somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি: আরিয়ান

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
আরলিন এর হলগ্রামটি নিয়ে আরিয়ানা'র বাবা বেশ অনেক্ষণ ধরেই বসে থাকলো তার অফিসে। অনুমতি ছাড়া কারো মস্তিষ্কের হলগ্রাম করা এখন একটি কঠিন অপরাধ। কিন্তু আরলিন এর হুউল অনুযায়ী মৃত‍্যুর পরে তার মস্তিষ্ক ত্রিমাত্রিক স্ক‍্যাণ করে এই হলগ্রাম তৈরী হয়েছে, এবং তা এখন তার হাতে। কিন্তু আরলিন কেনই বা এই কাজটি করল তা বুঝতে পারলনা।

মানুষের অনেক স্মৃতিই অনেক অংশই থাকে যা অন‍্যের না জানাই ভালো। তাই হয়তো স্মৃষ্টিকর্তা আমাদের অন‍্যের চিন্তা বোঝার ক্ষমতা আমাদের দেয়নি। আর মেয়েরা তো এক গভীর সাগর। সেখানে অনেক কিছুই থাকে, একান্ত গোপনীয়। তার মৃত স্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়েই আরলিন এর স্মৃতির হলগ্রামটি তার অফিসের লকারেই রেখে দিল। পুরো এক ইয়োট্টা (yotta , ১ এর পরে ২৪টি শূন‍্য) বাইট এর এই হলোগ্রামে আরলিনার সমস্ত স্মৃতিই রয়েছে, তার ছেলেবেলা থেকে তার কৈশর, তাদের একসাথে কাটান সময় থেকে শুরু করে তাদের মেয়ে, আরিয়ানা এর জন্ম পর্যন্ত সব স্মৃতিই এইখানে। মানুষ কি তাহলে এক ইয়োট্টা তথ‍্যভান্ডারে রূপান্তরিত হবার জন‍্যই জন্মেছে?

যদিও অফিসের সব জানালা বন্ধ করে সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিস্টেম দিয়ে মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ার মতন করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে স্নিগ্ধ বাতাস বইছে, তারপরেও তার একপলক বাহিরের বাতাস পেতে তার খুব ইচ্ছে হল।

জানালা খুলে দেখলো আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে হরেক রকমের ড্রোন। কোনটি পৌছে দিচ্ছে অর্ডার করা কোন জিনিস, আবার কোনটার মধ্যে মানুষ বসে দূরে কোথাও যাচ্ছে। তার তৈরী ডিজাইনের ড্রোনগুলোকে দেখা যাচ্ছে উড়ে যাচ্ছে। সূর্যের আলো ড্রোনগুলোর উপরে পড়ে ঝলমল করে উঠছে।

