'আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমার ওপর। তিনি আমাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিলেন। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এ জন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের 'রক্ষিতা' হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এলাকার প্রায় সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার কোনো অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষায় নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে অভিনয় করেছি দিনের পর দিন। কথাগুলো নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি বার বার নূর হোসেনের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছি। আমার কষ্টগুলো বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে ছয় মাস আগেই বলেছি। সহায়তা চেয়েছি অনেকের। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। আমার কথা বিশ্বাসও করতে চায়নি কেউ। তখন কোনো পত্রিকাই এগুলো লিখতে সাহস পায়নি। এখন হয়তো নূর হোসেন নেই, তাই মিডিয়াও ঘটা করে এগুলো লিখছে। নীলা অকপটে শিকার করেন, নূর হোসেনের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাতযাপন, একসঙ্গে ভারত সফরসহ নানান কথা। নীলা বলেন, 'বাবা হাজি আবদুল মোতালেবের রাজনীতির সুবাদে (৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি) নূর হোসেনের সঙ্গে পরিচয়। তাকে চাচা ডাকতাম। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। এ সময়ই তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমার ওপর।
নূর হোসেন 'প্যানেল মেয়র' হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে আমাকে তার প্রচারণায় নামায়। নূরের খপ্পরে পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল মেয়র প্রার্থী আমার উকিল বাবা নজরুল কাকার (নিহত কাউন্সিলর নজরুল) বিপক্ষে চলে যাই। নির্বাচনে নূর হোসেনের পরাজয় ঘটে। কিন্তু তিনি আমার পিছু ছাড়েননি। আমার বাবা হাজি আবদুল মোতালেব, স্বামী আবু সায়েমসহ আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন। না চাইলেও নানা ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করেন। সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যাওয়ার আগে বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে নিয়ে যেতেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রার্থীদের সাক্ষাতের দিন পৃথক গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে বঙ্গভবনে এনেছিলেন নূর। এর নেপথ্যের কারণ ছিল আমি যেন কারও পক্ষেরই না হয়ে (শামীম ওসমান কিংবা আইভী রহমানের) শুধু নূরের পক্ষেই থাকি। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল নারায়ণগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জের এমপি-মেয়র হওয়া। নূর হোসেন প্রায়ই বলতেন, শামীম ওসমান-আইভীর চেয়ে তার টাকা বেশি। আর টাকা হলে নমিনেশন-ভোট সব কিনে নেওয়া যায়। তার টাকার গন্ধে এমপি, ডিসি, এসপি, র্যাব, ওসি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ক্যাডার সব ঘুরঘুর করে।' নীলা জানান, 'নূর আমাকে পেতে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকে। আমার মন জয় করতে কাজে-অকাজে বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দিত। কাজের অজুহাতে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আজগুবি গল্প করতেন। একদিন বলেই বসলেন, নীলা আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি। তুমি চলে আসো। তোমাকে রাজারহালে রাখব। আমি প্রতিবাদ করে তার অফিস থেকে চলে আসি। বলি, আপনি আমার চাচা। এ ছাড়া আমার স্বামী-সন্তান আছে। এরপর তার ফোন ধরা বন্ধ করে দিই। বাইরে বেরোনোও বন্ধ করে দিই। এরপরই নূর তার সহযোগী আরিফুল হক হাসান ও শাহজাহানকে আমার বাড়িতে পাঠান। একবারের জন্য হলেও নূর হোসেনের ফোন ধরতে বলেন। এ সময় নূর হোসেন ফোন করে বলেন, নীলা তুমি আমার সম্পর্কে জানো। যা বলি তার চেয়েও বেশি করি। আমার কথা না শুনলে তোমার বড় বিপদ হবে। তুমি স্বামীকে আর তোমার সন্তান হারাবে বাবাকে। এখন ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। তখন আমি নূরের সঙ্গে অভিনয় শুরু করি, শুধু স্বামী আর সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে।'
নীলা জানান, 'এসবের মধ্যে নূর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের দিয়ে এলাকায় আমাকে নিয়ে অপপ্রচার ছড়াতে শুরু করেন। এলাকার মানুষের মুখে মুখে রটে যায় নূর হোসেন নীলাকে বিয়ে করেছেন। বিষয়টি আমি স্বামীসহ পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করি। নূরের ঘোষণা দেওয়া 'স্ত্রী পরিচয়'-এর কারণে আমাকে আপনজনরাও অবিশ্বাস করতে থাকেন। এরই মধ্যে এক দিন নূর হোসেন ফোনে বলেন, তিন দিনের মধ্যে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে। নইলে আমার সন্তানের মুখ থেকে আজীবনের জন্য বাবা ডাক বন্ধ হয়ে যাবে। নিরুপায় হয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করি সবাই তো নূর হোসেনের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে গেলে উল্টো বিপদ বাড়বে। অবশেষে নিজের সাজানো সংসার তছনছ করি। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনি।'
