somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত সেই ছেলেটা (পর্ব ২)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বটা এখানে আছে। যে কেউ ইচ্ছে করলে ঢু মারতে পারে। তবে না মারলেও কোন সমস্যা নাই। কারন ঐ টা না পড়লেও এই লেখা বুঝতে কোন সমস্যা হবে না।

আমার রুমমেট কে নিয়ে গল্প করছিলাম। ওর নাম সাইফুল। আমার ভালো বন্ধুদের একজন। যাইহোক, কাজের কথায় আসি।
আমি ভারসিটিতে পড়ার সময় একটা সফটওয়্যার ফারমে কাজ করতাম। বিকালে যেতাম, আসতে আসতে রাত হয়ে যেত। এরকম কোন এক বিকালে আমি কাজ করছি ফার+মে, ঠিক সেই সময় আমার এক বন্ধু ফোন করে জানাল, সাইফুলের অবস+হা তেমন ভাল না, ওকে হাসপাতালে ভর+তি করা হয়েছে, আমি যেন তাড়াতাড়ি চলে আসি। আমি কোনমতে অফিসে ম্যানেজ করে দ্রুত চলে আসলাম হাসপাতালে। রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এসে দেখি, আমার প্রায় ১০/১২ জন বন্ধু অলরেডি চলে এসেছে। অবশ্য সাইফুলের অবস+হা ও কিছুটা ভাল। আসলে দুপুরে ভাত না খেয়ে তেলে ভাজা কি খাইছে, আর তাতেই প্রচন্ড প্যাট ব্যাথা। ঘটনার সূত্রপাত এভাবেই। পরে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বেড়েছে। সাইফুল আমারে পেয়ে মনে হয় আরো কিছুটা চাংগা হয়ে গেল, হাজার হোক রুমমেট তো। আমি আমার বন্ধুদের বললাম, কে খবর দেয়া হয়েছে? সবাই বলল, সাইফুলের খবর তো আলরেডি লেডিস হলে চলে গিয়েছে, তারমানে ও জেনে গেছে। আমি সাইফুলরে আসস্ত করলাম, ওকে খবর পাঠানো হয়েছে, বলা যায় না, যে কোন মুহূর+তে চলে আসতে পারে। ব্যাচারা শুনে খুব খুশী হলো। বুদ্ধিমান পাঠকরা মনে হয় ইতিমধ্যে এই র পরিচয় টা বের করে ফেলছেন। হচ্ছে সাইফুলের ভাললাগা মানুষ, আমাদের ক্লাসেই পড়ে। তবে কখনো মুখ ফুটে সেটা বলতে পারে নাই। তাতে অবশ্য বিশেষ কোন সমস্যা হয় নাই, কারন ব্যাপারটা ক্লাসের সবাই জানত। ইতিমধ্যে আমার বন্ধুরা হাসপাতালের সুন্দরী ইন্টার+নী ডক্তারদের দিকে দৃষ্টি দিল এবং নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। একটু পর দেখি সাইফুল ও ওদের সাথে সে আলোচনায় যোগ দিছে। বুঝলাম, সাইফুলের অবস+হা উন্নতির দিকে।

যাইহোক, একটু পরে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল, আমাকে আর সাইফুলকে রেখে। তখন বাজে রাত ১০টা। ইতিমধ্যে অবশ্য সাইফুলকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। আমার মেজাজ চরম খারাপ হতে শুরু করল, কারন আমাকে হাসপাতালে থাকতে হবে, সাইফুলের সাথে।
আমি হাসপাতালে থাকতে পারি না - এটা আমার কাছের মানুষরা বেশ ভালো ভাবেই জানে। আমি সাইফুলকে বললাম, তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো, আমি দেখি একটু হাটাহাটি করে আসি। সাইফুল বলল, রেফিন, তুমি চলে যাও মেসে, আমি একা থাকতে পারব। আমি বললাম, চুপ, একদম চুপ। ওরে কিছুক্ষন ধমক-টমক দিয়ে হাসপাতাল পরিদর+শনে বের হলাম। বাইরে থেকে জুস কিনে খাইলাম, কিন্তু সময় তো আর যায় না। পুরা রাত কিভাবে পার করব? রাত ২টার দিকে সাইফুলের কাছে এসে দেখি, ও ঘুমায় না, তাকায় আছে। কিছুক্ষন দুজনে মিলে গল্প করলাম। কিন্ত কতক্ষন আর গল্প করা যায়। হটাত সাইফুল কে বললাম, সাইফুল তুমি কি সুস+হ্য বোধ করতেছো? ও বলল, হ্যা - কোন সমস্যা তো আর নাই। আমি বললাম, হাটতে পারবা? ও বলল, হ্যা, কিন্ত স্যালাইন যে চলতেছে এখনো। আমি বললাম, ঐ টা আমি ভুলে যাও এবং আগামী কিছুক্ষন আমি যা করতে বলব, তুমি তাই করবা, ঠিকাছে? ও মাথা নেড়ে সায় জানাল। আমি তখন বললাম, আমরা এখন মেসে যাব, তোমার কোন আপত্তি আছে? ও বলল, না, কিন্তু...............আমি বললাম, সব ব্যাবস+হা আমি করতেছি, তুমি শুধু কোন কথা বলবা না।