(২)
আরিয়ানার ৪র্থ জন্মবার্ষীকি পালন করল খুব সাদামাটা ভাবে। তার কিছু কলিকদের ডেকেছিল। এর মধ্যে এসেছিল তাদের অফিসের নতুন চিফ সাইন্টিস্ট, ড. সোম। বড় হলরুমের কোনায় হালকা একটি মিউজিক বাজছিল। সবাই গল্প করতে ব্যস্ত। এমন সময় ড. সোম তার পাশে এলেন। তিনি বললেন,
- আর কিছুদিন পরেই তো মেয়েটি সব বুঝতে শিখবে। তার মা এর অভাব কিভাবে পুরণ করবেন?
ঠিক কি বোঝাতে চাইল সে ঠিক বুঝলনা।
- আপনি কি ঘটকালি করছেন নাকি কোন পাত্রীর জন্য। - সে উত্তর দিল
ড. সোম বললেন,
- নাহ, ঠিক সেরকম নয়। আসলে আমি কাজ করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। তাই ভাবছিলাম আপনার আরিয়ানার মায়ের স্মৃতি দিয়ে একটি সিস্টেম তৈরী করে দিলে কেমন হয়?
- আরিয়ানা তো গিনিপিগ নয়। তেমন পরীক্ষা করব কেন? - সে উত্তর দিল।
- আহা আমি সেরকম বলিনি। মেয়েটি তার মায়ের সাথে গল্প করবে। এতে করে তার মায়ের অভাবটা পূরণ হবে।
- কিন্তু আমি আরিয়ানা বড় হলে তাকে কি বোঝাব? - সে জানতে চাইল।
- বলবেন তার মা একটি মিশনে দূরের কোন গ্রহে গেছে। এমন তো হরহামেশা হচ্ছেই। হাইপারড্রাইভ দিয়ে আমরা কত্ত দূরের গ্রহে চলে যাচ্ছি। আমরা হলোগ্রাফিক তার ছায়ার সাথে কথা বলছি। আসল মানুষটাকে পাচ্ছিনা, তার ছায়ার সাথে আমরা কথা বলছি। এইক্ষেত্রে আরিয়ানা তার আসল মায়ের পরিবর্তে তার মায়ের স্মৃতি দিয়ে তৈরী কোন হলোগ্রাফের সাথে কথা বলতে পারবে।
ড. সোম এর কথাটি সেদিন খুব একটি পাত্তা দিলনা। কিন্তু কিছুদিন পরে তার মনে হল হয়তো আরিয়ানার মানসিক বিকাশের জন্য ব্যাপারটি পজেটিভ ভুমিকা রাখবে।


(৩)
আরিয়ানা এর মন খারাপ। তার ক্লাসের পরীক্ষার রিপোর্ট খুব খারাপ এসেছে। ক্লাসের পরে তার বাসায় পৌছে দেয় যে ট্রান্সপর্টার ড্রোন তা ঠিক সময়েই তার স্কুলে সামনে চলে এসেছে। অটোমেটিকভাবে চালিত এই ট্রান্সপোর্টালে উঠেই সে সিট বেল্টটা লাগিয়ে নেয়। পুরো কাচ দিয়ে ঘেরা এই শহরের বিশাল অট্রালিকা সহ দূরের সমুদ্রটি- সব কিছুই বসেই পরিষ্কার দেখা যায়। প্রথম প্রথম তার এই ড্রোনে উঠতে ভয় লাগতো। মনে হত এখুনি সে পড়ে যাবে। কিন্তু কিছুদিন পরে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন ড্রোনে আর কখনই দূর্ঘটনা ঘটে না। সেন্ট্রাল কমিউনিকেশ সিস্টেম এখন এই ড্রোনগুলি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ড্রোনে উঠেই সে পুরো কাচ ঘোলাটে করে দেয়। বাহির থেকে আর কেউ তাকে দেখতে পাবেনা। তার মনটা খারাপ, সেটা তার মাকে না বলতে পারলে ভালোই লাগবেনা।

কিছুক্ষণ পরে ট্রান্সপোর্টালটি বাসায় ল্যান্ডিং স্টেশনে পৌছে যায়। ভিতরে ঢুকেই আরিয়ানা ল্যান্ডিং স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। ল্যান্ডিং স্টেশনটি সুন্দর ভাবে তা দেয়ালে সেটে যায় এবং তা একটি জানালাতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেউই আর বুঝতেই পাবরেনা এটি তার এপার্টমেন্টের ট্রান্সপোর্টাল নামার জায়গা।

আরিয়ানা জুতোর সেলফে তার পা টি ধরতেই অটোমেটিকভাবে জুতোটি নিজে থেকে খুলে যায়। কোনায় তাদের বাসার রোবটকর্মি জুলি দাড়িয়ে আছে। যদিও রোবট কোন নারী-পুরুষ নেই, তবুও নারীর মতন করে তার নাম দেয়া হয়েছে। জুলি তার বাসার কাজগুলি দেখাশুনা করে। জুলি বলল,
- স্বাগতম, আরিয়ানা।
- ধন্যবাদ, জুলি।

