গত পর্ব আর এই পর্বের ভেতর আবার ৫ মাস গ্যাপ! এর মধ্যে যে মেজাজ খারাপ করা কিছু ঘটেনি তা নয়। কিন্তু কেন যেন লেখা হয়ে ওঠেনি। এই সিরিজটা যারা আগে পড়েননি, তাদের জন্য কয়েকটা কথা বলা যেতে পারে। এই লেখাগুলোতে আমি এমন কিছু ঘটনা শেয়ার করে থাকি, যেগুলো আমার সাথে ঘটে। এমন কিছু ঘটনা যেগুলো বেশ বিরক্তিকর। মেজাজ খারাপ করে দেবার জন্যে যথেস্ট। ঘরে বাইরে যথেস্ট ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত বলেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই ব্লগের পাতায় মনে ক্ষোভ টুকু উগড়ে দেয়া!
আচ্ছা এবারে শুরু করি তাহলে!
ঘটনা ১
গত ১৪ এপ্রিল মানে পহেলা বৈশাখের কথা। এদিনটা আমি যেখানেই থাকি, শেষমেষ যেভাবেই হোক রাজশাহীতে কাটাবার চেষ্টা করি, এবারো তার অন্যথা হয়নি। সকালে আব্বুদের একটা ছোটখাট ফ্যামিলি পিকনিকে জয়েন করতে গিয়ে প্রতিবারের ট্রেডমার্ক কাজ- রাজশাহী ভার্সিটিতে যেতে বেলা হয়ে গেলো। দুপুর ১২টায় পৌছলাম। কড়া একখানা রোদ সহ্য করে কাজলা গেট থেকে চারুকলা মোটামুটি সবটা একচক্কর ঘুরে দেখে নিলাম! তাজ্জব ব্যপার! পরিচিত একটা প্রাণীও নেই! মেজাজ খারাপ হলো! সকালে ওই পিকনিকে না গেলেই তো পরিচিত ব্যাচমেট, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হতো! হতাশ মনে ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট এর সামনে এসে একমাত্র জিগরি বন্ধুটারে ফোন দিলাম। ও আবার ঘুমায় ৫টা/৬টায়, ওঠে ১২টায়। পাঁড় ইনসমনিয়াক। ও বলল ঘুম ভেঙ্গেছে, আসতে কিছুক্ষণ লাগবে। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের সামনে রাজশাহীর একমাত্র কমিউনিটি এফ এম রেডিও পদ্মা'র আয়োজনে একটা সংগীতানুষ্ঠান হচ্ছিল। ওখানে তখন গান গাইছিলো রাজশাহীর ক্ষুদে গান রাজ নদী। সামহাও, ও যা গাচ্ছিল, আমি ওর ভয়েস বাদে সবই শুনছিলাম। জানিনা মনিটরে মিক্সিং এর গন্ডগোল কিনা! ওর গোটাতিনেক গান শোনার পর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো! নদী আবার আমার একটু পরিচিত। ও উঠে যাবার সময় আমাকে দেখে কুশল বিনিময়ের পর জানতে চাইল গান ক্যামন লাগল। এখন কী বলি! বললাম- হ্যা দারুণ জটিল একদম ফাটায় দিসো তো! ও চলে গেলে আমার জিগরি বন্ধুটা এসে পৌছাল। ততক্ষণে দুটা। আরো একবার চারুকলা পর্যন্ত চক্কর দিলাম! মাত্র দুজন ইয়ারমেটে আর একজন সিনিয়র ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো! ভাবছিলাম নিশ্চয়ই সবাই অনেক সকালে এসে ১২ টার মধ্যে চলে গেসে, আর না হলে সবাই ডেটিং করতেসে! কাউকে তো ভার্সিটিতে সিঙ্গেল ঘুরতে দেখলাম না! কিন্তু আমার তো সেরকম কেউ নাই। মনের দুঃখে ফেবু তে স্ট্যাটাস দিলামঃ অব্বাই! যেখানেই যাই সবাই আপ্পি নিয়ে ঘুরতেসে! এ জীবন আর রাখপো না! :'( আধাঘন্টা না যেতেই দেখি ৩৬ টা লাইক! বুঝলাম আমি একাই না!
