাথে দেখা আজ । আজ সকালে ঘুমের মাঝে মুঠোফোনে unknown নাম্বারের কল রিসিভ করতেই কণ্ঠ্যটি খুব চেনা মনে হল । জানিনা এতদিন পর কেন তুমি চোখের সামনে এলে ।
এইতো সেই চোখ,যে চোখে অপলক তাকিয়ে থেকেছি কত মুহূর্ত,পল-অনুপল,ক্ষণ-অনুক্ষণ । কিন্তু আজ কেন অপলক তাকাতে পারছিনা ? পারছোনা তুমিও আমার চোখের দিকে তাকাতে। আগের মত যদি চোখে চোখ রাখা খেলা খেলি তবে হয়তো দুজনেই হেরে যাব ।
মনে আছে,প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলেম ? হঠাত এই অচেনা আমি তোমাকে গিয়ে বললাম,
‘‘আপনার উপরের পাটির তিন নাম্বার কেনাইন দাঁতটির প্রেমে পরে গেছি আমি ।’’ এটা বলার পর অনেক্ষণ তুমি আমার দিকে বোকার মত তাকিয়ে ছিলে । কিন্তু আজ কোনোভাবেই তাকাতে পারছনা কেন ?
তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছ জানিনা । হয়তো ভাবছ আমি কেন তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা? মনে আছে,একবার তোমার হাত কেটে গেল ? ডাক্তার যখন তোমার হাত সেলাই করছিল তখন তুমি কাঁদনি । কিন্তু তোমার হাতে সেলাই করা দেখে আমার চোখে জল এসেছিল । মজার বেপার হল আমার চোখে জল দেখে তুমিই কেঁদেফেলেছিলে ।
লজ্জা পেলে তোমাকে কেমন দেখাতো খুব মনে পরছে। লজ্জা পেলে তুমি তোমার লজ্জা আমার চোখের আড়াল করতে চাইতে। আমি তোমার লজ্জার সৌন্দয উপভোগ করার জন্য না দেখার ভান করতাম। হঠাত করে বুঝিয়ে দিতাম যে আমি বুঝতে পারছি। তখন তুমি লজ্জায় লাল হয়ে আমার বুকে মুখ লুকাতে। বুক থেকে মুখখানা তুলে দুহাতে ধরে তোমার লাজুক চোখ দুটোতে আমি চোখ বুলাতাম অবলীলায়।
তুমি আমি পাশা পাশি বসে আছি অনেক্ষণ ,কিন্তু কেউ কিছুই বলছিনা। আমাদের সামনে বসে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা বসে ফুচকা খাচেছ। তোমার কি মনে পরে ,তুমি আমি একদিন আইছক্রিম খাচিছলাম পার্কে বসে,বাচ্চাদের মত। এমন সময় আমার কয়েকটা মেয়ে স্টুডেন্ট এসে তোমাকে বলল,‘‘আসসালামুআলাইকুম ম্যাডাম।’’ ঐ মুহুরতে তোমার লজ্জা আর রাগ মিশ্রিত চেহারাটা আমার আজো চোখে ভাসছে।
আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া শুভ্র মেঘের মিছিল। মনে আছে,এমনি এক মেঘলা দিনে তোমাদের বাড়ির ছাঁদে তুমি আমাকে ওয়েস্টার্ন ড্যান্স শিখাচিছলে। আমার হাত ধরে তুমি ঘুরে ঘুরে দূর থেকে এসে যখনি কাছে আসবে,আমাকে বলেছিলে আমার হাতটি এমন ভাবে রাখতে যেন তুমি ঘুরে ঘুরে এসে আমার হাতের উপর হেলান দিয়ে শুয়ে পরতে পার,আর আমি যেন তখন ঠিক তোমার ঠোঁটের কাছে গিয়ে পরি। তুমি কয়েকবার আমাকে শিখিয়েও দিয়েছিলে,কিন্তু আমি এমন উলটা পাল্টা করে ফেললাম যে তুমি হাসতে হাসতে আমার কোলে এসে পরলে,ঠিক আমার ঠোঁটের কাছে। এইতো তোমার সেই ঠোঁট আমি দূর থেকে দেখতে পাচিছ,হয়ত সেই আগের মত স্পর্শ করার অধিকার এখন আর নেই। কিন্তু অনুভব করতে পারছি তোমার ঠোঁটের সেই স্পর্শ। ছোট্ট,বদ্ধ,অন্ধকার কক্ষে তোমার চোখের ভালবাসার স্ফুলিঙ্গ আর ঠোঁটের মায়াবি স্পর্শ আমি এখনো অনুভব করি আমার প্রতিটি শিরা উপশিরায়। সেই তুমি সেই তখন মিশেগিয়েছিলে আমার আস্তিত্তে,আমার রক্তের লোহিত,শ্বেত কনিকা আর অনুচক্রিকায়।