জুলি কি তার চেহারা দেখে বুঝে ফেলেছে যে তার মন খারাপ? - আরিয়ানা ভাবে, হয়তো হবে। এমন বুদ্ধিমত্তা নিশ্চয় তাদের দেয়া হয়েছে। কেননা এর জুলি আর কোন কথা বলেনি। অন্যান্য দিন এটা সেটা প্রশ্ন করে জ্বালাতন করে। আরিয়ানা বুঝে যে জুলি তার সঙ্গি হতে চায়। কিন্তু আরিয়ানা ঠিক রোবট এর সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা। তার ভালো লাগে মা এর সাথে কথা বলতে। মা কত্ত সুন্দরভাবে তার মনের কথা বুঝে ফেলে। মা সেতো মা-ই, তা কি কখনও অন্য কেউ নিতে পারবে।

তার রুমে ঢুকে ট্রান্সটোর্টারে মা কে কল দেয়। মা ম্যাসেজ দেয় একটি স্যাটলে আছে। কিছুক্ষণ পরে কলব্যাক করবে। একটু পরে মা তাকে কল দেয়। হলোগ্রামটি অন করার সাথে সাথে তার মা'র অবায়ব তার রুমের মাঝখানে ফুটে উঠে। বাস্তবিক মা যেন তার সামনে দাড়িয়ে আছে। আরিয়ানা এর খুব ইচ্ছে করে মা কে জড়িয়ে ধরবে। হলোগ্রামকে জড়িয়ে ধরা যায়না তাই মন খারাপ করে থাকে। মা এর সাথে কুটকুট করে এটা সেটা গল্প করে। এটা সেটা আরো কত্ত কি?

এদিকে জুলি রান্নাঘরে রান্না শুরু করে। যদিও বেশীরভাব খাবারই প্যাকেটে প্রোসেস করা। তারপরেও সে প্লান করতে থাকে কি করে আরিয়ানা'র মনটা ভালো করবে। সে জানে যে এই সময় আরিয়ানা কে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। কথা বলা যাবেনা। কিছুদিন এই মনখারাপটা থাকবে। তারপরেই আরিয়ানা একদিন কথা বলবে তার সাথে। অন্তত তার কয়েক বছরের তথ্য সেই কথাটি বলে।


(৪)
সেদিন বাবা’র সাথে খাবার টেবিলে দেখা হল। তার কিছুক্ষণ আগেই বাবা এসেছে তা সে জানে, অন্তত দেয়ালে রাখা বাসার সেন্সরের ড‍্যাশবোর্ড বলে দিচ্ছে বাবা এখন বাসায়।
- আচ্ছা বাবা, মা কবে আসবে? আরিয়ানা প্রশ্নটি ছুড়ে দিল বাবা’র দিকে।
- আরিয়ানা তোমাকে তো বলেছি একটি হাইপারড্রাইভের দূর্ঘটনা তোমার মা একটি গ্রহে আটকে পড়েছে সেখান থেকে আসতে আরো ৮ বছরের মতন লাগবে।
- কেন বাবা?
- হাইপারড্রাইভে আমরা দ্রুত অনেক দূরে চলে যেতে পারি কিন্তু সমস‍্যা হল যেখান থেকে যাব ও যেখানে পৌছাবো সেই দুইদিকেই আমাদের হাইপারড্রাইভের টানেল থাকতে হবে। তবেই সেই টানেলের ভিতর দিয়ে আমরা আলোর গতিতে যেতে পারবো। অনেক দূরে দূরে এক একটি হাইপারড্রাইভের টানেল বসানো হয় যেন আমরা সেখানে যেতে পারি। তোমার মা তেমনি একটি হাইপারড্রাইভ বসানোর কাজে গিয়েছে, যেখানে একটি দূর্ঘটনার কারনে সেই এক্সিট টানেলটা নষ্ট। তাই তাদের ম‍্যানুয়ালি বিশাল দূরত্ব পার হয়ে পাশের একটি হাইপারড্রাইভ টানেলের মাধ‍্যমে যেতে হচ্ছে।