যাহোক, দুপুর হয়ে গেছে, কিছু খাওয়া দরকার মনে করে বেরোলাম ভার্সিটি থেকে। কাছেই একটা ফাস্টফুডের দোকান আছে, সেখানে ঢুকলাম দুই বন্ধু। অর্ডার দিলাম দুইটা চীজ বার্গার, ফ্রেঞ্চফ্রাইজ আর দুইটা চকোলেট মিল্কশেক। আধাঘণ্টা বাদে প্রথম কিস্তিতে বার্গার আর ফ্রেঞ্চফ্রাইজ গুলো দিয়ে গেলো। আমরা নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে কোথাও চীজের চিহ্নমতও দেখলাম না! অথচ নর্মাল চিকেন বার্গারের চেয়ে এটার দাম আরো ১৫ টাকা বেশি। আর ফ্রেঞ্চফ্রাই গুলো খেতে গিয়ে মনে হচ্ছিল দাঁত গুলো বুঝি আজকেই খুইয়ে আসতে হবে, এতই শক্ত! এমনিতেই রোদে ঘুরে ঘুরে মেজাজ বিলা, এই বিটলামি দেখে সেটা আরো বিলা হলো! এরপর তারা আবার মিল্কশেকের কথা ভুলে গেসে! মনে করিয়ে দিয়ে আসলাম। আরো ২০ মিনিট বাদে আসলো সেটা। একচুমুক দিয়েই বুঝতে পারলাম, এই জিনিস মিল্কশেক না। লাচ্ছির ভেতর চকোলেট সিরাপ দিয়ে "একটা কিছু" বানিয়ে চালিয়ে দিয়েছে! এই জিনিসের সাথে আমি পরিচিত। বেশ অনেকদিন আগে মিটলোফ নামে সাহেব বাজারের ফাস্টফুড শপটাতে মিল্কশেক শেষ হয়ে গেলে লাচ্ছি কে মিল্ক শেক বলে চালিয়ে দিতো। কাজেই বুঝতে মোটেও দেরি হলো না। মেজাজ পুরাই ফরটি নাইন হয়ে গেলো। এখানেও আবার ১৫ টাকার ঘাপলা! কিছু বললাম না তখনি। বিল দেয়ার সময় কাউন্টারে থাকা লোকটা যখন হিসেব করছে তখন বললামঃ মিল্কশেক লিখছেন ক্যানো? লাচ্ছি না দিলেন! লোকটা বললঃ না মিল্কশেকই তো দিলাম! আমি বললামঃ অইটা মিল্কশেক ছিলো? আমাকে মিল্কশেক বানানো শেখান? আজকে নতুন খাচ্ছি নাকি আমি! উনি তো কোনভাবে স্বীকার করে না। শেষে আমি বললাম, দেখি আরেকটা মিল্কশেক অর্ডার নিন। আমি আপনাদের রান্নাঘরে যাবো। আমার সামনে বানাবেন। কি দিয়ে বানান তাই দেখবো আমি। কিছুতেই রাজী হয়না! শেষে বললো ভুল হয়ে গেসে বস আসলে দুধ শেষ তাই লাচ্ছি দিয়েই ম্যানেজ করে দিসি। আমি বললামঃ না থাকলে বলবেন নাই! প্রতারণা ক্যানো করছেন মানুষের সাথে? আপনি কি চান আপনার দোকানের নামে আমি ফুড কোর্টে কমপ্লেইন করি? উনি বেশ কয়েকবার মাফ চেয়ে স্যরি ট্যরি বলার পর আমার কাছে লাচ্ছির বিলই রাখা হলো।
ঘটনা ২