আমি গিয়ে নারস কে বললাম, আমরা এখন চলে যাব, আপনার কোন সমস্যা আছে? নারসদের ব্যাবহার খুব খারাপ - এই কথাকে পুরাপুরি মিথ্যা প্রমানিত করে ওই মহিলা বলল, রিলিজ না নিয়ে কেমনে যাবেন? আমি বললাম, দেখেন আপনি কি চান ওই ছেলেটা (সাইফুল) আবার অসুস+হ্য হয়ে যাক, ও হাসপাতালে থাকতে পারে না (আমি যে হাসপাতালে থাকতে পারি না, এটা পুরাপুরি চেপে গেলাম), হাসপাতালে থাকলে আবার অসুস+হ্য হয়ে পড়বে। মহিলা বলল, না, তাহলে তো যাওয়া ই উচিত । মহিলা আরো কিছুক্ষন উপদেশ-টুপোদেশ দিল এবং বলল, কালকে যেন এসে রিলিজ পেপার নিয়ে যাই। আমি বললাম, কোন সমস্যা নাই।
রাত বাজে তখন ৩টা। কোন রিক্সা যাইতে চায় না। হাসপাতাল থেকে আমার মেসের দূরত+ব ১৫ মিনিটের। অগত্যা কোন উপায় না দেখে সাইফুলকে বললাম, সাইফুল হাটতে পারবা না? ইতিমধ্যে সে আমার কাম-কাজ দেখে পুরাপুরি আউলা হয়ে গেছে। সে বলল, পারব, তুমি আছো না?

রাত ৩টার সময় একহাতে স্যালাইন ব্যাগ, আর অন্য হাতে কাথা-বালিশ নিয়ে হেঁটে হেঁটে মেসে ফিরছি এবং সেই স্যালাইন ব্যাগের অন্য প্রান্ত আর একজনের হাতে সুই দিয়ে ঢুকানো - দৃশ্যটা নিশ্চয় খুব সুন্দর কিছু না। দৃশ্যটা যে সুন্দর না, সেটা বুঝেছি রাস্তায় যে অল্প কিছু মানুষ আমাদের দেখেছে, তারা সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল।

যাইহোক, কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই মেসে আসলাম। মেসে আসার পর, সাইফুল আমাকে বলল, রেফিন, তুমি যা করলা আজকে, আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমি ভাবলাম, ব্যাচারা মনে হয় মনে কষ্ট পাইছে, এতো রাতে হাটায়ে আনছি, তাই এ কথা বলতেছে। কিন্তু ও যেটা বলল, সেটা শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। বলে, রেফিন, আসলে হাসপাতালে আমার এক ফোটা ঘুম আসছিলো না, এখন নিজের রুমে ফাটাফাটি একটা ঘুম দেওয়া যাবে।

আমি খুব আনন্দিত মন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। একটু পরে সাইফুল বলে, রেফিন, হাসপাতাল থেকে এভাবে চলে আসাটা মনে হয় ঠিক হয় নাই। আমি না শোনার ভান করে বললাম, হু। ব্যাটা তখন যেটা বলল, সেটা শুনে আমি পুরাপুরি টাশকী খেয়ে গেলাম। বলে, হাসপাতালে থাকলে আমাকে দেখতে অন্তত আসতে পারত, এখন তো আর কোন সম্ভবনা ই নাই।

আমি কোনমতে হাসি চাপায় রেখে বললাম, হু............
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×