গরম সুপটি খেতে খেতে আরিয়ানা তার বাবার কথা শুনে। ছোট বেলা থেকেই এই ব‍্যাখাটি আরিয়ানা শুনে এসেছে, তারপরেও মানতে পারেনা। যদিও জানে যে প্রথম হাইপারড্রাইভের টানেল কাউকে না কাউকে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে বসাতে হয়েছে।
আরিয়ানারেও মায়ের মতন শ‍্যাটলে করে বিভিন্ন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যেতে চায়। কোন শ‍্যাটল কেমন চলে, তার বিস্তারিত খুটিনাটি তার মতন আর ক্লাশে কেউই জানেনা। মা যে মিশনে আছে, সেই মিশন এর বিস্তারিত তথ্য সে বের করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেটি তাদের স্টারপিডিয়াতে (বিভিন্ন গ্রহ ও নক্ষত্রের তথ‍্যভান্ডার) নেই। আরিয়ানা মনে করে যে, খুব সম্ভবত কোন গোপনীয় মিশনে তার মা গিয়েছে।
এখন মানুষেরা ছড়িয়ে রয়েছে অনেক গ্রহে। পুরানো দিনের চর দখলের মতন এখন গ্রহ দখল করা নিয়ে যুদ্ধ এখনও লেগে আছে। তার মা কি সেরকমই কোন বিপদজনক মিশনে আছে। বাবা তার তার ড্রোন তৈরীর কাজ নিয়ে আছে। তেমন ক্লাসিফাইড কোন কাজ মনে হয়না করে। কিন্তু তার মা এর সব কিছুই কেমন জানি অদ্ভুত। যদিও এখন শিশুরা বড় হচ্ছে রোবটের হাতেই। তারাই তাদের দেখাশুনা করে। তারপরেও পরিবারের বন্ধন এখনও ভেঙ্গে পড়েনি। এখনও সংসার নামক প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে। নিজের মে'কে তার মা দেখতে আসবে না। বছরের পরে বছর মিশন নিয়ে থাকবে তা আরিয়ানা ঠিক মেনে নিতে পারেনা। তার স্কুলের অনেকেই অবস্থ এমনভাবেই বড় হচ্ছে। তাই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আরিয়ানা তার মা এর সাথে দেখা করতে চায়।

(৫)
মা এর কলগুলো যে গ্রহ থেকে আসে সেটি বের করার চেষ্টা করে। সেটার জন্য প্রথমে সে কম্পিউটার সিস্টেম সমন্ধে শেখা শুরু করে। বাবা এর শরনাপন্ন হয় সে। বাবা তাকে বুঝিয়ে দেয় কিভাবে কাজ করে। একদিন বাবা তাকে শেখায় মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ কি, কিভাবে সেটি বুঝতে হয়। ইন্টারফেস নিয়ে মোটামুটি ভালো কাজ শিখে ফেলে। আশেপাশের জিনিসপত্রগুলিকে হ্যাক করা শুরু করে আরিয়ানা। ব্যাপারটা যে এমন মজার তা ভেবে খুবই এক্সসাইটেট। মানে রিতিমতন ঘুম হারাম।

আরিয়ান একদিন জুলিকে হ্যাক করে ফেলল। তার ভিতরের সিস্টেমটির নিয়ন্ত্রণ নিজেই নিয়ে নিতে পারলো। এটির ভিতরটার গঠন দেখে আরিয়ান খুব মজা পেল। যেহেতু এটি বাসার দেখাশুনা এর কাজ করে। তাই বাহিরের কোন সিস্টেমের সাথে এটি যুক্ত নয়। এর মধ্যে কোন তথ্য সংরক্ষিত থাকেনা। শুধুমাত্র লজিক এবং পুরান তথ্যগুলি সংরক্ষিত থাকে।

