somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বান্দর বেলা [পর্ব তিন]

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতেই সাত সকালের ড্রিলিং অভ্যাস হয়ে গেল। ঘামে চুপচুপা আর কুকুরের মত হাঁফাতে হাঁফাতে সবাই হাউসে ফিরে আসতাম। এসেই কয়েকজন বিছানায় লুটিয়ে পরত যদি আরো কিছুক্ষন ঘুমানো যায়। কিন্তু আফসোস ৫মিনিট দম ফেলার ও টাইম পাওয়া যেত না, গোসল করার জন্য বাথরুমে সিরিয়াল পড়ে যেত। গোসল করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ডাইনিং হলে ঢুকতে হবে। গোসল করার সময় আমরা অনেক মজা করতাম। কেউ যদি ফাঁক তালে গোসল করে রেডি হয়ে যেত, আমরা বালতি নিয়ে আবার তাকে ভিজায়ে দিতাম, নে আবার গোসল কর...পুরা হাউসের বারান্দা ভিজে যেত, এর জন্য কত বকা যে খাইসি। এই সময় অনেকের মনে পড়ে যেত, আজকে স্কুলে কি পড়ে যাব?? মুজা তো ধোয়া হয় নাই, শার্ট টা তো ময়লা, আন্ডি ছাড়া প্যান্ট পড়মু কেমনে??? ...আয় হায়...বলে বসে যেত হুইল আর কাপড় ধোয়ার ব্রাশ নিয়ে। কত দিন যে ভিজা মোজা পরে ক্লাস করসি...।
কোন মতে কাউয়া গোসল করে শার্ট আর সেই বিখ্যাত সাদা প্যান্ট পরে রেডি...কিন্তু একি?? জুতায় দেখি কালি করা নাই?? তাড়াতাড়ি করে জুতায় কালি করতে বসে যেতাম। জুতায় কালি করা ছিল একটা বিশাল কর্ম-যজ্ঞ।
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
১। kiwi শু পলিশার
২। kiwi জুতার কালি
৩। জুতার ব্রাশ
৪। নারিকেল তেল
৫। সাদা ত্যানা (সাধারনত পুরানো বা ছিড়ে যাওয়া স্যান্ডো গেঞ্জি)
জুতা এমন ভাবে পালিশ করতে হত যেন আয়নার মত নিজের খোমা টা দেখা যায়। সিনিয়র হবার পরেই এই জুতা পালিশ করার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গেছিলাম। তখন তো একটা হুকুম দিলেই জুতা রেডি হয়ে থাকত। আমার জুনিয়র গুলা খুব ভালো ছিল, কখনই গাই গুই করত না। কারন তারা জানত করলে ও তেমন লাভ হবে না। কেউ বেয়াদপি করলে জুতা পালিশ করতে দেয়া টা একটা জনপ্রিয় উপায় ছিল।আল্লাহ বাঁচাইসে আমার উপর সিনিয়রদের নেক নজর ছিল।
ফুল বাবু সেজে লাইনে দাড়াতাম, নজরুল স্যার এক এক করে সবার ড্রাস আপ চেক করে ডাইনিং এ ঢুকার অনুমতি দিতেন। (পুরা আজাইড়া...কত্ত দিন নজরুল মিয়া রে ফাকি দিসি। শার্টে যদি একটু ও দাগ থাকত তাইলে কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করে উঠত। দাগ লুকাতে তাই ট্যালকম পাউডার পানিতে গুলায়ে দাগ ঢেকে দিতাম, কে ধরবে আমারে...)
সকালে নাস্তার এই পার্ট টুকূ আমার সব চেয়ে অপছন্দের ছিল। নাস্তা জিনিস টা আমি এখনও খেতে পারি না। অন্য কিছু না হয় বাদ ই দিলাম...সাত সকালে মানুষ সিদ্ধ ডিম খায় কেমনে??? সাদা সাদা ডিম টা দেখলেই তো নাড়ি ভূড়ি সব উল্টায় আসে। এখন আমি কি করি?? ডিম খাওয়া তো বাধ্যতামূলক। প্রথম দিকে একবার শুধু সিনিয়র ভাইকে বলেছিলাম-ভাইয়া আমি ডিম খাব না। এমন ঝাড়ি খাইসিলাম...। উলটা ঐদিন ভাইয়া নিজের পর্যবেক্ষনে আমার ডিমের সাথে সাথে তার নিজের ডিম টা ও গলধকরন করতে বাধ্য করেছিল।আর কোনদিন সাহস হয় নাই...অনেক কষ্টে সেদিন বমি চেপে রাখেছিলাম। এরপর ট্রিক্স শিখে গেলাম...
“ডিমের খোসা ছিলতে ছিলতে কায়দা করে সবার নজর এড়িয়ে ডিম টা কে প্যান্টের পকেটে চালান করে দাও। আজাইড়া কিছুক্ষন গায়েবী ফল চর্বন কর...আর স্কুলে যেয়ে ডিম টা চিল কে খাওয়াও” ...একদম ফুল প্রুফ প্ল্যান। কোন দিন ধরা খাই নাই।
নাস্তা পর দুই হাউস থেকে একই সময়ে মার্চ করতে করতে আমরা বের হয়ে আসতাম, কারা আগে যাবে এটা নিয়ে পথে শুরু হয়ে যেত জয়নুল-কুদরতের এক অ্মিমাংসিত যুদ্ধ। জয়নুল-কুদরতের মধ্যে যতই সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকুক না কেন স্কুলে পা রাখার সাথে সাথে আমরা সেটা ভুলে যেতাম। এক সাথেই সব বান্দ্রামি করতাম আর এক সাথেই মার খেতাম। যুদ্ধ কিন্তু থেমে থাকত থাকত না, তখন যুদ্ধ শুরু হত স্কুল সেকশন নিয়ে ।

আমার বান্দর বেলা [পর্ব দুই]- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:১৯
৪১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×