হোটেল শেরাটনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাতযাপন এবং একই সঙ্গে ভারত সফর প্রসঙ্গে কাউন্সিলর নীলার দাবি, তখন তার পাঁচ বছরের মেয়ে সুমাইতাকে দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে ভর্তির জন্য ভারত যাওয়া হয়। ভর্তির সময় নূর হোসেন সুমাইতার অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তবে তার আরেক বন্ধুর ফ্যামিলির সঙ্গে যাওয়ার কারণে পাশাপাশি রুমে থাকলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। আর হোটেল শেরাটনে রাতে থাকলেও তারা আলাদা ছিলেন বলে দাবি করেন নীলা। নীলা বলেন, 'আমি খাটে ঘুমিয়েছে আর নূর হোসেন সোফায়। ওই রাতে নূর হোসেন মদ খেয়ে পুরোপুরি মাতাল ছিলেন।' কাউন্সিলর নীলা জানান, 'অনেক চাপাচাপি করলেও নূর হোসেনকে আমি বিয়ে করিনি। ইচ্ছার বাইরে নূরের সঙ্গে কথা বলেছি, দেখা করেছি। বিভিন্ন সময় নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে বাসায় পাঠিয়েছেন নূর। এক দিন ৩২ লাখ টাকা দিয়ে একটি এলিয়ন গাড়ি কিনে ড্রাইভারসহ বাসায় পাঠিয়েছেন। তবে তা ফেরত পাঠিয়েছি। এ ছাড়া আমার নামের জমিতে বাড়ি তৈরির সময় কিছু ইট-সিমেন্ট-রড কিনে দিয়েছেন। এগুলো করে প্রচার চালিয়েছেন যাতে সবাই সত্যি মনে করে যে, আমি তার স্ত্রী। অথচ সিটি করপোরেশনের এক কোটি টাকা দরের এক ঠিকাদারি কাজ এবং দুই কোটি টাকা মূল্যের সয়াবিন মিল ও তেলের গোডাউন বিক্রির কমিশন বাবদ আমার পাওনাই ছিল ৩৫ লাখ টাকা।' নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে কাউন্সিলর নীলা বলেন, বিষয়টি আমি ফোনে জেনেছি। আমি তখন চিকিৎসার জন্য বাবা-মাসহ ভারতে। তবে ভারতে থাকাকালে নূর হোসেন বার বার ফোন করে আমার অবস্থান জানতে চেয়েছেন। বলেছেন, তুমি থাক, আমি আসছি। ভয়ে আমি দ্রুত টিকিট কেটে ২৮ এপ্রিল দেশের উদ্দেশে রওনা দিই। এরপর থেকে তিনি আর ফোন দেননি।
প্রসঙ্গত, জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর। এ ছাড়া তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। 'রক্ষিতা' বানাতে চেয়েছিল নূর হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
'আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমার ওপর। তিনি আমাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিলেন। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এ জন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের 'রক্ষিতা' হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এলাকার প্রায় সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার কোনো অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষায় নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে অভিনয় করেছি দিনের পর দিন। কথাগুলো নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার।
গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি বার বার নূর হোসেনের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছি। আমার কষ্টগুলো বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে ছয় মাস আগেই বলেছি। সহায়তা চেয়েছি অনেকের। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। আমার কথা বিশ্বাসও করতে চায়নি কেউ। তখন কোনো পত্রিকাই এগুলো লিখতে সাহস পায়নি। এখন হয়তো নূর হোসেন নেই, তাই মিডিয়াও ঘটা করে এগুলো লিখছে। নীলা অকপটে শিকার করেন, নূর হোসেনের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাতযাপন, একসঙ্গে ভারত সফরসহ নানান কথা। নীলা বলেন, 'বাবা হাজি আবদুল মোতালেবের রাজনীতির সুবাদে (৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি) নূর হোসেনের সঙ্গে পরিচয়। তাকে চাচা ডাকতাম। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। এ সময়ই তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমার ওপর।
নূর হোসেন 'প্যানেল মেয়র' হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে আমাকে তার প্রচারণায় নামায়। নূরের খপ্পরে পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল মেয়র প্রার্থী আমার উকিল বাবা নজরুল কাকার (নিহত কাউন্সিলর নজরুল) বিপক্ষে চলে যাই। নির্বাচনে নূর হোসেনের পরাজয় ঘটে। কিন্তু তিনি আমার পিছু ছাড়েননি। আমার বাবা হাজি আবদুল মোতালেব, স্বামী আবু সায়েমসহ আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন। না চাইলেও নানা ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করেন। সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যাওয়ার আগে বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে নিয়ে যেতেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রার্থীদের সাক্ষাতের দিন পৃথক গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে বঙ্গভবনে এনেছিলেন নূর। এর নেপথ্যের কারণ ছিল আমি যেন কারও পক্ষেরই না হয়ে (শামীম ওসমান কিংবা আইভী রহমানের) শুধু নূরের পক্ষেই থাকি। