আঠারো শতকে অন্ধদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল ব্রেইল প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পড়ালেখার সুযোগ পান। ১৮২১ সালে লুই ব্রেইল নামের ফ্রান্সের একজন প্রতিবন্ধী এ মাধ্যম উদ্ভাবন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত ব্রেইলকে পরে কম্পিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলা ভাষায়ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সফটওয়্যার রয়েছে।
কাজ করছে ইপসা
২০০৫ সাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আইসিটি অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার অন ডিজ-অ্যাবিলিটি বা আইআরডিসি নামে একটি উদ্ভাবনীমূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে 'ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন' বা 'ইপসা'। প্রতিবন্ধীরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সমানভাবে পায়, সে লক্ষ্যে জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ডিজিটাল অ্যাকসেসেবল ইনফরমেশন সিস্টেম-ডেইজির সহযোগী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে তারা কাজ করছে। ইপসার প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান জানান, ইপসা থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশ প্রতিবন্ধী তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তবে বাংলায় স্ক্রিনরিডিংসহ ব্রেইল সফটওয়্যার খুব বেশি না থাকায় মাঝেমধ্যে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। বাংলা স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার থাকলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অন্যদের মতো সমান দক্ষতায় কম্পিউটার চালাতে পারত।
মঙ্গলদীপ ও সুবচন
'মঙ্গলদীপ' হলো একটি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার ও 'সুবচন' হলো টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা সফটওয়্যার দুটি তৈরি করেছেন। 'মঙ্গলদীপ' ইংরেজি ও 'সুবচন' বাংলা ভাষায় কার্যকর। এ দুটি সফটওয়্যারকে সমন্বয় করে একটি স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে কম্পিউটার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধীরা বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন। মূলত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে ত্বরান্বিত করার জন্য সফটওয়্যার দুুটি তৈরি করা হয়েছে বলে নির্মাতারা জানিয়েছেন।
বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল ট্রান্সলেশন সিস্টেম
বেসিসের আয়োজনে গত আইটি ইনোভেশন সার্চ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় 'বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল ট্রান্সলেশন সিস্টেম' সফটওয়্যার। এর অন্যতম নির্মাতা এফ এম মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, সাধারণ এবং অন্ধ মানুষের মাঝে শিক্ষার ব্যবধান কমাতে ব্রেইল সিস্টেমের বিকল্প নেই। বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল ট্রান্সলেশন সিস্টেমটি বাংলা ডকুমেন্টকে ব্রেইলে অনুবাদ করবে। এতে জাভা প্রোগ্রাম ব্যবহৃত হয়েছে। সফটওয়্যারটি ব্যবহার সহজ, স্বাধীন ও ইউনিকোড সমর্থিত। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলা ই-বুককে বাংলা ব্রেইলে অনুবাদ করতে পারে। এখন পর্যন্ত তৈরি হওয়া বাংলা অনুবাদক সফটওয়্যারের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি নির্ভুল অনুবাদ করে।
কথা : বাংলা টিটিএস
'কথা' হলো ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করার প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যার। একে টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার বলা হয়। সফটওয়্যারটি যেকোনো স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারের সঙ্গে কাজ করতে পারে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর রিসার্চ অব বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং' এটি তৈরি করেছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন ফিরোজ আলম। 'কথা'র ব্যবহার একটু জটিল হলেও এটি দিয়ে ভয়েস রেসপন্স, টকিং বুক, টেলিসেন্টারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। যদিও এটি রোবটিক ভাষায় কথা বলে, তবু এর থেকে বের হওয়া কথা প্রায় সবাই বুঝতে পারে। সফটওয়্যারটি ২০১০ সালে 'ই-কনটেন্ট অ্যান্ড আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট কনটেস্ট'-এ ফাইনালিস্ট হিসেবে পুরস্কারও জিতে নেয়।