এরপরে সে আরো বড় কিছু হ্যাক করার কথা ভাবে। সে একটি সিস্টেম দাড় করিয়ে ফেলল যেটি তার মা এর সমস্ত যোগাযোগ ট্রাক করতে পারবে। এরপরে মা এর সাথে কথা বলার পরে সে খুটি নাটি বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু ঠিক কোথা থেকে এই সিগন্যালটি আসছে তা বের করতে পারলনা। যদিও সাধারণত তাদের গ্রহের সিগনালগুলি বেশ কিছু নড (কম্পিউটারের যোগাযোগের একটি স্থান) থেকে আসে। কিন্তু এই সিগনালটি আসছে অন্য কোন নড থেকে।

আরিয়ানা ব্যাপারটি কাউকে বলেনা। সেই বিশেষ যোগাযোগটি কোথা থেকে হতে পারে তা বের করার জন্য মোটামুটি উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু কোন হদিস করতে পারেনা। একটু পরে জুলি তাকে খাবার জন্য জন্য ডাকে।

আরিয়ানা আজকে জুলিকে বলেছিল যে সে বেক করা মাছ খাবে। আরিয়ানা তার বাবা’র জন্য অপেক্ষা করে। বাবাকে ম্যাসেজ পাঠাতেই বাবা জানাল যে ট্রান্সপোর্টাল ড্রোনে আছে। একটু পরেই আসবে। জুলি ল্যান্ডিং স্টেশনটি খুলে দেয়। আরিয়ানা জানালার পাশে যেয়ে দাড়ায়। বাবা একটি নতুন ধরনের ড্রোন তৈরী করছে। সেটি দিয়েই মনে হয় আসছে। বাবা কে অনেকবার বলেছে যে এটি একটি পরীক্ষামূলক ড্রোন এতে না উঠতে। এখনও বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরী হয়নি। তারপরও বাবা নিজের তৈরী করা জিনিসে নিজেই গিনিপিগ হয়ে ট্রায়াল দিচ্ছে। আচ্ছা যারা কোন কিছু উদ্ভাবন করে, তারা তাদের উদ্ভাবিত জিনিসের প্রেমে এমন করে পড়ে যায় কেন?


(৬)
এর পরে অনেক খেটে খুটে আরিয়ানা সেই অজানা নড টিকে মোটামোটি বের করতে পারে। একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কারের জন্য বৈজ্ঞানিকেরা ওই নডটি ব্যবহার করে। তার মা কোন গ্রহ থেকে যোগাযোগ করে তা সে বের করে ফেলে। অবাক হয়ে দেখে আসলে সেই নডটি তাদের গ্রহ থেকে খুব একটা দূরে নয়। বেশ কাছেই। খুব সম্ভবত কোন গোপনীয় প্রোজেক্টে মা আছে, তাই হয়তো এমন লুকোচুরি। ব্যাপারটি সে এমনই ভাবে নেয়।

সেদিন আরিয়ানা এর খুব খুশি লাগে। সে তার মা এর সাথে দেখা করতে যাবে। কিন্তু বাবা কে একেবারেই বুঝতে দেয়না। এই ভালোলাগা কারো সাথে শেয়ার করতে পারছেনা। যাকগে। কিছু কষ্ট যদি মানুষ একা নিজের মধ্যে পুষে রাখতে পারলে, আনন্দও নিজের মধ্যে রাখা যায়। আরিয়ানা তাই করল।

সেই গ্রহটিতে কিভাবে যাবে তার খোঁজ নিতে থাকে আরিয়ানা। হটাৎ আবিষ্কার করে সেটির অপেন ডে খুব সামনেই আছে। অপেন ডে হল, সেই গ্রহটি দেখার জন্য বাহিরের জনগণের জন্য টুর এর ব্যবস্থা থাকে। আরিয়ানা সেই টুরে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।