কখনো ভাবিনি তোমাকে ছাড়া আমার আর আমাকে ছাড়া তোমার অস্তিত্ত সম্ভব। কিন্তু মিথ্যে নয় যে,আমরা এখনো অস্তিত্ত নিয়েই বেঁচে আছি। আবার এও সত্য যে,হয়ত তুমি জাননা,আমি বেঁচে আছি কিন্তু আমার মনের অণুগুলো ভেঙ্গে গিয়ে ইলেকট্রন,প্রোটন,নিউট্রন হয়ে ভাসছে বাতাসে ।
তুমি আমি পাশাপাশি বসে আছি,দুজনেই চুপ। কেউ কাউকে বুঝতে না দিলেও দুজনের মনের ভেতরেই হচ্ছে রক্তক্ষরণ। অথচ ভেবে দেখ , সেই তখন দুঃখ-কষ্ট,রাগ, মান-অভিমান জমে পাহার হওয়ার আগেই চোখে চোখে ভাগা ভাগি করে নিয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে নিতাম বুকে। আর সকল মান অভিমান ভেসে যেত মায়াবি চুম্বনে। মান অভিমানের গভীরতা যত বেশি হতো আমরাও হারিয়ে যেতাম চুম্বনের তত প্রগাঢ় ভালবাসায়। কাঠ পুড়ে যেমন ছাই হয়,তেমনি মান অভিমান গুলো পুড়ে চোখের জল হয়ে ধরা দিত দুজনের চোখেই। আর সেই জলে ভেসে যাওয়ার ভয়ে দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরতাম বুকে, ঠোঁটে। কিন্তু কি অদ্ভুত,আজ কেউ কারো মান অভিমানকে পুড়াতে চাচিছনা।
মনে আছে,তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করতাম মাঝে মাঝে, ‘‘কোনটা চাউ,আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি,নাকি তুমি আমাকে বেশি ভালোবাসো? অর্থাৎ কে বেশি ভালবাসতে পারে সেই কম্পিটিশনে হারতে চাউ নাকি জিততে চাউ?’’ তুমি উত্তর দিতে,‘‘জিততে চাই।’’ তাহলে আজ কেন জিততে চাইছোনা? আজ একটিবার আমার চোখের দিকে তুমি তাকাচছনা কেন? তুমি অবশ্য আগে থেকেই খুব লাজুক ছিলে। প্রথম যেদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি’’ সেদিন তুমি আমার চোখের দিকে তাকাতে পারনি ,বলতে পারনি ‘‘ভালবাসি’’। কিন্তু অবাক হয়েছিলাম যখন তুমি চলে যাওয়ার পর আমার শাটের বুকপকেটে একটি চিরকুটে লিখা পেলাম ‘‘আমিও তোমাকে ভালবাসি।’’
অনেক্ষণ দুজন কথাহীন বসে আছি। হঠাত তুমি বললে,‘‘আচ্ছা,আজ তাহলে আসি। তুমি ভাল থেকো’’ এই বলে আমার চোখের দিকে তোমার অশ্রুভেজা চোখের এক দৃষ্টি দিয়ে তুমি রিক্সায় উঠেগেলে। আমার চোখ ভিজে যায়নি,কিন্তু মনের ভেতরে খুব বৃষ্টি হচিছল। ভাবছি কেউ কারও চোখের দিকে চেয়ে চোখের জলে কেন পুড়িয়ে দিলাম না অভিমানগুলো? তুমি কেন একটিবার অধিকার নিয়ে তাকালেনা আমার চোখের দিকে? তোমার প্রতি খুব রাগ হহ্ছে। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে অভিমান করে রিসিভ কল লিস্ট থেকে ডিলিট করে দিলাম তোমার নতুন নাম্বারটি। হাটতে থাকলাম আকাশের দিকে চেয়ে।
মোবাইলটি বুক পকেটে রাখতে গিয়ে দেখি একটি চিরকুটে লিখা,‘‘আজ এই দিনে তুমি আমাকে প্রথম বলেছিলে আমি তোমাকে ভালবাসি। আজ একটিবার কি পারতেনা বলতে?’’
ওহ,শিট,আজ সেই দিন,আমার তো মনেই নেই। এখন আমি কোথায় পাব ওকে? ওর নতুন নাম্বারটা তো দিলাম ডিলিট করে,আর ওদের নতুন ঠিকানাও তো জানিনা। আবার ও কি অপেক্ষায় থাকতে হবে চারটি বছর,ঠিক এই দিনটার (২৯শে ফেব্রুয়ারি) জন্য?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




