ভারতের গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সাম্প্রদায়িকতার কৌশল বলেন বা অপকৌশল বলেন ভোটের রাজনীতিতে প্রয়োগ করেছিল এবং সফলও হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদি কঠিন হিন্দুত্ববাদির ভূমিকায় থেকে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নানা অত্যাচার করেছিলেন এমনকি গুজরাটে মুসলমানদের বাবরী মসজিদ ভাঙার খলনায়ক এই মোদিই ছিলেন। মুসলমানদের মসজিদ ভাঙার অপরাধে মোদিকে কিন্তু জেলেও যেতে হয়নি নির্বাচনেও পরাজয় বরণ করতে হয়নি। সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িকতার জয় হয়েছে বললেই চলে।
আমেরিকার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ভোটের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রদায়িকতার কৌশল বলেন বা অপকৌশল বলেন তা অবলম্বন ও প্রয়োগ করেছিলেন। সংখ্যালঘু ভীনদেশিদের নানা সুবিধা কমিয়ে আমেরিকানদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, মুসলমানদের আমেরিকায় ঢুকা নিষেধ নানা ধরনের কথা বলে আমেরিকানদের ভোট আদায় করাই ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য। অবশেষে তার উদ্দেশ্য সফলও হলো। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটন ছিল পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক। সবার কথা বলতে গিয়ে নিজের পরাজয় নিশ্চিত করলেন।
এবার আসা যাউক বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বৃত্তান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ, পার্বত্য অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন, হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যন, শফী হুজুরের সাথে হাসিনার সখ্যতা গড়ে ওঠা সব মিলিয়ে দেশে এখন সাম্প্রদায়িক বনাম অসাম্প্রদায়িকতার দ্বন্ধ বিরাজ করছে। ভাস্কর্য অপসারণ নিয়ে হাসিনার অবস্থান ও বিবৃতিতে আস্তিক নাস্তিক কম-বেশ অনেকেই হাসিনার উপর ক্ষেপা। আমার প্রশ্ন হলো হাসিনা কি আদৌ সাম্প্রদায়িক? যার শাসনামলে থানার ওসি থেকে শুরু করে সচিবালয়, বিচারালয় পর্যন্ত সর্বোচ্চ পদদারী লোকটা সংখ্যালঘু সেই হাসিনা সাম্প্রদায়িক হয় কিভাবে? এটাই ভোটের রাজনীতি। নির্বাচন আসন্ন তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার তালে তাল মিলিয়ে এই যাত্রায় পাড় পাওয়ার চেষ্টা করছেন মাত্র। এটা দোষের কিছু না। আগেও বলেছি এখনও বলছি ভোটের রাজনীতিতে সবই হালাল। হাসিনা চাইছে হেফাজতের কাধে হাত রেখে ধর্মান্ধ মুসলমানদের ভোট হাসিল করতে। এতদিন হাসিনা সরকার বলতো মাদ্রাসার পোলাপান জঙ্গী এখন আবার সেই হাসিনা সরকারই কওমি মাদ্রাসাগুলোকে শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাওরায়ে হাদিস সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমান প্রদান করেছেন। কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বীকৃতি মিলেছে এটা যেমন সত্য জঙ্গীবাদ নাটকে অনেক নীরিহ ছেলের জীবন নষ্ট হয়েছে এটাও অস্বীকার করা যাবেনা। সরকার বলেন আর বিরোধীদল বলেন সবাই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিই করে থাকেন। বিএনপি, জামায়াতকে আকড়ে ধরে আছে, আ’লীগ, হেফাজতের হেফাজতে আছে। ভোটের রাজনীতি সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠদের দিকেই হেলে পড়ে। যেহেতু বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলমান, তাই ভোটের আগে আর সংখ্যালঘুরা নিস্তার পাবেনা। ভোটের খেলায় সংখ্যালঘুরা বরাবরই ফুটবলের মতো। লাথিতো খেতেই হবে।
আমরা অসাম্প্রদায়িকতার যত ঢোলই পিঠাইনা কেন, ক্ষমতাসীন দল বলেন আর বিরোধী দল বলেন এখন সবাই নিজেদের ভোট যুদ্ধে জয়ের পথ নির্মানে ব্যাস্ত। রাজনীতির এই উত্তপ্ত মাঠে আমরা কেবলই দর্শক আর সাম্প্রদায়িকতার কৌশল আগামী নির্বাচনে কতটুকু কাজে লাগে এখন এটাই দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।#
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৬