১, মাদ্রাসার ছেলেরা ( যারা কোরআন পড়ছে এবং হেফজ করছে অথবা কোরআন -এ তাফসির ) তাদেরকে আমাদের বাংলাদেশে অর্থনৈতিক একটা মাপকাঠিতে মাপার চিন্তা ভাবনা অনেকেই করছেন যা ইদানিং আমিও ভাবছিলাম। এখানে আমার কিছু ভাবনা রয়েছে।
• যেসব শিক্ষক বাংলা বা ইংরেজি পড়াচ্ছেন তারা উৎপাদন ভিত্তিক কোনও খাতে কি জড়িত আছেন , অবশ্যই না, বরং আমি জীবনে আমি যত শিক্ষকদের কাছে পরেছি( স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়) সবাই একটা বিষয় পড়ানোর জন্য এত টাকা নিতেন ( একসাথে এক ব্যাচ এ ৩০ জন ) সপ্তাহে তিন দিন দের ঘণ্টা করে প্রতি ক্লাস। এভাবে সকাল বিকাল তিনটা ব্যাচ তিন দিন , বাকি তিনটা ব্যাচ বাকি তিন দিনে। তিন তিরিশে নব্বই হাজার করে ছয় ব্যাচে এক লাখ আশি হাজার। কলেজ এর বেতনের কথা বাদ দিলাম। আমার এই হিসাব কোন কল্পিত হিসাব নয়, গভ ল্যাবরেটরি , ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, সিটি কলেজ ইত্যাদির এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। একবার ভাবুন দুই লাখ টাকা খুব সহজেই পকেটস্থ, বাংলাদেশে ব্যবসা বাদে আর এই পরিমান টাকা মাসে কামানোর চাকরি খুবই কম সংখ্যক। এরা উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করছে না কিন্তু টাকার অঙ্কটা একবার বিবেচনা করুন। পৃথিবীর আর কোন দেশে এই ভাবে বাড়তি পড়িয়ে টাকা কামানোর সুযোগ বা নিয়ম আছে কি? থাকলে জানতে চাই। শিক্ষকদের উপর পুরোপুরি সম্মান রেখেই আমি আজ বলছি সব বাবা মা কি সমানভাবে টাকার যোগান দিতে পারে? এরকম উদাহরন বেশি যেখানে বাবা যা ইনকাম করছে তা দিচ্ছে তার চাইতে দশ গুন বেশি টাকা কামানো তার সন্তানের শিক্ষককে। আমি স্কুল এ থাকতে দেখেছি শিক্ষকদেরকে মাসিক বেতনের টাকার জন্য আমার সহপাঠীদের বেত দিয়ে মারতে- যাক সেসব কথা, তাদের সেই মার আমাদের জন্য আশীর্বাদ বলেই আমি এখনও ভাবি। আল্লাহ তাদের ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন। কিছু প্রাইমারি স্কুল ছাড়া এখন আর সেই অনেক দিন আগের পড়া পণ্ডিত মশাইদের জীবন নেই যে নিজের বেতন তুলনা করেছিল এক সাহেবের তিন পা ওয়ালা কুকুরের সাথে। ইংরেজি মাধ্যম বাদই দিলাম যেগুলো বাংলা ইংলিশ মিলানো স্কুল সেখানেও এটা সিউর লেখাপড়া এখন আর বাংলালিংক দামে নাই!
• একজন কোরআনে হাফেজ কত টাকা বেতনে সপ্তাহে ছয় দিন কোরআন শিক্ষা দিয়ে থাকেন বাসায় এসে, তা আর এখানে আমি আলোচনা করব না । আমার প্রশ্ন এখানে নয়, আমার কথা হচ্ছে , ইংরেজি শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষার জন্য, খুব ভাল কথা, কিন্তু তারা যাতে এটা শিখে কোন কাজে লাগতে পারে সেজন্য – এখানেই আমার আপত্তি, তারা কি কাজ করবে, তারা শুধু শিক্ষক থাকুক, যেমন রয়েছে আমাদের বাংলা ইংরেজির অনেক শিক্ষক, এবং তাদের বেতন আরও ভাল করা হউক – আরও অনেকে সেক্ষেত্রে পড়তে চাইবেন, এছাড়া যেহেতু এটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, ইসলামের ইতিহাস এবং আরবি ভাষা সম্পর্কিত আরও কিছু বিষয় রাখা হউক মুল কারিকুলামের পাশাপাশি । এতে ইসলাম সম্পর্কে আমাদের এই প্রজন্মের যে বোঝার কমতি তা দূর হবে এবং একটা সমতা বিধান হবে, মাদরাসা শিক্ষাকে আরও উন্নত করা হউক কিন্তু তাদেরকে আলো ছড়াতে তৈরি করা হতে পারে। সবাই কি নৌকা টানে, কারও না কারোর তো আলো জ্বালাতে হয়, পথ দেখাতে হয়, তারা হতে পারেন আমাদের পাঞ্জেরী।
• যারা কোরআনে হাফেজ, তাদের প্রতিনিয়ত এটা চর্চা করতে হয় , পড়তে হয়, যারা তাফসির সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ তাদেরও লেখাপড়া করতে হয় এবং তা অনেক। এই কাজ বাদ দিয়ে যদি তারা অফিস আদালতে কাজ শুরু করেন , তারা কি তাদের শিক্ষা ধরে রাখতে পারবেন, এক্ষেত্রে এটা ডান বাম কিছুই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন অতিমাত্রায় উৎসাহী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য, কোথায় তাদের নিজেদের লেখাপড়া , কোথায় গবেষণা। মানি ইজ ম্যাটার , ডিয়ার। এখন পড়াশুনার মান কোথায় নেমেছে এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া) তা আমরা জানি।
• ইংরেজি একটা ভাষা মাত্র, এটা শিখে আরেকজনকে নাক সিটকানোর কিছু নাই, আমরা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল তাই আমরা আরেকজনের ভাষা শিখছি। ,কোরিয়া , জাপান ফ্রান্স বা সাউথ আমেরিকায় যাইয়া ইংরেজি বলেন,টের পাইবেন। ভাষা শিখা দরকার প্রয়োজনে, এটা শিখে মানসিক উন্নতি হয় না , মানসিক উন্নতির জন্য মূল্যবোধের উন্নতির দরকার যার জন্য জানা প্রয়োজন নিজেকে ??
• সময় এখন আরেকজনকে বোঝার , তাকে তাচ্ছিল্য করা নয়, বোঝার চেষ্টা করুন তাকে , তার কাজকে , তার মূল্যবোধকে, তার শিক্ষাকে , এখনই ভাবুন , আপনার এবং আরেকজনের লক্ষ্য কি ভাবুন। এখন ক্রান্তিকাল , হুট করে আরেকজনকে গালি না দিয়ে , বোঝার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের সময় খুব কম, এত এত প্রতিযোগিতার মাঝে পরে মাঝে মাঝে কি মনে হয় না সব অনর্থক, মনে হয় না সোনালি ডানার চিল হয়ে ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে উড়ে বেড়ানোই আমার জীবনের উদ্দেশ্য, এত ছোট জীবনে অনেক বেশি কিছু কি আপনি শেষ করতে পারেন !!