হিব্রুদের ঈশ্বর মূলত: স্থানীয় এক ঈশ্বর, ইসরাইলের জাওয়েহ (কাছাকাছি এলাকায় অন্যান্য এরকম ট্রাইবাল ঈশ্বরের নাম ছিল ডাগন ও চেমশ)। কিন্তু খ্রিস্টান যুগের আগে অষ্টম, সপ্তম, ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে অনেক ধর্মীয় নেতা ইশ্বর জাওয়েহকে শুধু হিব্রুদের ঈশ্বর থেকে সমগ্র পৃথিবীর সব মানুষের ঈশ্বরের ধারণায় উত্তরণ ঘটান। এসব ধর্মীয় মহাপুরষদের মধ্যে রয়েছেন, আমোস, হোসিআ, প্রথম ঈসাই, জেরেমিয়া এবং দ্বিতীয় ঈসাই। হিব্রু ভাষার এসব নবীরা এই মতবাদটিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা বলেন, যদিও ঈশ্বর তাদের জাতিকে এক বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন ঈশ্বরের কথা পৃথিবীর সবাইকে জানান দিতে তবুও তিনি শুধু তাদের ঈশ্বর নন, বিদেশীদেরও ঈশ্বর। অর্থাৎ তারা এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন যে, এরকম একজন ঈশ্বর শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাসের জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, বরং তাকে হতে হবে সব জাতি ও জনগোষ্ঠীর।
ইহুদিদের তৈরি এই একক ঈশ্বরের ধারণাটি আরো বিশদভাবে দার্শনিক ব্যাখ্যাযুক্ত হয়ে স্থান নেয় খ্রিস্টান ধর্মে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের এই একক ধারণার উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে পৃথিবীতে অনেক নতুন ধর্মের জন্ম হয়েছে। তাছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরনো অনেক স্থানীয় ধর্ম এই ধারণার দার্শনিকতাকে তাদের ধর্মচিন্তার মধ্যে গ্রহণ করে পুরনো ধর্মকে নতুন সাজ-পোশাক পরিয়েছে। তবে যেহেতু ধর্মসংক্রানত্দ এ্যাকাডেমিক আলোচনায় এই মনোথিইজমকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের একত্বের ধারণা বলেই আলোচনা করা হয় সেহেতু আমিও তাই করছি।
অসীম ও স্ব-স্বাধীন ঈশ্বর
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ঈশ্বর চেতনায় ঘুরে ফিরে একটি কথা আসে তাহলো ঈশ্বর অসীম, তার কোনো সীমা নেই। এই যে ঈশ্বরের অসীমতা ও সর্বব্যাপ্তিতা এই ধারণাকে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এই মতবাদের সমর্থকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সামনে নিয়ে আসেন। সেটি হচ্ছে আমাদের বলা উচিত নয় যে ঈশ্বর আছেন কারণ এই বক্তব্যও ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০