সেদিন ছিল ছুটির দিন। ব্রেকফাস্ট করতে যেয়ে দেখে বাবা তার ল্যাবে চলে গেছে বেশ সাকালেই। বাবার ড্রোনটি এসেছিল। ল্যান্ডিং স্টেশনের খুলতে যেয়ে দেখে তা বেশ সকালে আরেকবার বাবা খুলেছিল। বাবা কে খুব অদ্ভুত লাগে। কি যে ল্যাবে কাজ করে, এমন ডুবে থাকে। জুলিকে একটি ড্রোন ট্যাক্সি এর জন্য যোগাযোগ করতে বলে। ট্যাক্সিটি আসলেই সে টুরের মিটিং পয়েন্টে চলে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে আরেকটি স্যাটলে করে নিয়ে যাবে। সেখানে যেয়ে দেখে বেশিরভাগই বয়ষ্ক লোকজন। তার সমবয়সী কেউই নেই। এই সব ছোটখাট গ্রহ দেখার আগ্রহ খুব একটা কারোনেই। আর গ্রহটিতে মজার কিছু নেই, অদ্ভুত কোন জিনিস নেই। যেটি দেখার জন্য সবাই আগ্রহী হবে। এরকম একটি বোরিং গ্রহ দেখতে কেউই যাবেনা। তারপরেও অল্প স্বল্প লোক দেখে অবাক হয়নি আরিয়ানা। একটু পরেই তাদের স্যাটল চলা শুরু করল। সত্যি সত্যিই তার মায়ের সাথে দেখা হবে। এমন একটি দিনের জন্য সে কত্ত বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল।


(৭)

স্যাটলটি এসে পৌছাল সেই গ্রহের ল্যান্ডিং স্টেশনে। তাদেরকে একটি অভ্যার্থনা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হল। এবং সবাইকে একটি করে পানীয় খেতে দিল। খাবার দাবার বেশ ভালো মানের। মনে হয় গ্রহটি আকর্ষনীয় নয় বলেই খাবার এর প্রতি নজর দেয়া হয়েছে। আসার আগে আরিয়ানা হোমওয়ার্ক করে এসেছিল ঠিক কোন জায়গা থেকে তার মা যোগাযোগ করে। তার হাতের ট্যাবলেট ডিভাইসে তার ম্যাপ ও অনুসঙ্গিক তথ্য গুলি নিয়ে এনেছিল। আরিয়ানা খুবই উত্তেজিত ছিল। কি বলবে সে মা কে? সে কি জড়িয়ে ধরবে?

টুরের লোকজন গ্রহের বিভিন্ন অংশে নিয়ে যাচ্ছিল। এই গ্রহটি মূলত বিজ্ঞানীদের ল্যাবের কাজেই ব্যবহৃত হয়। আরিয়ানা কে গাইড করছিল একটি রোবটের দল। একটু পর পরেই হলোগ্রাম দিয়ে বিস্তারিত বলে দিচ্ছিল। ল্যাবের কোন জায়গাতে কি কাজ করে। একটি সুন্দর বাগানের মতন জায়গাতে নিয়ে গেল। যেখানে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। কোথাও ঠান্ডা ও কোথায় বা মরুভুমির মতন পরিবেশ। সেই পরিবেশের গাছগুলি সেখানে কিভাবে বেচেঁ থাকে তার বর্ণনা দিচ্ছে গাইড রোবটগুলি।

আরিয়ানা হাতের ট্যাবলেটে দেখল সে তার মায়ের জায়গাটির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। খুব সাবধানে সে গাইডের অংশ থেকে বের হয়ে গেল। বাথরুমে যাবার রাস্তায় চলে যেয়ে অন্য একটি রাস্তা দিয়ে চুরি করে বেরিয়ে গেল। তার গলায় যে গাইডের পাসটি ঝুলছিল তা সে খুলে রেখে দিল। হটাৎ একটি কফি শপের পাশ দিয়ে গেল। এখন তাকে কেউ বুঝতেই পারবেনা সে বাহিরের অন্য কেউ। কিন্তু আরিয়ানার মনে হচ্ছিল পুরো কফিশপের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে যে তার পাশের রুমই তার কাঙ্খিত রুম যেটি সে খোঁজার জন্য এখানে এসেছে।

