somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নিজামীর পিছনে নামাজ পড়লোনা জেএমবি'র এহসার সদস্য সৈকত” গাজী রাহাত কবির

১৩ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“নিজামীর পিছনে নামাজ পড়লোনা জেএমবি'র এহসার সদস্য সৈকত”
গাজী রাহাত কবির

জামাতের তিন নেতা নিজামী-সাঈদী-মুজাহিদ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া গুলোর প্রধান ও প্রথম মজাদার খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দলটির নানা খবরা খবর, গাল গল্প। তিন নেতার ১৬ দিনের রিমাণ্ডের পর “গোয়েন্দা সূত্র” গুলোর বরাত দিয়ে নিত্য নতুন খবর দিচ্ছে এই মিডিয়াগুলো বিশেষ করে দৈনিকগুলো। এর মধ্য প্রধান দুটি খবরের একটি, জেএমবি, হরকাতুল-জিহাদ সহ সব জঙ্গী সংগঠন হচ্ছে জামাতের পুত্রধন, মানে ওরা জামাতেরই অংগ সংগঠন। জামাত এদের টাকা পয়সা, শলা পরামর্শ, লোকবল তথা যা যা দুধকলা লাগে সবই নিজ খরচেই সরবরাহ করে থাকে নিয়মিত। আরেকটি খবর হলো সাহিত্যিক ড. হুমায়ন আজাদকে জামাত হত্যা করেছে। বিশেষ করে সাঈদীর শিষ্যরাই হত্যা করছে এই প্রগতিশীল লেখককে, সেই সুদূর জার্মানীর মিঊনিখ গিয়ে।

১.

ক. ৭ জুলাই মানবজমিন “গোয়েন্দা সূত্র” জেনে লিখেছে,” জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সেল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে রাশিদুল কবিরকে। তবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি বাক্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন জেএমবি’র এহসার সদস্য সৈকতের সঙ্গে। নামাজের সময় হাজতিদের ইমামতি করতে চাইলে জেএমবি’র এহসার সদস্য আপত্তি জানান। পরে আপত্তি না শুনলে সৈকত একাই নামাজ আদায় করে।“ (সূত্রঃ মানবজমিন, ৭ জুলাই, ২০১০)। পত্রিকাটি আরও লিখছে, “ আরও যেসব বিষয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ জঙ্গি কানেকশনের উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতের পরিকল্পনা, জেএববি’র কাছে বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের কারণ, ওয়াজ মাহফিলে সাঈদীর সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক, জামায়াতের সুপারিশ ছাড়া কেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায় না, ইসলামী দলসহ ৩৬টি জঙ্গি সংগঠনের আর্থিক সহযোগিতার কারণ, বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে বিষোদগারের উদ্দেশ্য, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে সভা-সেমিনার করার উদ্দেশ্য ও ব্যয়িত অথের্র পরিমাণসহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জামায়াতের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা।“

খ. কালের কন্ঠ “গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে” লিখেছে, “হাজতে কথাকাটাকাটি, ডিবির হাজতখানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জেএমবির এহসার সদস্য সৈকতকে। রবিবার এই এহসার সাঈদীকে দেখেই ক্ষেপে যান। সাঈদীকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ শুরু করেন। তাঁকে কাফের আখ্যা দেয়। সৈকত বলে, 'আপনি ওয়াজ করেন একরকম আর কাজ করেন নিজের সুবিধামতো।' এ ছাড়া সৈকত নিজামীর পেছনে নামাজ পড়তেও অস্বীকৃতি জানায়। এক কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাতে নামাজের সময় হলে নিজামী নামাজে দাঁড়ান। অন্য আসামিরা নিজামীর পেছনে নামাজে দাঁড়ালেও সৈকত নিজামীকে ইসলামের লেবাসধারী আখ্যা দিয়ে তাঁর পেছনে নামাজ না পড়ে আলাদাভাবে নামাজ আদায় করে। (সূত্রঃ কালের কন্ঠ, ৬ জুলাই, ২০১০)

প্রিয় পাঠক, পত্রিকাগুলোর মতে জ়েএমবি হচ্ছে জামাতেরই অংগ সংগঠন । শুধু জ়েএমবি নয় মোট ৩৬ টি জঙ্গী সংগঠনকে জামাত দেয় বছরে ৩০০ কোটি টাকা (সূত্রঃ ইত্তেফাক, সমকাল, ৫ জুলাই, ২০১০) জামাত মুল সংগঠন। জ়েএমবি ও জামাত দুদলের আদর্শ মূলত এক ও অভিন্ন। দুদলেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য কাধে কাধ মিলে কাজ করছে! তাহলে সেই মূল সংগঠনের (জামাত) তিন প্রধান নেতা নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদীকে কাফের, ভন্ড, ইসলামের লেবাসধারী আখ্যা দিলেন অধঃনস্ত সংগঠনের (জেএমবি) নেতা এসছার (সিনিয়র সদস্য) সৈকত? মূল নেতার পিছনে নামাজও পড়লেন না কেন সৈকত? তাদের এতো মিল থাকলে তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না। তিন প্রধান নেতার প্রতি সৈকতের মারমুখি আচরন কি প্রমান করে না, জঙ্গীবাদীদের সাথে জামাতের আদর্শিক অমিল প্রকট? চোর চুরি করলে যেমন কিছু প্রমান রেখে যায় তেমনি এসব নিউজপেপার কাম ভিউজপেপার (views paper) ভালভাবে পড়লে কিছু সত্যের ছিটে ফোটাও পাওয়া যায় এভাবেই।

২.