বাংলা ব্রেইল কনভার্টার
ব্রেইলে তৈরি বই বা উপকরণ সহজে পাওয়া যায় না। তাই বাংলাদেশে ২০০৪ সালে চেষ্টা শুরু কম্পিউটারে বাংলা ভাষায় ব্রেইলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদান। অবশেষে ২০০৭ সালে আনন্দ কম্পিউটার্সের মাধ্যমে তৈরি হয় 'সিসিডি বিজয় বাংলা ব্রেইল কনভার্টার'। এতে কমপিউটারে কম্পোজ করা যেকোনো বাংলা ডকুমেন্ট মুহূর্তেই ব্রেইলে রূপান্তর করে ও ব্রেইল প্রিন্টারে প্রিন্ট করা সম্ভব। একই সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজেই ব্রেইলে কম্পিউটারে টাইপ করে তা রূপান্তর করে নিতে পারেন সাধারণ টেক্সটে।
ডাস্কবারি বাংলা ব্রেইল সফটওয়্যার
ডাস্কবারি হলো পৃথিবীর একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্রেইল সফটওয়্যার। বর্তমানে বিশ্বের ১৩০ ভাষায় এটি কাজ করতে সক্ষম। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের বিভিন্ন সংস্করণসহ এটি অন্যান্য অফিস প্রোগ্রাম থেকে ডাটা কনভার্ট করতে পারে। সফটওয়্যারটি দিয়ে ব্রেইলের বিভিন্ন বই, ম্যাটেরিয়ালস, মেমো ইত্যাদি তৈরি করা সহজ। সম্প্রতি বাংলায় ব্রেইল কনভার্টার হিসেবে কাজ করছে ডাস্কবেরি। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যে কেউ ডাস্কবারি সিস্টেমের ওয়েবসাইট http://www.duxburysystems.com থেকে এটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করার জন্য ডাইনলোড করতে পারবেন। তবে নিয়মিত ব্যবহার করতে কম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স কিনতে হবে। বাংলাদেশে ডাস্কবারির ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটি নিয়ে কাজ করছেন অনেকেই।
আমিস বাংলা
অ্যাডাপটিভ মাল্টিমিডিয়া সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো আমিস। এটি একটি মাল্টিমিডিয়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সাধারণত ডেইজি সংস্করণের বই পড়ার জন্য আমিস ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে সেলফ ভয়েসিং সিস্টেম, যার ফলে কোনো স্ক্রিনরিডার ছাড়াই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজে এটি পড়তে পারবে। বর্তমানে আমিসের ৩.১ সংস্করণ রয়েছে। আমিসের নেভিগেশন, সাবসেকশন, পেইজ, বুকমার্কসহ বিভিন্ন ফিচার প্রতিবন্ধীদের দারুণ সহায়ক। সিডি, হার্ডড্রাইভসহ বিভিন্ন লোকেশন থেকে বই পড়ার জন্য রয়েছে ব্যবহারকারীবান্ধব সুবিধা। http://www.daisy.org ওয়েবসাইটটি থেকে যে কেউ এটি বিনা মূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্রেইল লিখন সহায়ক যন্ত্র
ব্রেইলে ছয়টি ডট রয়েছে, যে কারণে নতুন শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহারে বিভ্রান্তিতে পড়েন। এই বিভ্রান্তি দূর করতে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রেইল লিখন সহায়ক যন্ত্র। যন্ত্রটি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করে চালাতে হয়। এতে রয়েছে অডিও সিস্টেম, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইপসার সহযোগিতায় এই যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। যন্ত্রটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পাঠ ও গেইমের মাধ্যমে ব্রেইলে লেখার অনুশীলন করতে পারবে। বাংলাভাষী প্রতিবন্ধীরা যাতে সহজে এটি ব্যবহার করতে পারে সে জন্য যন্ত্রটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়।
সমস্যাও আছে
বাংলাদেশে ব্রেইলের মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। বাংলা ব্রেইল প্রিন্টিংয়ের জন্য দরকার বিশেষ ধরনের প্রিন্টার। সেটি হলো ইনডেক্স প্রিন্টার, যার দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্রেইলের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের পরিমাণ কম হওয়ায় সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তবে তাদের মতে, সরকার হাইস্পিড ইনডেঙ্ প্রিন্টার কিনে সহজেই টেক্সট বুকগুলো ব্রেইলে রূপান্তর করতে পারে। এতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নের পথ সহজ হবে। এ ছাড়া ব্রেইল সফটওয়্যারগুলোর দামও অনেক বেশি। যে কারণে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এগুলো সহায়ক নয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে ব্রেইল পদ্ধতিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক করতে পারলে তারাও অন্য সবার মতো এগিয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে দেশের অগ্রগতিতে।
আলোচিত ব্লগ
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।