আজকে সন্ধ্যে বেলা। সেমিস্টার ব্রেক চলছে। পুরনো বন্ধুরা মিলে রাজশাহীর বড়কুঠিতে নদীর পাড়ে একটা নতুন ফাস্টফুড শপ হয়েছে, সেখানে বাইরেও চেয়ার-টেবিল পাতা থাকে। ওখানে বসে আছি। আমাদের ঠিক উল্টোপাশের টেবিলে দুজন মেয়ে বসে আছে, আইসক্রিম খাচ্ছে। কোন কারণবশতঃ ওরা আমাদের দিকে প্রায়ই তাকাচ্ছিল, এবং প্রতিবারে অনেক্ষণ করে। সেটা দেখে আমাদের কৌতুহল হলে আমরাও কয়েকবার তাকালাম। চোখাচোখি হলো। আমাদের চেয়ে বয়সে বছর দুই/তিন বড় হবে, অনুমান করলাম। দুজনেই যথেষ্ট সুন্দরী বলা যায়। ঠিক বুঝলাম না আমাদের দিকে এতবার তাকানোর কী হলো! যাহোক একটু পরে আমরা ৩ জন অর্ডার দিতে ভেতরে গেলাম। ফিরে আসতে গিয়ে দেখি, আমার একটা বন্ধু ওদের টেবিলে গিয়ে কথা বলছে! এটা আমার সেই বন্ধুটা, যার কথা উপরের ঘটনাতে বলেছি। আমরা যেতেই কি হলো কাহিনী বুঝলাম না! যাহোক ও ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলামঃ কিরে তোর পরিচিত নাকি? ও বলল- না। তো হঠাৎ কি কথা বলছিলি? ও বললো তোরা যেতেই আমাকে ইশারা করলো। প্রথমে বুঝিনি। পরে আমার ডাকল। গেলাম। বললো ক্যামন আছেন? বললাম ভালো। তারপর বললো এখানে বসবেন নাকি আমাদের সাথে? বসেন? আমি বললাম না ঠিক আছে আমি এখানে বন্ধুদের সাথে আছি তো। তখনই বুঝলাম, ওরা ক্যানো ডাকলো। আমরা জিজ্ঞেস করলাম ক্যানো? ও বললো আমার মনে হয় এরা ড্র্যাব। (প্রস্টিটিউট এর একটা প্রতিশব্দ, ক্রাউডেড জায়গায় সহজে বলার সুবিধার্থে ব্যবিহার করি আমরা) আমরা বললাম যাহ! তাই হয় নাকি! আসলে ওদের দেখে মনে হচ্ছিল না সেরকম কিছু হতে পারে, তাও আবার রাজশাহীর মতো এলাকায়! তাই আমরা আইডিয়া করলাম মনে হয় আমাদের সাথে মজা করতে চেয়েছে, তাই এরকম করলো হয়তো। কিন্তু মন উশখুশ করছিলো। ফাস্টফুড শপের মালিক আবার আমাদের এক বন্ধুর পরিচিত। ও বললো, কিছুক্ষন আগে এই মেয়েগুলোর সাথে ওনাকে কথা বলতে দেখলাম। উনি হয়ত চেনে। মালিককে জিজ্ঞেস করা হলো। প্রথমে যা ধারণা করা হয়েছিলো তাই। এরা নাকি হাই ক্লাস প্রস্টিটিউট। বেশ অবাক হলাম। রাজশাহীতে পাব্লিক প্লেসে এত সাহসী অ্যাপ্রোচ বেশ বিরল! আবার খারাপ ও লাগলো। কি একটা জীবন ওদের! তাই ফিরতি পথে আমি আর আমার বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, আগামী বছর থেকে ঠিক এই দিনে মানে ১৮ মে তে প্রতি বছর আমরা একজন দেহপসারিনী খুঁজে বের করবো, আর তাকে তার একদিনের উপার্জনের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে দেবো, সেটা যতই হোক। বিনিময়ে তার কাছে আমরা শুনবো এ পথে আসার পেছনের গল্প। অবশ্যই সেই গল্প কোথাও ছাপা হবে না। এটা একরকম স্টাডি। এই স্টাডির ফলাফল দিয়ে আমরা কি করবো তা অবশ্য এখনো ঠিক করিনি, তবে কিছু যে একটা করবো এতে সন্দেহ নেই!
আজ এ পর্যন্তই! সবার জন্যে শুভকামনা।
আগের পর্বগুলো এখানে!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৭