somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর্গম দূর্গাপুর [পর্ব দুই- ছবি সহ]

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইটুকুরই বাকি ছিল, সারা শরীর রাগে রি রি করছে। হেল্পার কে ডেকে এতবছর ধরে স্বযত্নে শেখা গালি গুলো সব এক সাথে বর্ষন করে দিলাম। ব্যাটা একটু থমকাল। আমার সাথে আর কেউ গলা মিলাচ্ছে না দেখে ব্যাটা বিদ্রুপ এর বিছুটি মাখা এক হাসি উপহার দিল। এইটা দেখে তরাক করে রাগ উঠে গেল। গালাগালি করে ফাইনাল আলটিমেটাম দিয়া দিলাম। ১২টার মধ্যে নেত্রকোনা পৌছায়া দিবি...নাইলে তর ....(TEET TEET TEET)...বাসে আগুন জ্বালায়া দিমু....(TEET TEET TEET)...সাথে সাথে আকিজ এর নতুন প্রোডাক্টের একটা কাঠি জ্বালিয়ে একটা demo ও দেখায় দিলাম। ব্যাটা ঘাবড়ায় গেল, ১২টার মধ্যে পৌছায় দিবে এই মর্মে প্রতিঙ্গা করায় আমি ও আমার চোপা টাকে হালকা রেস্ট দিয়ে সিটে গা এলায় দিলাম। রাতে ঘুম হয় নাই (পরীক্ষা শেষ.... ঘুম ও শেষ), সাথে সাথেই চোখ ২টা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

হঠাৎ ভ্যাপসা গরম আর ঘামের বিকট গন্ধে ঘুম ভেঙে গেল...একটু ধাতস্থ হয়ে দেখি বাসে তুমুল অবস্থা। আমাদের গ্রীন লাইন কুখ্যাত ৬নম্বর এ convert হয়ে গেছে। একজন ঠিক আমার মুখ বরাবর দাড়িয়ে গরম প্রশ্বাস ছাড়ছে। মেজাজ কেমনে ঠান্ডা রাখা যায়??

লোকাল বাসের সাথে আমার সখ্যতা বেশ পুড়ানো। তুরাগ আমার নিত্যদিনের বাহন। লোকাল নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা থাকত না যদি আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় থাকত। মাত্র ১ দিনের ছুটি। পরদিন মে দিবস। এখন পর্যন্ত পৌছাতেই পারলাম না।
ধৈর্যের চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে ১২ টা বেজে ১৫ মিনিটে আমারা নেত্রকোনা-বিরিশিরির মোড়ে নেমে গেলাম। নেমে তো গেলাম...অপেক্ষা করতে আছি তো করতেই আছি, বিরিশিরি যাওয়ার বাস আর আসে না। এদিকে দুপুর শেষ হয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে। বাসের দেখা শেষ পর্যন্ত আর পেলাম না। একটা ট্রাক যাচ্ছিল সেটার পিছনেই উঠে পড়লাম। শুরু হইল নতুন অত্যাচার। রাস্তা কোন পর্যায়ের খারাপ হলে আপনার নাড়ি-ভূড়ি বের হয়ে আসবে এখন চিন্তা করে নিন। ট্রাক টা যে তথাকথিত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সেটা আসলে কোন রাস্তাই না, ক্ষেতের আইল দিয়ে ট্রাক যাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই ১-২হাত সমান গর্ত। আইলের পাশ দিয়েই একটি অসমাপ্ত ব্রীজ দেখা যায়, যেটা বিগত ১০ বছর ধরে শুধু তৈরী ই হচ্ছে।

বিরিশিরি যাবার পথে পড়বে কংস নদী
শেষ পর্যন্ত আর ট্রাকের উপর বসে থাকতে পারলাম না, নেমে হাঁটা ধরলাম। যখন বিরিশিরি পৌছাই তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে ৩টা। বাজারেই মুরগীর ঝোল দিয়ে কোন মতে ভাত খেয়েই দৌড় দিলাম সোমেশ্যরী দেখতে।

