somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াটার ফলস এর ছোট গল্প [তিন]

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেকেন্ড স্টেপ এর প্রায় দশ ফিট উঁচু বিশাল একটা বোল্ডারের উপর থেকে লাফ দিয়ে নীচে নামলাম। উত্তেজনায় তখন থরথর করে কাঁপছি। ইতো মধ্যেই যথেষ্ট সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি। কিন্তু অবাক করা রাস্তা শেষই হচ্ছে না। সামনে আরও কিছু আছে ...অন্য রকম কিছু।

আমার সামনে আশফাক ভাই শ্যাঁওলা ধরা পিচ্ছিল পাথরের উপর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে। তার কাঁধে বিশাল ক্যামেরার ব্যাগ আর হাতে মিনিমাম ২কেজি ওজনের দামি ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে, পেন্ডুলামের মত এদিক-ওদিক করতে করতে পাথর বেয়ে নীচে নামছে। টীম লিডার হিসেবে, আমি তাই উনাকে চামের উপর একটু সাবধানবানী শুনাতে ভুললাম না।
- আশফাক ভাই, পাথর অনেক পিসলা, একটু সাবধানে নামেন। পরলে কিন্তু সত্তর- আশি ফিট নিচা গিয়া পরবেন। আপনারে বাঁচানের মত তেল নাই আমাগো।

আমি কথা টা মনে মনে বলেছিলাম নাকি ঝর্নার গমগমে আওয়াজে আমার কথা তার কানে প্রবেশ করে নাই সেটা এখন আর বলতে পারছি না। কয়েক মুহুর্ত পরেই দেখি আশফাক ভাই একটা পাথরের চিঁপার নীচে হারিয়ে গেল। পিছনে ফিরে বাকিদের দেখলাম। আমার ঠিক পিছনেই দ্বীপ আর তার পিছে কাউয়া ভাই। সবাই নিরাপদ দূরত্বরি আছে। মাঝের কোন একজন স্লিপ কাটলে যেন সবার এক সাথে দূর্ঘটনা না ঘটে। কাঁটা গাছের একটা ডাল সাবধানে ধরে আমিও পাথরের খাঁজে আমার শরীর গলিয়ে দিলাম। কিন্তু কি সমস্যা?? পা মাটিতে ঠেকছে না। নীচে কি যে আছে, না দেখেই এখন লাফ দিতে হবে। কেন যে একটা দড়ি আনলাম না, এখন আফসোস হচ্ছে। ওদিকে কাঁটা গাছের ডাল ধরে ঝুলে আছি। চার পাঁচ টা কাঁটা হাত লেগে এখন টনটন করছে। আর থাকতে না পেরে দিলাম লাফ...যা আছে কপালে...

ধপাস করে পরলাম পঁচা বাঁশ আর কাঠের বিরাট এক স্তুপ এর উপর। পায়ের কয়েক জায়গায় ভাঙা বাঁশের আঁশ লেগে কেটে গেল। হাঁটু ডলতে ডলতে উঠে দেখি সামনে আশফাক ভাই ধুমায়ে ফটো খিচতেসে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। দিলাম দৌড় ঝর্নার দিকে। যেই পাথরেই পা দেই সেটাতেই উস্টা খেয়ে পরে যাই। আবার উঠে দৌড় দেই পাথরের উপর দিয়ে। সামনে যেতেই তীব্র পানির একটা ঝাপটা মুখে এসে লাগল। বিমুঢ় হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের মুখোমুখি তাকিয়ে থাকতেই কেমন নেশার মত লাগে। পানির ঝাপটা গুলো সহ্য করে জোর করে তাকিয়ে আছি। কিছুতেই চোখ বন্ধ করব না।

প্রকৃতির এই উম্মাদনা দেখে কিছুতেই আর নিজেকে ধরে রাখা যায় না। টি-শার্ট খুলে ফেললাম। ঝাঁপ দিলাম পানিতে...তীব্র বিপরীত স্রোত ভেঙে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। এই ঝর্নার নীচে গোসল করতেই হবে। এত সামনে থেকে যখন উপরে তাকাই তখন আমি পুরাই ব্ল্যাংক...কে কি কেন কবে কোথায় সব কিছু ভুলে বেকুবের মত তাকিয়ে আছি। কি বিশাল...কি সুন্দর !!

তারপর হুস ফিরে আসতেই পাগলামি শুরু করে দিলাম। পালৈ দা ও আমার পিছন পিছন পানিতে ঝাঁপ দিল। দু'জন মিলে উম্মাতাল হয়ে গেলাম। পানিতে দাপাদাপি। ছোট বাচ্চা দের মত মারামারি, মাথা পানির নীচে ডুবিয়ে ধরা, ঘাড়ে নিয়ে পানিতে ছুঁড়ে ফেলা। দূরে তাকিয়ে দেখি পাথরের উপর দাঁড়িয়ে বাকীরা ছবি তুলছে। তখনই উপলব্ধি করলামঃ এই মুহুর্ত টুকুর জন্যই তো বেঁচে থাকা।


এক্সপিডিশনঃ ইষ্টার্ন বর্ডার [২০১১]
রাঙামাটি
ফটো ক্রেডিটঃ আশফাক হাসান

৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×