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল নারায়ণগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জের এমপি-মেয়র হওয়া। নূর হোসেন প্রায়ই বলতেন, শামীম ওসমান-আইভীর চেয়ে তার টাকা বেশি। আর টাকা হলে নমিনেশন-ভোট সব কিনে নেওয়া যায়। তার টাকার গন্ধে এমপি, ডিসি, এসপি, র্যাব, ওসি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ক্যাডার সব ঘুরঘুর করে।' নীলা জানান, 'নূর আমাকে পেতে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকে। আমার মন জয় করতে কাজে-অকাজে বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দিত। কাজের অজুহাতে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আজগুবি গল্প করতেন। একদিন বলেই বসলেন, নীলা আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি। তুমি চলে আসো। তোমাকে রাজারহালে রাখব। আমি প্রতিবাদ করে তার অফিস থেকে চলে আসি। বলি, আপনি আমার চাচা। এ ছাড়া আমার স্বামী-সন্তান আছে। এরপর তার ফোন ধরা বন্ধ করে দিই। বাইরে বেরোনোও বন্ধ করে দিই। এরপরই নূর তার সহযোগী আরিফুল হক হাসান ও শাহজাহানকে আমার বাড়িতে পাঠান। একবারের জন্য হলেও নূর হোসেনের ফোন ধরতে বলেন। এ সময় নূর হোসেন ফোন করে বলেন, নীলা তুমি আমার সম্পর্কে জানো। যা বলি তার চেয়েও বেশি করি। আমার কথা না শুনলে তোমার বড় বিপদ হবে। তুমি স্বামীকে আর তোমার সন্তান হারাবে বাবাকে। এখন ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। তখন আমি নূরের সঙ্গে অভিনয় শুরু করি, শুধু স্বামী আর সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে।'
নীলা জানান, 'এসবের মধ্যে নূর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের দিয়ে এলাকায় আমাকে নিয়ে অপপ্রচার ছড়াতে শুরু করেন। এলাকার মানুষের মুখে মুখে রটে যায় নূর হোসেন নীলাকে বিয়ে করেছেন। বিষয়টি আমি স্বামীসহ পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করি। নূরের ঘোষণা দেওয়া 'স্ত্রী পরিচয়'-এর কারণে আমাকে আপনজনরাও অবিশ্বাস করতে থাকেন। এরই মধ্যে এক দিন নূর হোসেন ফোনে বলেন, তিন দিনের মধ্যে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে। নইলে আমার সন্তানের মুখ থেকে আজীবনের জন্য বাবা ডাক বন্ধ হয়ে যাবে। নিরুপায় হয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করি সবাই তো নূর হোসেনের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে গেলে উল্টো বিপদ বাড়বে। অবশেষে নিজের সাজানো সংসার তছনছ করি। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনি।'
হোটেল শেরাটনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাতযাপন এবং একই সঙ্গে ভারত সফর প্রসঙ্গে কাউন্সিলর নীলার দাবি, তখন তার পাঁচ বছরের মেয়ে সুমাইতাকে দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে ভর্তির জন্য ভারত যাওয়া হয়। ভর্তির সময় নূর হোসেন সুমাইতার অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তবে তার আরেক বন্ধুর ফ্যামিলির সঙ্গে যাওয়ার কারণে পাশাপাশি রুমে থাকলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। আর হোটেল শেরাটনে রাতে থাকলেও তারা আলাদা ছিলেন বলে দাবি করেন নীলা। নীলা বলেন, 'আমি খাটে ঘুমিয়েছে আর নূর হোসেন সোফায়। ওই রাতে নূর হোসেন মদ খেয়ে পুরোপুরি মাতাল ছিলেন।' কাউন্সিলর নীলা জানান, 'অনেক চাপাচাপি করলেও নূর হোসেনকে আমি বিয়ে করিনি। ইচ্ছার বাইরে নূরের সঙ্গে কথা বলেছি, দেখা করেছি। বিভিন্ন সময় নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে বাসায় পাঠিয়েছেন নূর। এক দিন ৩২ লাখ টাকা দিয়ে একটি এলিয়ন গাড়ি কিনে ড্রাইভারসহ বাসায় পাঠিয়েছেন। তবে তা ফেরত পাঠিয়েছি। এ ছাড়া আমার নামের জমিতে বাড়ি তৈরির সময় কিছু ইট-সিমেন্ট-রড কিনে দিয়েছেন। এগুলো করে প্রচার চালিয়েছেন যাতে সবাই সত্যি মনে করে যে, আমি তার স্ত্রী। অথচ সিটি করপোরেশনের এক কোটি টাকা দরের এক ঠিকাদারি কাজ এবং দুই কোটি টাকা মূল্যের সয়াবিন মিল ও তেলের গোডাউন বিক্রির কমিশন বাবদ আমার পাওনাই ছিল ৩৫ লাখ টাকা।' নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে কাউন্সিলর নীলা বলেন, বিষয়টি আমি ফোনে জেনেছি। আমি তখন চিকিৎসার জন্য বাবা-মাসহ ভারতে। তবে ভারতে থাকাকালে নূর হোসেন বার বার ফোন করে আমার অবস্থান জানতে চেয়েছেন। বলেছেন, তুমি থাক, আমি আসছি। ভয়ে আমি দ্রুত টিকিট কেটে ২৮ এপ্রিল দেশের উদ্দেশে রওনা দিই। এরপর থেকে তিনি আর ফোন দেননি।
প্রসঙ্গত, জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর। এ ছাড়া তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:২৯