সাবধানে সে অপেক্ষা করতে লাগল কখন সেই রুম থেকে কেউ বের হয়, তাহলে সে ঢুকে যেতে পারবে। কফিশপের কোনার একটি চেয়ারে সে বসে থাকলো।

একটু পরেই একজন লোক সেই গেট থেকে বের হবার সাথে সাথেই সে দরজার দিকে এগুতে লাগল। কিন্তু বেশী হুড়োহুড়ি করলে সে অস্বাভাবিক লাগবে বলে স্বাভাবিক ভাবেই দরজা টির দিকে এগুতে থাকলো। কিন্তু যখন সেখানে ঢুকতে যাবে, ততক্ষনে দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল। খুব আফসোস হতে লাগলো আরিয়ানার। এমন একটি দূর্লভ মুহুর্ত সে হাতছাড়া করে ফেলল!

দরজাতে একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের মাধ্যমে লক করা। সে হয়তো চেষ্টা করলে সেটি হ্যাক করতে পারবে, কিন্তু এটি মূল প্যাসেজের পাশেই আর পাশে কফিশপটি হবার কারণে লোকজন এর যাতায়াত বেশী। খুবই সন্দেহ করতে পারে। আরিয়ানা ও উদ্বিগ্নতা বাড়তে থাকলো। এতদিন ধরে কত প্লান করে আজকের দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিল সে। আনন্দ, ভয়, উদ্বিগ্নতা এর একটি মিশ্র অবেগ ককটেল হয়ে তার মধ্যে দেখা দিল। আমাদের সমস্ত আবেগ যখন এইরকম একত্রিত হয়ে যায় তখন মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে? তা মনে হয় বিজ্ঞানীদের জানা নেই।

একটি চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো এর পরের কোন সুযোগের জন্য। এইদিকে বেশী দেরী হলে গাইডের লোকজন নিশ্চয় তাকে খোঁজা শুরু করবে। ট্যাবলেটটি নিয়ে সে তাতেই কিছু বই বের করে প্রস্তুত হয়ে থাকলো। এমনভাবে প্রস্তুত হয়ে তৈরী হয়ে নিল যেন দরজার কাছে পৌছতে বেশী সময় না লাগে। চেয়ারটি তেমনভাবে একটু খুলেই বসে থাকলো।

এদিকে কফিশপে একটি রোবট তাদের খাবার সার্ভ করছে। সে কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকার চেষ্টা করল। ট্যাবলেটে বই শুধু মাত্র খোলাই থাকলো, উদগ্রীব অপেক্ষাতে এইসময় কি আর বই পড়া যায়? এর পরে কখন সুযোগ আসবে? সেই সময় যেন আর আসেনা। অপেক্ষার সময়গুলি এত দীর্ঘ হয় কেন?

(৮)
বেশ একটু পরে দরজার কাচ দিয়ে দেখলো একটি ক্লিনার রোবট সেদিক দিয়ে বের হতে যাচ্ছে। এইবার আর আগেরমতন ভুল করলনা। ক্লিনার রোবটটি বের হবার সাথে সাথেই- খুব দ্রুত আরিয়ানা সেই দরজা দিয়ে ঢুকে গেল। ঢুকার সাথে সাথেই দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু ভিতরে ঢুকে দেখলো সেটা কম্পিউটারের কোন সার্ভার রুমের মতন। দেখে মনে হল সুপার কম্পিউটারের সার্ভারগুলি যেমন হয় তেমন। তবে এই রুমের যে সিস্টেমগুলি আরিয়ানা দেখতে পাচ্ছে, তা বাহিরের সাধারণ সিস্টেমের মতন নয়। গঠনগুলি আলাদা, আর সার্ভারের উপরে বাবার প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে। সার্ভারগুলিতে বিভিন্ন নাম লেখা রয়েছে, নডগুলির নাম লেখা রয়েছে।

