Qamrul Islam
সকাল হয়েছে? ঘুম কি ভেঙেছে বাংলার মানুষের? কয়েকটা প্রশ্ন করুন।
এক) আজকের ১২ মার্চ। বাংলাদেশ রিজার্ভ লুট হলো ৫ ফেব্রুয়ারী বিকালে। নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপের চোটে ৫ সপ্তাহ পরে কেনো বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করলো ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা চুরি হয়েছে? এতদিন সবাই কোথায় ছিলেন সবায়?
দুই) ডেপুটি গভর্নর রাজী বলেছে ‘তদন্তের স্বার্থে’ অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়নি! কেনো? তাহলে কি অর্থমন্ত্রী নিজেই আসামী? “যাকে যাকে জানানো দরকার” তাকে তাকে জানানো হয়েছে! এই “যাকে যাকে” কারা? এত বড় কেলেঙ্কারীর কথা অর্থমন্ত্রীর যদি জানার ক্ষমতা না থাকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যদি জানার অধিকার না থাকে, তবে এর ওপরে আর কে আছে জানার? নিশ্চয়ই আপনি?
তিন) তাহলে ধরেই নিতে হবে আপনি জানেন। আপনি জেনে কি করলেন এই এক মাস? এখন দেখা যাচ্ছে, সিসিটিভির ফুটেজ নাই, কম্পিউটার ও সার্ভারের লগ মুছে দেয়া হয়েছে! কে করলো এ কাজ? নিশ্চয় চোরেরা? চোরেরা করলে একমাস ধামাচাপা দিয়ে আছেন কেনো? এই লুটের সাথে যদি আপনি বা আপনার ছেলে জড়িত না থাকে, তবে আপনার ভয় কি? ওপেন করে দিচ্ছেন না কেনো? ধরুন চোরদের। আসল কথা না বলে বার বার কেবল হ্যাকারদের দেখাচ্ছেন কেনো? হ্যাকার নামক কয়েকটা লোক তো আপনার ছেলে হায়ারও করতে পারে। সে যে অতীব দুষ্ট কম্পিটার বিদ এবং চোর, এটা কে না জানে। তাকে ভাগ না দিয়ে দেশের কোনো বড় কাজ বা প্রজেক্ট হয় না। এক যুবলীগ আজ বললো, রিজার্ভ লুট কান্ডে নিশ্চিত ভাবে জয় জড়িত। নইলে বহুত আগেই আপনার মাউথ অর্গান শব্দ করতো!
চার) অনেক টাকা উদ্ধার হয়েছে, শ্রীলংকায় আটক হয়েছে এসব বানোয়াট গল্প ও নাটক জাতিকে শুনিয়ে বিভ্রান্ত করছেন কেনো? এটা কি মানুষকে শান্ত করে টাকাটা মেরে দেয়ার বুদ্ধি?
পাঁচ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩ অফিসারের একাউন্ট থেকে এডভাইজগুলি গেছে। এটা বাইরের কম্পিউটার থেকে পাঠানো সম্ভব নয়। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঐ নির্দিষ্ট কম্পিউটারে কার্ড পাঞ্চ করে লগইন করে তারপরেই কাজটা করতে হয়েছে। বাইরে কম্পিউটার থেকে এটা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো, ঘটনার আগেই সিসিটিভি নষ্ট করলো কে? ফুটেজ ডিলিট করলো কে? ঐ সময় রোষ্টার ডিউটি কোন কোন অফিসারের ছিল? এগুলো বের করা কি খুব কঠিন কাজ? তাহলে করছেন না কেনো? ধরছেন না কেনো? ৭ সপ্তাহও কি যথেষ্ট নয়? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে গতকাল বুঝি ঘটনা ঘটলো!
ছয়) রাকেশ আস্তানা কে? তার সাথে আপনার পুত্র জয়ের কি ব্যবসায়িক রিলেশন নাই? থাকলে কেমন সম্পর্ক। ম্যাপ বলছে, দু’জনে থাকে ৮ মিনিটের ডিস্টেন্সে। আমেরিকার আলেক্সািন্ড্রিয়া শহরে রাকেশ থাকে ( 4403 Twin Knolls Ct, ALEXANDRIA, VA 22312) আর আপনার ছেলে জয় থাকে (3817 Bell Manor Ct, FALLS CHURCH, VA 22041) দু’জনেরই হার্ভার্ড বাকগ্রাউন্ড। দুয়ে দুয়ে চার হতে বলে দিতে হয় না। বোঝা যাচ্ছে, জয়ের লোক রাকেশ। রাকেশের কাছে বাংলাদেশের জনগনের ২৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ, সকল ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের সিকিউরিটি কেনো? তার পুরো পরিচয়, ব্যাকগ্রাউন্ড জাতির জানার অধিকার ছিল। গোপনে করছেন কেনো সব?
সাত) বড় খবর হলো, এতদিন ধরে রাকেশ আস্তানা বাংলাদেশ ব্যাংকের অলিখিত এডভাইজার ছিল- কেনো? কি এডভাইজ করেছিল সে? তার এডভাইজে থাকা অবস্থায় ৭৬০৮ কোটি টাকা লুট হলো, এরপরেও তাকে আবার কনালটেন্ট নিয়োগ দিলেন কেনো? ঘটনার পরে তার দেওয়া সফটয়্যার ও প্যাচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কমম্পিউটারে স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করলো কেনো আপনার রাখাল আতিউর? নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ডাটা ও সিষ্টেম তার কাছে চলে গেলো? ভবিষ্যতে যে ২৮ বিলিয়ন ডলার পুরো রিজার্ভই রাকেশ সরাবে না, সে নিশ্চয়তা কি? বাংলাদেশ ব্যাংকে হলো রাষ্ট্রীয় চরম মূল্যবান, গুরুত্বপূর্ন, টপ সিক্রেট অর্গান। এখানে রাকেশকে কাজ দিয়েছেন কেনো? তার গ্যারান্টি কি?
আট) রাকেশ আস্তানা বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন যেসব পরিবর্তন করছে, সেটা ক্রস চেক করার জন্য দেশীয় প্রযুক্তিবিদ বা বুয়েটকে রাখেননি কেনো? এক বিদেশী মালুর হাতে দেশের এত সম্পদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন, মতলবটা কি?
নয়) রাকেশ এখন কি করছে? লুটের বাকী যেটুকু তথ্য প্রমান আছে, তা মুছে দিয়ে আপনি ও আপনার ছেলেকে সার্ফ এক্সেল ক্লিন করে দিচ্ছে কি? শেষে হয়ত বলবে, হ্যাকার আর ম্যালাওয়ার খেয়েছে টাকা, উদ্ধারের আর কোনো উপায় নাই।
এখন যাই করেন না কেনো, এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে। ইতিহাস বার বার ফিরে আসে।