somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যান্ডউইথ বিক্রির পাঁয়তারা এবং বাংলাদেশের আইসিটির ভবিষ্যৎ

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেটের চাহিদার পূরণে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনবে ভারত। ১০০ গিগাবাইট ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ কেনার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। বিটিসিএল এবং বিএসসিসিএল ভারতের বিএসএনএলের সঙ্গে ১০ থেকে ২০ বছরের চুক্তি করবে। বাংলাদেশকে ব্যান্ডউইথের দাম হিসেবে বার্ষিক এক কোটি ডলার খরচ করতে হবে ভারতকে।"

আমি একজন ব্যাক্তিগত জীবনে একজন তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক। ব্যন্ডউইথের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সামান্য, যৎসামান্য জ্ঞানও যদি আমার থাকে তাহলে আমি বলে পারি বাংলাদেশ একটি হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো কিভাবে?

আগে জানা দরকার বাংলাদেশে কতটুকু ব্যান্ডউইথ আসছে। বাংলাদেশ বর্তমানে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক (সি-মি-উই-৪) গেটওয়ে দিয়ে ১৬৪.৪ জিবিপিএস পাচ্ছে। যার ৭ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ মাত্র ২২ জিবিপিএস আমরা ব্যবহার করতে পারছি অবকাঠামোর অপ্রতুলতার জন্য। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩ কোটির উপর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে যা ক্রমোবর্ধমান। ২০২০ সাল নাগাদ বর্তমানে প্রাপ্ত ব্যান্ডউইথের থেকে আরো বেশি ব্যান্ডউইথের প্রয়োজনীতার কথা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না কোন মতেই। আর ব্যান্ডউইথ সংরক্ষন করা যায় না, যা প্রতি সেকেন্ডে অপচয় হচ্ছে, তা পুনঃব্যবহার করা সম্ভব না।

তাহলে কি করণীয়?

এই মূহুর্তে যা করা দরকার দেশের বা দেশের বাইরে অবস্থানরত খ্যাতিমান প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে একত্র করে আলোচনা করা যেতে পারে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের। তার আগেই ভিনদেশে আমলাতান্ত্রিক প্যাঁচে ব্যান্ডউইথ রফতানী কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। ভারত শুধু এই ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথই নয়, তার পশ্চাৎপদ প্রদেশগুলোর জন্য (যা সেভেন সিস্টারস নামে পরিচিত ) আরো ৫ জিবিপিএস বরাদ্দের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এয়ারটেল ইতিমধ্যে এ সম্পর্কিত অবকাঠামো তৈরীর উদ্যেগ গ্রহন করেছে। ইন্টারনেটের এই চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০ বছরের জন্য ভারতকে ব্যান্ডউইথ লীজ দেয়া অপরিপক্ক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই বলা যাচ্ছে না। ইতিপূর্বে ১৯৯৩ সালে সিমিউই-৩ এ সংযুক্ত না হয়ে যে ভুল আমরা করেছি, এখন আবার সেই রকমই আরেকটি ভুল করতে চলেছি।

ভারত যুক্ত ১০ টি সাবমেরিন ক্যবল আছে, আরো ৩টি সংযুক্ত হবার অপেক্ষায় আছে। দক্ষিন কোরিয়ায় ১১টি সাবমেরিন ক্যাবলের ২৫০০০ (পচিশ হাজার) জিবিপিএস ব্যন্ডউইথ ব্যবহার করছে। যেখানে প্রতিটি দেশে প্রতিদিন ব্যান্ডউইথ বাড়ানো চেষ্টায় আছে, সেখানে আমরা উল্টা পথে হাঁটছি। আমরা যদি ২০ বছরে জন্য চুক্তিও করি, আমি বুঝতে পারি তা প্রত্যাহার করার কোন শর্ত আমাদের আমলারা রাখবে না। এখন আইসিটির উন্নয়নের ফলে আগামী ৫ বছরেই বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নত করা যাবে না, এই কথা কেউ বলতে পারেনা। সেক্ষেত্রে আমাদের হয় তো আরো বেশি মূল্য দিয়েই অন্যভাবে ব্যান্ডউইথ আনতে হবে।

আমদের কি করণীয়?

আমাদের দেশের, এমন কি সরকার পর্যায় বদ্ধমূল ধারণা যে ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখাতে। কিন্তু যা সত্য নয়। বর্তমানে ব্লগ এসে এই ধারণা কে পরিবর্তণ করলেও, এখন ইন্টারনেট ব্লগিং প্লাটফর্ম এবং ফেসবুক হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। একথা সত্য যে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্য ফেসবুকিং, কিন্তু এত স্বল্প গতিতে ফেসবুক লোড করা ছাড়া কিছু আশাও করা যায় না। বর্তমানে ভিডিও লেকাচারিং এর জয়জয়কার সর্বত্র। শিক্ষক.কম , খান একাডেমী এদের মানসম্পন্ন মাল্টিমিডিয়া লেকচার যে কোন তরুন-তরুনীকে স্বশিক্ষিত হতে উদ্ভুদ্ধু করতে পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যন্ডউইথ সরকার দিতে পেরেছে কি? তাহলে সরকার একটি আইসিটি জেনারেশন কি করে আশা করতে পারে? আমাদের নিজেদেরই এই ব্যপারে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের সরকারকে বুঝাতে হবে ইন্টারনেট শুধুই এখন বিনোদন বা কল সেণ্টার ভিত্তিক নয় বরং ফ্রিল্যান্সিং, তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষা দান প্রভৃতিতে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীতা অনেক। তবে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কিছুই সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি। তাঁরা যদি এই বিষয়ে এখন চুপ থাকে, পরে এই ভুল শোধরানো হয়তো সম্ভবপর হবে না। আমি আশা করবো তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন

ফেসবুক লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×