বিরিশিরির পথ এমনই মনোরম
দূরের মেঘালয়ের পাহাড় গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো। হেঁটে হেঁটে মাঝ নদীতে পৌছে গেলাম। চারিদিকে অসম্ভব সুন্দর বালু রাশি। রাতের বেলা এই বীচে বার.বি.কিউ করেছিলাম।

নদী পার হয়ে রিকশা ঠিক করলাম। আমাদের গন্তব্য বিজয়পুর আর রানিক্ষং। এখানে ভালোভাবে দামাদামি করে নিবেন। আমারা প্রতি রিকশা ২০০টাকা করে দিয়ে ছিলাম। বিজয়পুর চিনামাটির লেকে যাওয়ার পথ টাই অনেক সুন্দর। রাস্তার দু’পাশে সবুজ ধান ক্ষেত, মাঝে মাঝেই চোখে পড়বে ছোট্ট গীর্জা ঘর। আর দূরের পাহাড় শ্রেনী তো আছেই।


বিজয়পুর যাবার রাস্তা

এমন অনেক গীর্জা চোখে পড়বে বিরিশিরি তে


বিজয়পুর টিলার উপর থেকে

বিরিশিরি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। এখনো থাকার যায়গা ঠিক করা হয় নি। YMCH এর রেস্ট হাউস সেদিন একদ্ম ফুল ছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমরা বাজারেই একটা রেস্ট হাউসে উঠলাম। বেশ ভালো রেস্ট হাউস, মালিক ও বেশ আলাপী। সারারাত কাটিয়ে ছিলাম সোমেশ্যরীর উপর তৈরী ব্রীজের উপর। নিচে বহমান সোমেশ্যরী আর আকাশে ছিল সেদিন চমৎকার এক চাঁদ। সবাই ভাবুক হয়ে গেলাম। রেস্ট হাউসে যখন ফিরে যাচ্ছিলাম তখন ফযরের আযান দিচ্ছিলো, আকাশের রঙ ফিকে হয়ে যাচ্ছিলো।

রাতের বার বি কিউ

পরদিন সকালে উঠেই গেলাম সুসং রাজ বাড়ী দেখতে। তার আগে দূর্গাপুর বাজারে নাস্তা করে নিলাম। তখন ই হোটেলে খবর পেলাম বিএসএফ বাংলাদেশের ২ জন গ্রামবাসীকে মেরে লাশ নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার বর্ডার টা দেখতে ইচ্ছা করছিল।রিকশা নিয়ে চলে গেলাম দেখতে। গারো পাহাড়ের ঠিক তলদেশেই বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বর্ডার। এখানে একটা পাহাড়ী ঝর্না আছে, যেটা ইন্ডিয়ার ভিতরে পড়েছে। অনেক সাহস নিয়ে চলে গেলাম সেই ঝর্না দেখতে। ঝর্না তো দেখা হয়ে উঠে নি, কিন্তু যা দেখলাম সেটা খুব অবাক করা আর শকিং।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বর্ডার
দুপুরে দূর্গাপুরে এসে দেখি উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সকালে ও এমন কিছু চোখে পড়ে নাই। লাল পতাকায় ছেয়ে গেছে ছোট এই জনপদ। আজকে মহান মে দিবস। লঙরখানা খোলা হয়েছে একটা। আজকে সবাই এক সাথে খাবে।
এত ছোট জায়গায় কমিউনিজম এর আধিক্য চোখে পড়ার মত। আর হবে নাই বা কেন, সুসং-দূর্গাপুরের ইতিহাস টাই তো কমিউনিজমের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জরিত।
আমাদের ও ভাগ্য খুলে গেল, বসে গেলাম কাঙালি ভোজে। যেই ভি আই পি ট্রিটমেন্ট টা পেয়েছিলাম, সেটা ভুলার মত না। শ্রমিকদের ভালোবাসা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।

এখন আবার ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে চিন্তা করেই কোমড় ব্যথা শুরু হয়ে গেল।

দূর্গম দূর্গাপুর [পর্ব এক]- Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৫০
৫০টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×