
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলাকে এখন শিল্পনগরী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ৬০ এর দশকের পর থেকে জাহাজ ভাঙ্গা কার্যক্রমের স¤প্রসারণের সাথে সাথে এখানে প্রতিনিয়তই গড়ে উঠেছে নিত্য নতুন শিল্প অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে বিগত ৪ দশকে উপজেলাটি প্রায় কৃষিভূমি শূন্য হয়ে পড়েছে। আর বিগত দেড় দশকে এই শিল্প কারখানা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার হার এত বেশি ছিল যে, যা অব্যাহত থাকলে আগামী দু’দশকে উপজেলায় কৃষিভূমির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ কারণেই ইতিমধ্যে এই জেলাকে অকৃষি ভূমি উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে।
ভাঙ্গা জাহাজের স্ক্রাপ নিয়ে বার-আউলিয়া থেকে সিটি গেইট, কর্ণেলহাট পর্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে জমজমাট স্ক্রাপ ব্যবসা কেন্দ্র। এছাড়া জাহাজের ইঞ্জিন, জেনারেটর, বয়লার, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কেবলস্, ফার্ণিসার, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনারের পৃথক পৃথক ব্যবসা কেন্দ্র, মিল, এম.এস.এস রড সহ মূল্যবান ধাতব সামগ্রীর বৃহৎ কারবার। শুধু তাই নয় সীতাকুণ্ড সহ দেশের ৪২৫টি রি-রোলিং মিল চলে এই জাহাজের উপর নির্ভর করে। বাণিজ্যের এমন প্রসারের কারনেই সীতাকুণ্ডের সাথে জডিয়ে গেছে আর্ন্তজার্তিক বানিজ্য। আর ফলে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকে ৮ শত কোটি টাকা বার্ষিক রাজস্ব সহ সীতাকুণ্ডে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার মোট ২হাজার কোটি টাকার ও বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ফলে এলাকাবাসী একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন যে আজকের শিল্পনগরী সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের দান। চারদশক আগের সীতাকুণ্ড সম্পর্কে কদমরসুলের জাহানাবাদের বৃদ্ধ রহুল আমিনের কথাতে ও সে কথাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, ফৌজদারহাট, মাদামবিবিরহাট, বার আউলিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের যেসব স্থানে আজকে শীপ ইয়ার্ড কিংবা বড় বড় কলকারখানা এক সময় সেখানে কিছু কিছু ঝাউবন, কেওড়াবন ছিল আর ছিল হালকা জনবসতি। এতসব কলকারখানার কথা তারা সে সময় কল্পনা করতে পারতেন না। তারপুত্র এখন একজন কন্ট্রাকটর। সে জাহাজ গুলোতে শ্রমিক নিয়োগ করে। কোন কারণে ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙ্গা না হলে তখন এসব কন্ট্রাক্টররা বেকার হয়ে পড়ে। সংসারে টানা পোড়েন দেখা দেয়। একজন ফার্ণিসার ব্যবসায়ী সিরাজুল বলেন, যে সব ইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙ্গা হয় সেখানের হাটবাজারে ব্যবসা বাণিজ্য জমজমাট চলে। আবার বছরের কোন কোন সময়ে জাহাজ কাটা বন্ধ থাকলে সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যে দারুন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ সময় রি-রোলিং মিল, কেবলস্, তামা-পিতল সহ প্রায় সকল ব্যবসা কেন্দ্রে কাঁচামাল সংকট দেখা দেয়, ফলে স্তব্দ হতে থাকে জনজীবন। এ সময় বিদ্যুৎ, গ্যাস প্রভৃতি শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফলে তা দেশের অর্থনীতিকে ও প্রভাবিত করে। জানা গেছে, স্বাভাবিক কারনেই স্থানীয় ৮০% মানুষ এই সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যে আতœনিয়োগ করেছে। এদিকে বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বললে তারাও জানান, তাদের মত অসংখ্য শ্রমিক আজ এখানে বেঁচে থাকার আশায় এসেছে কাজ করতে। এদের মধ্যে যারা অস্থায়ী শ্রমিক তারা ইয়ার্ডে জাহাজ কাটা বন্ধ থাকলে স্ক্র্যাপ, রি-রোলিং মিল, ক্যবলস, ফার্নিচার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজে বাঁচে এবং পরিবারকে বাঁচায়। ফলে এখানে গড়ে উঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ও দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু এর পরও এসব বিষয়ে সরকারি কোন সহযোগিতা নেই জানিয়ে শীপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, একথা সবাই জানে যে কেবল মাত্র শীপ ইয়ার্ডগুলো বাঁচলেই সীতাকুণ্ডের বাকি সব শিল্প বাঁচবে। তবুও প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা না থাকায় এই শিল্প মৃসনভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। জাহাজ কেনাবেচার আন্তর্জাতিক বাজারদরের কারনে মাঝে মধ্যেই অনেকে জাহাজ না কিনে ফিরতে ও বাধ্য হয়। কখনো কখনো অনেকে কেনা দামের চেয়ে ও লোকসানে লোহা বিক্রি করে থাকে। প্রভৃতির সাথে রয়েছে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র। এতকিছুর পর ও মালিকরা যেভাবে ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজ প্রচেষ্টায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে তা প্রসংসার দাবী রাখে। আর শিপ ইয়ার্ড গুলো বেঁচে আছে বলেই শিল্প নগরী সীতাকুণ্ড দেশের মানচিত্রে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে। তাই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে সব রকম সহযোগিতা করতে সরকারী জরুরী
হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
১ম পর্ব
১ম পর্ব

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




