somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরের পৃথিবীর বাইরের দ্বীপপুঞ্জ ও প্রাণীরা

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থে মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্কের এক পৌরাণিক ব্যাখ্যা আমরা পাই। মূল গল্প ওল্ড টেস্টামেন্টের। আরব অঞ্চলের ধর্মগুলো সে গল্প নিজেদের মত করে পরে অদল-বদল করে নিয়েছে। সেই গল্পকথার সূত্র ধরে আমরা জানি, স্বর্গোদ্যানে মহাসুখে বিচরণরত আদমকে বেআদব শয়তান কেবলি ফুঁসলাত। আদম সেই ধান্দায় পড়ে জ্ঞানবৃৰের ফল খায়। তারপর এই অপরাধে স্বর্গ থেকে আদম ও হাওয়ার পপাৎ ধরনীতল। ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞানের জন্য নাকি অনেক ইশারা আছে কিন্তু কিভাবে আদম স্বর্গ থেকে টুপ করে মাটির পৃথিবীতে নেমে এলো, মহাশূন্য পাড়ি দিল - সে যাত্রা, বোরাকের পিঠে করে, জিব্রাইলের ডানায় না স্বগর্ীয় প্যারাসুটে করে ছিল, তার ইশারা কোথাও পাওয়া যায় না। (মানুষ তো আর মহাশূন্য ভেদ করে টুপ করে পড়তে পারে না। টেস্টামেন্টযুগে মানুষ এই গল্পের ফাঁকগুলো ধরতে না পারলেও এখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রের কাছেও এর নানা ফাঁক ধরা পড়ে যায়।)

তবে টুপ-করে-পড়া তত্ত্ব অনুযায়ী তারপর থেকে আদম ও ইভ পৃথিবীতে মনুষ্য-সনত্দান উৎপাদন করে যাচ্ছে। প্রাণীগুলোও টুপ করে পড়েছিল কিনা সে ব্যাখ্যা কোথায় আছে আমি জানি না। তবে মানুষ যে মহাশূন্যের ওপার থেকে এসেছে সেই ধারণাই ছিল মানুষের দীর্ঘদিন। টুপ-তত্ত্বের সাথে যুক্ত আছে নাও-তত্ত্ব। তাতে বলা হয়েছে মরম্নভূমিতে যে মহাপস্নাবন হয়েছিল তা থেকে সব জীবের নমুনা নৌকায় করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নোয়া বা নূহ। অর্থাৎ মানুষ বা প্রাণী, পৃথিবী বা সাগর এসবকিছুই বাইবেলের ঈশ্বরের নির্দেশে সৃষ্ট ও তার নির্দেশ মেনে চলে। কিন্তু ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান সত্ত্বা সম্পর্কে বাইবেলের এই সার্টিফিকেটে গোলমাল বাঁধিয়ে দিলো পৃথিবীর এক দ্বীপপুঞ্জ। গ্যালাপাগোস। দৰিণ আমেরিকার কাছাকাছি এই দ্বীপগুলোর কথা প্রথম জানা যায় বিশপ অব পানামার কাছ থেকে।

ঝড়ে দিকভ্রানত্দ হয়ে বিশপের জাহাজ এসেছিল ছোট ছোট অদ্ভুত এই দ্বীপপুঞ্জে। বিশপ দেখলেন পানির ভেতর থেকে সাঁতরে উঠে আসছে কালো ড্রাগন। তারা গা থেকে পিচকারি দিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে বিষ। বৃৰহীন দ্বীপে কালো কাঁপড়ের মত ভাঁজ হয়ে থাকা সত্দর সত্দর মাটি। উঁচু পাহাড়ের মুখ থেকে বের হচ্ছে কখনও আগুন আর কখনও ধোঁয়া। লম্বা লম্বা ঠোঁটের ভয়ংকর সব পাখি। আর অতিকায় বিশাল কচ্ছপ। এমন দৃশ্য শুধু হতে পারে নরকের। বিশপ ভাবলেন, নরক বুঝি পৃথিবীতেই আছে। ফিরে গিয়ে সেই গল্পই তিনি শোনালেন সবাইকে।

তারপর এলো জলদসু্যরা। তারপর জলদসু্যদের খোঁজে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। তারপর ব্রিটিশ সরকারের ভূমি জরিপকারী দল। এই জরিপকারী দলে ছিলেন তরম্নণ প্রকৃতিবাদী চার্লস। দ্বীপপুঞ্জের একেক দ্বীপ থেকে তিনি অজস্র প্রাণী ও উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করলেন। তারপর লৰ্য করলেন ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে কিভাবে ভিন্নরকম হয়েছে পাখিগুলোর চঞ্চু, গায়ের লোম। যে দ্বীপে আগ্নেয়গিরি আছে সেখানকার কচ্ছপগুলোর সাথে যে দ্বীপে আগ্নেয়গিরি নেই সে দ্বীপের কচ্ছপগুলোর রয়েছে অমিল। অর্থাৎ পরিবেশ অনুযায়ী প্রাণী বদলাচ্ছে। শুধু তাই নয়, চার্লস দেখলেন সময়ের সাথে দ্বীপগুলোও বদলাচ্ছে। চালর্সের পাওয়া প্রমাণগুলো ওল্ড টেস্টামেনের টুপ-করে-পড়া তত্ত্বের সাথে মিলে না। যদি টুপ করেই পড়ে থাকে প্রাণী তবে এই দ্বীপপুঞ্জের প্রাণীগুলো কেনো পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। কেন এই দ্বীপপুঞ্জের একেক দ্বীপে একই পাখির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পার্থক্য দেখা যায়। কেন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে প্রাণীদের মধ্যে পরিবর্তিত হওয়ার লৰণ দেখা যাচ্ছে।

এই দ্বীপের অভিজ্ঞতা থেকে শুরম্ন। তারপর আরো নানা গবেষণার পর চার্লস লিখলেন তার যুগানত্দকারী বই দ্য অরিজিন অব স্পেশিস। সেই বইতে ডারউইন দিলেন নতুন তত্ত্ব- বিবর্তনবাদ। টুপ-করে-পড়া তত্ত্বের সমর্থকরা চটে গেল ভীষণভাবে। তাদের ঈশ্বরের কৃতিত্বকে খাটো করার জন্য ডারউইনকে তারা দোষারোপ করলো নানাভাবে। বিবর্তনবাদের বিরম্নদ্ধে তাদের সেই আক্রোশ এখনও চলছে। টুপ-করে-পড়া তত্ত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তা চালিয়ে যেতেই হবে।

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বিচিত্র সব প্রাণীদের ছবি দেখুন। আরো বিসত্দারিত জানতে ঢুঁ মারতে পারেন বিজ্ঞান বিষয়ক যেকোনো ওয়েবসাইটে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৫:৫৮
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×