somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মান্ধতা একটি ব্যাধি। আর এই অন্ধত্বকে সমর্থন দেয়া সমমাত্রার ব্যাধি।

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

* জাতীয় বিমানবন্দরের সামনের চত্বরে ‘লালন ভাস্কর্য’ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাত্রই বিদেশী অতিথিরা যেন আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্মারকস্বরূপ সুন্দর একটি নিদর্শন দেখতে পায়। ধর্মের দোহাই দিয়ে সেটি নির্মাণ করতে দেয়া হয়নি। এই ঘটনার সমসাময়িক কালেই মতিঝিলের বলাকা ভাস্কর্যের বকগুলোর পা ভেঙ্গে খোঁড়া করে দেয় একদল মানুষ। তাদের লক্ষ্য কেবল বকের পদযুগল ছিলনা যদিও ছিল দেহ
ের সর্বাংশ।

* অল্প কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের নার্সিং ইন্সটিটিউটে মেয়েদের হিজাব করা নিয়ে আন্দোলন হয়ে গেল। সত্যিই অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। মেয়েদের শালীনতা রক্ষার জন্যে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্যে তারা হিজাব করতে চাচ্ছে আর তাতেই কিনা বাঁধা দেয় কর্তৃপক্ষ! কত বড় আস্পর্ধা! বোকা মন মানতে পারেনি। যখন দেখেছি ঊর্ধ্ববাহু অনাবৃত ললনারা নাক মুখ ঢেকে স্লোগান দিচ্ছে হিজাবের অধিকার আদায়ে, সাক্ষাৎকার দিচ্ছে MyTV, নয়া দিগন্তের পরপুরুষ সংবাদকর্মীদের সামনে তখন ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গিয়েছিল আমার।

* পরশু রাত থেকে শুরু হয়েছে আরেক যাত্রাপালা। নিষ্ঠুর নির্মম মঞ্চ পরিবেশনা। রামু, পটিয়ায় মানুষের ঘর লুট হচ্ছে, আগুন দেয়া হচ্ছে মন্দিরে। বাড়িঘর পুড়ে ছাই হচ্ছে চোখের সামনে। সেই আগুনের লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি হাসছে একদল হায়না।

উপরের প্রতিটি ঘটনা কোন শ্রেণীর মানুষ ঘটিয়ে চলেছে লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্তে কেনা এই জন্মভূমিতে সে কথা সবারই কমবেশি জানা। এতোদিন ভাবতাম এসব করে খুব বেশি সুবিধে তারা করতে পারবে না। শেষকালে অসারের তর্জন গর্জনই সার হবে। কিন্তু না, এখন মনে হচ্ছে এতকাল ভুল ভেবেছি। এই বিশেষ প্রজাতির মানুষগুলো একটা জায়গায় ঠিকই সফল। কারন তারা আদতে যাই করুকনা কেন বাইরে ধর্মের পোশাকটা ঠিকই শক্ত করে সেটে রাখে তাই তাদের অপকর্মের প্রাপ্তিস্বরূপ আপনি যদি তাদের দিকে থুতু ছুড়ে মারেন তবে যেন থুতুটা ধর্মের গায়ে লাগে সেই ব্যবস্থা তারা ঠিকঠাক করে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে ধর্মভীরু অধিকাংশ আমরা ধর্মান্ধ এই গুটিকয় মানুষের কর্মকাণ্ড অসহায় চোখে তাকিয়ে দেখি বেশিরভাগ সময়। প্রতিবাদ করতে গেলে এই হায়নারা ধর্মকে বর্ম হিসেবে সামনে টেনে ধরে বিধায় নিতান্ত ভালমানুষ, পরিষ্কার চিন্তার মানুষগুলোও সে প্রতিবাদের বিরুদ্ধবাদ নিয়ে হাজির হয়; পাছে ধর্মকে খাটো করা হয়ে যায় এই ভয়ে। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষগুলো নিজেদের অজান্তে, অনিচ্ছায় হলেও সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরোক্ষ একটা সমর্থন দিয়ে ফেলে। এক মুহূর্তের জন্যে হলেও তাদের পাশে যেয়ে দাঁড়ান। হয়তো নিজেরা সেটা খেয়ালও করেন না, ওভাবে কখনো ভাবার চেষ্টাও করেন না।

ভারত, মায়ানমারে যখন সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলে তখন আমরা কীবোর্ডে ঝড় তুলি, মানববন্দনার বাণী নিয়ে মানববন্ধন রচনা করি, মিছিলে স্লোগান দেই, মিটিঙে রক্তগরম করা ভাষণ শুনে হাততালি দেই। আর যখন নিজের ঘরের আঙ্গিনায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন আমাদের অন্যরূপ। মুখে ভালোমানুষি হাসি নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজে ফিরি। দুএকজন সর্বোচ্চ ‘ওরা পথভ্রষ্ট, ধর্মান্ধ’ জাতীয় দুএকটি কথা কোনোরকম উচ্চারণ করে ধর্মের ছাতার নীচে মুখ লুকাই। কিন্তু মুখ কি এভাবে সত্যিই রক্ষা হবে?

মনে করা যাক আপনি ‘সৈয়দ’ বংশের মানুষ। আপনার বংশের সম্মান অনেক উঁচুতে। কিন্তু আপনার পরিবারের যে ছেলেটি সন্ধ্যা হলেই গাঁজার কলকি নিয়ে বসে, পথে ঘাটে মহিলারদের ওড়না ধরে টান দেয় তাকে যদি কুপথ থেকে ফেরানোর উদ্যোগ না নেন, এহেন কীর্তিতে কোন ভ্রুক্ষেপই না করেন তবে দুদিন পর যদি আপনাকে কেউ গাঁজাখোর বলে ডাক দেয়, ‘সৈয়দ বংশ’ গাঁজাখোরের বংশ বলে উক্তি ছাড়ে তবে নৈতিকভাবে আপনি সেকথার প্রতিবাদ করার যোগ্যতা বা অধিকার রাখেন না। সেই অধিকার আপনি নিজেই নষ্ট করেছেন, করে চলেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×