অনিয়মিত এই সিরিজটা যারা আগে পড়েননি, তাদের জন্য কয়েকটা কথা বলা যেতে পারে। এই লেখাগুলোতে আমি এমন কিছু ঘটনা শেয়ার করে থাকি, যেগুলো আমার সাথে ঘটে। এমন কিছু ঘটনা যেগুলো বেশ বিরক্তিকর। মেজাজ খারাপ করে দেবার জন্যে যথেস্ট। ঘরে বাইরে যথেস্ট ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত বলেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই ব্লগের পাতায় মনে ক্ষোভ টুকু উগড়ে দেয়া!
আচ্ছা এবারে শুরু করি তাহলে!
একঃ
বাসা বদল করেছি। পুরনো রুমমেট দের ছেড়ে নতুনদের সাথে উঠলাম। এমনিতে ছেলেগুলো ভালোই। ঈদের ছুটিতে বাসায় যাবো, ওরা অন্য ভার্সিটির, ওরা যাবে পরে। আমার রুমের একপাশের দরজা আবার ফ্রেঞ্চ ডোর। ওদের তখন পরীক্ষা চলছে। আমাকে বলল এদিকের দরজাটা খোলা রেখে গেলে কোন সমস্যা হবে কিনা, ওরা গ্রুপ স্টাডি করবে একদিন। ফ্রেন্ডরা আসবে, থাকার জায়গা হবে না। আর আমি তো থাকছিই না। আমি ভাবলাম কোন কিছু তো হবার কথা না। তাই খুলে রেখে গেলাম। ভালো মত ঈদ করলাম। ফিরে এসে দেখি আমি কিছু কাগজের বাক্সে করে আমার মালপত্র এনেছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা নেই। একজন কে জিজ্ঞেস করলাম- ও তো অবাক। তোমাকে অমুক (আরেকজনের নাম) বলেনি? কী বলবে? ওইটা তো পুড়ে গেছে! পুড়ে গেছে মানে! ক্যাম্নে পুড়লো? আমরা পড়তে পড়তে দেখি খুব মশা। কয়েল জ্বালালাম, এরপর সবাই বাইরে গেছি। আসার পর দেখি কয়েল শেষ হবার পর নিচে পড়ে আগুন ধরে গেছে। তাড়াতাড়ি পানি ঢেলে নিভালাম।
আমার তো মাথায় হাত! ওই কার্টনে আমার ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি কার্ড, ব্যাঙ্কের চেক, চশমার প্রেসকিপশন, মাউস, হেডফোন, খাতা, নতুন কিনে আনা এ ফোর অফসেট পেপারের বক্স এইসব ছিলো। মোটামুটি সবই পুড়ে কয়লা হয়েছে!
কী আর বলবো। কিছু বলতে ইচ্ছা করলো না। মানুষের নূন্যতম এটুকু বোধ থাকা দরকার যে কারো কাছ থেকে কিছু নিলে সেটা ঠিকমত ফিরিয়ে দেয়াই নিয়ম।
এরপর রুমে এসে দেখি কটনবাড গুলো নেই। যাবার আগে আমি একটা নতুন প্যাকেট কিনে এনেছিলাম। কী মনে করে নিচের তাকে দেখলাম। আমি কয়েল কিনে রাখি প্যাকেট ধরে। সেখানে থেকে একটা প্যাকেট খোলা এবং দুটো কয়েল অবশিষ্ট আছে! তখন বুঝলাম আমার কয়েল দিয়েই আমার কার্টন পুড়েছে! মেজাজটা খুবই খারাপ হলো। এরপর গোসল করতে যাবো, সাবান পাই না! দুটো বাথরুম। অন্যটায় গিয়ে দেখি সাবানটা হাত ধোয়ার সাবান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে!
প্রশ্নটা হলো আমি কী রুমটা এবং এর ভেতরকার সবকিছু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়ে গিয়েছিলাম নাকি?
দুইঃ
খেতে গিয়ে প্রতিদিনই দেখি আমার প্লেটে অন্য কে যেনো খেয়ে গেছে! আমি একটু পরে খাই অন্যদের থেকে। কয়েকদিন তক্কে তক্কে থাকলাম। কে খেয়ে যায় দেখেও ফেললাম। পরেরদিনও একই কাহিনী। ওকে যেয়ে বললাম, ভাই তোমার কী প্লেট নাই নাকি? আছে তো! তো নিজের প্লেট বাদ দিয়ে অন্যের প্লেটে খাও ক্যানো? কোন প্লেট? আমি দেখালাম। ও বলতেসে এইটা তোমার প্লেট? আমি তো ভাবছি আমার! (উল্লেখ্যঃ ওর প্লেটের ডিজাইন আর সাইজ কোনটাই আমারটার সাথে মেলে না।) আমি বললাম এবার তো চিনসো? সে কোথায় স্যরি বলবে না বলতেসে একজন আরেকজনের প্লেটে খেলে কিছু হয়না। আমি বললাম হওয়া হয়ির বিষয় না! আমি পছন্দ করি না ব্যস!
রাত তিনটা। পেটের মধে ইঁদুর ডন দিচ্ছে। রাতে আগে খেয়েছি, কারণ বুয়া আসছে না ৫ দিন। সব হাড়ি পাতিল ময়লা। আমার পার্সোনাল কিছু বাসন আছে। সেখান থেকে একটা কড়াই নিয়ে রান্নাঘরে হাঁটা দিলাম। নুডুলস বানাবো।
হ্যাঁ। আমার প্লেট ময়লা। বাকী সবগুলোও ময়লা। তার উপর দিয়ে তেলাপোকা খেলাধুলা করছে!
দুধর্ষ একটা পরিচিত গালি দিয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করলাম।
তিনঃ
বাজার করার দিন আমার। জিজ্ঞেস করলাম কী কিনবো? চাল-ডাল-মরিচ-পেঁয়াজ-হলুদ-তেল। আচ্ছা। তো রান্না কী হবে? মুরগী। আমি বুঝলাম না! মুরগী কি আগে থেকেই কেনা আছে! আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম, কী কী কিনবো? চাল-ডাল-মরিচ-পেঁয়াজ-হলুদ-তেল। রান্না কী হবে? মুরগী।
আমি শিওর হলাম, মুরগী আগে থেকেই কেনা আছে। নাহলে তো আমাকে কিনতেই বলতো।
সময়মত বাজার করে এনে বাসায় রেখে আমি বের হয়ে গেছি।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি- এমন সময় ফোনঃ কি মিয়া মুরগী কিনো নাই? মুরগী না কেনাই আছে? না তো! তো আমাকে কিনতে বললা না ক্যানো? বলেছিলাম তো! কই? আমি জিজ্ঞেস করলাম কী বাজার করতে হবে মুরগী তো বলো নাই। দুবার জিজ্ঞেস করলাম তাও বলো নাই। আচ্ছা ভাই কষ্ট করে মুরগীটা নিয়ে আসো।
অগত্যা...
চারঃ
এইটা তিনের সাথে রিলেটেড। মুরগীটা কিনে এনে কম্পিউটার ছাড়লাম। গান শুনতে গিয়ে দেখি আমার স্পিকার নাই! বলেছিলাম না আমার একপাশের দরজা ফ্রেঞ্চ ডোর? ওটা আমি যাবার সময় খুলে রেখে গিয়েছিলাম। পাশের রুম থেকে এসে আমার স্পিকার নিয়ে চলে গেছে!
বলি, আমার জিনিসপত্র কী সব সরকারী নাকি!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৫