আরিয়ানা ভেবেছিল, তার মা যেই স্যাটল মিশনে কাজ করে সেইরকম মিশনের কোন রুম দেখতে পাবে। মা মাঝে মধ্যেই গল্পে তেমন কথাই বলেছে।

আরিয়ানা তার ট্যাবলেটটি বের করে নড এর পুরে নামটি দেখে নিয়ে সেটি খুজতে শুরু করল। একদম কোনাতে সেই নড লেখার সার্ভারটি খুজে পেল। সবগুলি নডের নিচে একটি করে নাম লেখা। তার নডটির নাম মিলিয়ে নিচে দেখল তার নিচে তার মায়ের নাম লেখা, "আররিন"। দেখার সাথে সাথে তার শরীর দিয়ে যেন হিমশিতল একটি স্রোত বয়ে গেল।

কিন্তু নডের নিচে কেনই বা তার মায়ের নাম লেখা থাকবে? তার মানে যোগাযোগের সিগনাল যে নড থেকে আসছে সেটি তার মা শুধু ব্যবহার করে? ঠিক বুঝতে পারলনা। সে আশা করছিল সে দেখবে কোন জলজান্ত মানুষ। কিন্তু এই রুমে তো শুধু সার্ভার। কোন লজিক তার মাথায় কাজ করছিলনা। এমন কেন হবে?

কিছুক্ষন চিন্তায় মগ্ন হয়েছিল বলে সে খেয়াল করেনি। এইবার তো রুম থেকে বের হতে হবে। কিভাবে বের হবে? বের হতেও তো সিকিউরিটির লগটি খুলতে হবে। এসব ভাবতেই সে দেখল একজন কেউ এই দরজাটি খুলছে। সার্ভারের পাশেই সে দাড়িয়ে দরজাটি খোলার অপেক্ষাতে থাকল। কিন্তু অপরপাশে যে দরজা খুলল, একি? ড. সোম। বাবার কলিগ, যিনি আরিয়ানা'র বাসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝে মধ্যে আসেন।

----

(৯)
ড. সোম, আরিয়ানা নিয়ে তার রুমে নিয়ে গেলেন। আরিয়ানা সেই রুমে ঝুলান পোস্টার দেখে বুঝতে পারলো যে, আসলে সেই সার্ভাররুমটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেম। সেখান থেকে আচ করতে পারলে যে, এতদিন মা 'র পরিচয়ে যার সাথে গল্প করেছে সে কোন রক্ত মাংসের মানুষ নয়, সে একটি "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা"। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতদিন ধরে তাকে গল্প শুনিয়েছে, উপদেশ দিয়েছে। কত স্মৃতি তাতে। কিন্তু পরে যখন জানতে পারল যে তার সত্যিকারে মায়ের স্মৃতি, তার লজিক ও চিন্তার প্রণালিকে ব্যবহার করে এই সিস্টেমটি কাজ করে, তখন কেন যেন তার মা'কে খুজে পেল। আবার সে সার্ভার রুমে যেয়ে "আররিন" লেখাটির উপরে হাত বুলিয়ে নিল। সেখানে মনে হয় মায়ের স্পর্শ খুজে নিল আরিয়ানা। কখন খেয়াল করেনি, বাবা এর হাত এসে পড়ল আরিয়ানা এর কাঁধে। বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আরিয়ানা হুহু করে কেদে উঠল।

আজকের মানব সভ্যতা, আবেগ অনুভূতিগুলি জলাঞ্জলি দিয়ে অনেকদূর চলে এসেছে। কিন্তু এই আরিয়ানা'র কান্না আজকের সভ্যতাকে আজো জয় করতে পারেনি।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×