ড. হুমায়ুন আজাদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। লিখেছেন, “নারী”, "পাকসার জমিন সাদ বাদ" সহ অসংখ্য উগ্রপন্থি নাস্তিক ধর্মী লেখা। নিজেকে ঘোষনা করেছিলেন নাস্তিক হিসেবে। পরবর্তীতে কে বা কারা তাকে বাংলা একাডেমীর সামনে ছুরিকাহত করেন। তার উপর হামলা অবশ্যই নিন্দনীয়। সুস্থ হয়ে তিনি জার্মানীর মিঊনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর উচ্চতর গবেষণা করার জন্য। স্কলারশীপটি যে প্রতিষ্ঠান থেকে হুমায়ুন আজাদকে দেয়া হয় তা ছিল একটি প্রথাবিরুদ্ধ এন্টি-রিলিজান সংস্থা (PEN International নামক একটি আন্তর্জাতিক লেখক সংস্থা)।

ইত্তেফাকে (৭ জুলাই, ২০১০) সাঈদী সম্পর্কে লিখেছে "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ড. হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এক ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মারা গেছে। তাকে মুরতাদ ঘোষণা করা হয়েছিল। তার নাম মুখে নেয়া পাপ। তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় হতে হয়েছে। তার কবরে যেন আগুন জ্বলে এই দোয়া করা হয় বলে সাঈদী ওয়াজ মাহফিলে বলেন।"

আর জনকণ্ঠের মতে (৭ জুলাই, ২০১০) সাঈদী বলছেন "এক মুরতাদ ছিল। আমরা তাকে সরিয়ে দিয়েছি। এ দেশে সরিয়ে দিলে নানা ঝামেলা হতো। তাই বিদেশে নিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।"

কেউ কেউ লিখেছে, হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা মিষ্টি খেয়ে আনন্দ-উল্লাস করেছিল। প্রথম মিষ্টিটি খেয়েছিল গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। পাঠক, বলুন জনকণ্ঠ ও ইত্তেফাকের সাথে বক্তব্যের কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ? রিপোর্টটি ভালভাবে পড়ুন। "তার নামে মুখে আনা পাপ" বলা মানেই কি তাকে হত্যা করা? সমকাল, বিডিনিউজ, প্রথম আলো, কালের কন্ঠ সহ প্রায় সব পত্রিকাই লিখেছে, ড. আজাদ হত্যা মামলায় সাঈদীকে জড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ তার হত্যার জন্য জামাত বিশেষ করে সাঈদী দায়ী।

ড. আজাদের মৃত্যু হওয়ার পর জার্মান পুলিশ তদন্ত করে যা বের করেন তা হলো, তার মূত্যুর জন্য কোন প্রকার হত্যা প্রচেষ্টা দায়ী এ ধরনের কোন আলামত তাদের হাতে নেই। বরং সেই সময়ের বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে, সন্দেহ করা হচ্ছে তার মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত মদ্য পান দায়ী বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিলো। ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত নিজে গিয়ে ড. আজাদের মৃত্যুর জার্মান পুলিশী রিপোর্ট তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। তার পরিবার সেই রিপোর্ট আর প্রকাশ করেনি। পত্রিকাগুলোর মতে, জার্মানীতে সাঈদী ড. আজাদকে হত্যা করিয়েছেন। তাহলে, যে স্কলারশিপটি হুমায়ুন আজাদকে দেয়া হয় তার ব্যবস্থা নিশ্চয়ই জামাতে ইসলামী করেছিল! PEN International তাহলে জামাতের কোন সংস্থা!

জামাত-শিবির মোল্যাবাদীরা জার্মানীতে এসে হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করল। ভালো কথা। মোল্যাবাদীরা ওনাকে জার্মানীর মিউনিক এসে হত্যা করল, আর জার্মান পুলিস বসে বসে আঙ্গুল চুসলো? তারা কিছুই টের পেল নাটা? এটা কি বাংলাদশের ফুলিস? জার্মানীর পুলিস সম্পর্কে কোন ধারনা আছে? মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা চাই। নব্য গোয়েবলসদের কাছে প্রশ্ন, জামায়াত বা সাঈদীর হাত যদি এতই লম্বা হতো, জার্মানীর মিঊনিখ গিয়ে হত্যা করতে পারল আর নিজের গ্রেফতার, রিমান্ড ঠেকাতে পারল না?

বিগত একদশকের সব বোমা হামলা-সন্ত্রাস, সর্বশেষ পিলখানা ট্র্যাজিডি, যেখানে যা ঘটেছে, এসব মিডিয়া সমস্বরে বলেছে এটা জামায়াত শিবিরের কাজ, না হয় তাদের ইন্দন। কিন্তু কোথাও কি এতটুকু প্রমান মিলেছে ? পিলখানা অন্যতম নায়ক লেদার লিটন (ছাত্রলীগ নেতা), তোরাব আলী (লীগ নেতা) যদি বিএনপি-জামায়াতের কেউ হতো? জ়েএমবির শায়খ আব্দুর রহমান যদি মির্জা আজমের (যুবলীগ নেতা)ভগ্নিপতি না হয়ে জামায়াতের কারো আত্মিয় হতো? ইডেনের নির্যাতিত ছাত্রীদের খদ্দের যদি বিএনপি-জামাতের কেঊ হতো, ভাবতে পারেন কি করতো এসব নব্য গোয়েবলস মিডিয়াগুলো?


“নিজামীর পিছনে নামাজ পড়লোনা জেএমবি'র এহসার সদস্য সৈকত”
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×