জাপানিজ রা যেভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করছে তাতে সত্যিই এই জাতিটার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছে। আমার শহরটি দুর্যোগের জায়গা থেকে অনেক দূরে অথচ শপিং-মল গুলিতে দেখতে পেলাম অল্প আলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। যখন এই লেখাটি লিখছি তখন TEPCO (Tokyo Electric Power Company) এর কর্মচারী ও প্রকৌশলীরা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছে ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলি যেন বাহিরে না যেতে পারে। গত দুইদিন ধরে তারা পানি দিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করছে। এখন তারা পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ করেছে এবং একটু পরেই পাম্পগুলো চালানো হবে।
টিভিতে দেখলাম কাতো নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে যে ইয়াতে বিভাগে থাকে। সে দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও সে জায়গাটি ছেড়ে চলে আসেনি, বরং এখন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করছে।
গতকালকে একটি সাংবাদিকের কাজ দেখে চোখে পানি চলে এলো। ইয়াতে এর একটি স্থানীয় পত্রিকার মালিক সে। সে নিজেই ত্রাণ কেন্দ্রগুলিতে ঘুরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করছে।এরপরে অফিসে ফিরে সে তার কর্মচারীদের সাথে করে হাতে লিখে পত্রিকা তৈরি করছে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেয়াল পত্রিকার মত। সেই পত্রিকাগুলি ত্রাণ কেন্দ্র গুলোর দেয়ালে লাগিয়ে দিচ্ছে। তার ভাষ্য হল, আমরা স্থানীয় পত্রিকা চালায়। বাহিরের খবর থেকে এখন আমাদের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় খবর। তার খবরে জানা যাচ্ছে ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থান। কোথায় কি কি পাওয়া যাচ্ছে, ডাক্তার কোথায়। এমন সাংবাদিককে স্যালুট জানাই।
ঘটনাক্রমে আমার কিছুদিন TEPCO তে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এখন টিভিতে তাদের নীল পোশাকের সাথে আপনারা হয়তো পরিচিত। একদিন এই পোশাক পরে আমাকেও কাজ করতে হয়েছিল। টেপকো-তে আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি মারাত্মক করিতকর্মা এর প্রকৌশলীরা। ওরা যা করবে অনেক ভেবে চিন্তে তবেই করবে। আমার বিশ্বাস তারা এই দুর্যোগ ঠিকমত মোকাবেলা করতে হবে। তারা যে কোন কাজ করার আগে তা যাচাই করে, সিমিউলেশন করে দেখবে আদৌ তা ঠিক মত কাজ করবে কিনা। হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরী হবে, তবে যা করবে তা আত্মবিশ্বাসের সাথেই করবে। চেষ্টা করে দেখি কি হয়, এই জাতীয় কোন চিন্তা ভাবনা তাদের নেই। তথ্য উপাত্ত এর উপর ভিত্তি করেই তবেই কাজ করে তারা।
একবার মনে আছে আমাদের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি জায়গা এর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশী দেখাচ্ছিল। আমি ও আমার এক সহকর্মীরা মিলে সেটি দেখতে গেলাম। হাতে ছিল ওয়াকিটকি যেটি দিয়ে যোগাযোগ রাখছিলাম। আমরা অস্বাভাবিক কিছুই দেখতে পেলামনা। আমি এসে রিপোর্ট করলাম, মনে হয় যন্ত্রটি ঠিকমত তাপমাত্রা মাপছেনা, কিংবা নষ্ট। আমার বস বললেন কিসের ভিত্তিতে তোমার মনে হল। আমি কোন কারণ বলতে না পারলে উনি লগবুকে লিখলেন, 'থার্মোমিটার যন্ত্রটি অস্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রদর্শন করছে। কারণ যাচাই করা প্রয়োজন'। আমরা তখন শিফটে কাজ করছিলাম। আমাদের শিফট শেষ হয়ে আমরা চলে গেলাম। কয়েকদিন পরে জানতে পারলাম যন্ত্রটি ঠিকই ছিল, মূল সমস্যা ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহের। এইভাবেই তারা অত্যন্ত সাবধানতার সাথে পূঙ্খানুরূপভাবে কাজ করে।
আমার বিশ্বাস জাপান এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে।