somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক মাধ্যমমে আমরা কতটা সামাজিক!

১৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোভিডের পর থেকে আমরা নিউ নরমাল শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। মানিয়ে নিয়েছি। জীবনের অনুসঙ্গ হিসেবে এটা অভ্যাসে পরিণতও করেছি। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও খাপখাওয়ানোর পাশপাশি সামাজিক মাধ্যমগুলো আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটা এখন আমাদের শুধু যোগাযোগ মাধ্যমে আটকে নেই। জীবন পরিচালনার অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যাহিক জীবনের অধিকাংশ সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমরা সামাজিক মাধ্যমে বিচরণ করি।

মিডিয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা মেল্টওয়াটার এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা উই আর সোশ্যালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬২.৩ শতাংশ। এ বিষয়ে খবরও প্রকাশ করে ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপি।

এছাড়া মেটার হিসার অনুযায়ী যে তিনটি দেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন, তার একটি বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও রয়েছে ভারত ও ফিলিপাইন।

সন্দেহ নেই যে এটি মানুষকে একত্রিত করে, তথ্য ও মতামত বিনিময়ের এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। তবে, এর সামাজিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এই মাধ্যমগুলো কতটা সামাজিক, তা নির্ভর করে এর ব্যবহারকারীদের উপর।

সামাজিক মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা যে কোন ইস্যু বা পাবলিক ইভেন্টের সাথে যুক্ত হতে পারি, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারি। নিজেদের মতামত শেয়ার করতে পারি। এই যে সব পারি; এর মধ্যেই রয়েছে আরও অনেক না পারা বিষয়ও। আমাদের সেই লাগাম জানাটা জরুরী বটে। তা না হলে সামাজিক মাধ্যম অনেক সময় বিভাজন ও বিভ্রান্তির কারণ হয়ে উঠে, উঠছে বা উঠবে। মিথ্যা তথ্য, গুজব, হেট স্পিচ, সাইবার বুলিং, চাইল্ড অ্যাবিউস ও চাইল্ড অনলাইন সেফটির মতো নেতিবাচক দিকগুলো এই মাধ্যমের সামাজিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এই প্ল্যাটফর্মগুলো অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার, মিস কমিউনিকেশন, তথ্যের ভিন্ন বিশ্লেষণ উপস্থাপনের মাধ্যেমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সম্মানহানী লঙ্ঘনের কারণ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীর ভাইরালের নেশায় নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা অবলম্বন করা হলেও বাংলাদেশে তা লক্ষ্য করা যায় না। তথ্য যাচাই-বাচাই ছাড়াই যে কোন তথ্য শেয়ার, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন আমরা। ব্যবহারকারী অনেকে জানে আবার অনেকে জানেনা যে তার দেয়া পোস্ট জনপরিসরে পরিণত হচ্ছে বা হতে পারে। মূলধারার গণমাধ্যমও অনেকটা প্রভাবিত এসব তথ্যের মাধ্যমে।

অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভাষা ও শব্দ চয়নের মাত্রার কথা বেমালুম ভুলে যায়। অনেক সংবেদশনীল বিষয়ে কি বলা উচিত বা কিভাবে বলা উচিত সেটাও ভুলে যায়। এই ভুল সাধারণের না! এ ভুল দেশের সচেতন নাগরিকের মধ্যেও প্রকট।

সম্প্রতি তীব্র দাবদাহ চলছে দেশব্যাপী। জনজীবন অতিষ্ট। হিট স্ট্রোকে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুও হয়েছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ‍দুইদফা বন্ধ ঘোষণা করছে সরকার। অনেকে ধর্মীয় বিশ্বাসে বৃষ্টি প্রার্থনায় নামাজও আদায় করছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমন সংবেদশনীল বিষয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী ভয়ানক শব্দ চয়নে বিভেদ, আলোচনা ও সামালোচনা চোখে পড়লো। এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এ নামাজের অনুমতি না দেয়াকে কেন্দ্র করে কতশত আলোচনা। ব্যাখা ও বিশ্লেষণ। অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনা ছাড়িয়ে উত্তাপ ছড়ালো সামাজিক মাধ্যমে।

এছাড়াও ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেট লীগে সাথিরা জাকির জেসি নামে একজন নারী আম্পায়ারের কান্ডে কতশত সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক প্রেক্ষাপটে মনে হলো চলমান তীব্র দাবদাহ ছাড়িয়ে গেলে সমালোচনার গরম। মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে গেলেন বহু মানুষ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অক্ষমতা, ধর্মান্ধতা তুলে ধরে রীতিমত নারীবিদ্বেষী বানিয়ে ধুয়ে দেয়া হলো। এমনকি কিছু বিশিষ্ট মানুষ শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে গেলেন। এক প্রকার ধূয়ে দিলেন ক্রিকেটারদের। পরে জানাগেলে বিষয়টা ভিন্ন। ইতিমধ্যে অনেক বিদ্বেষ ছড়ালো।

এ ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমের সামাজিকতা বাড়ানোর জন্য আমাদের সচেতন থাকাটা জরুরী। আমাদের উচিত যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণ করা, সম্মানজনক আচরণ করা এবং অন্যের গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষা করার পাশিপাশি নিজের অবস্থান থেকেও নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ না করা। আমাদের উচিত সামাজিক মাধ্যমকে একটি ইতিবাচক ও সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা, যেখানে সকলের মতামতের জায়গা থাকবে এবং সকলে নিরাপদ অনুভব করবে।

সামাজিকতা আমাদের হাতে - আমাদের ব্যবহারের উপর। আমরা যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল হই, তাহলে এই মাধ্যমগুলো সত্যিকারের সামাজিক হয়ে উঠবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×