(১) আমার চেহারাটা খুব কাঠখোট্টা টাইপের, কিছুটা ভয়ংকর ও। সেই ভয়ংকর ব্যাপারটাকে আরো একটু বাড়িয়ে দিয়েছে আমার ব্যাবহার। রাগলে আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায় কিংবা মেজাজ খারাপ হলে আমার খুব রাগ হয়। কিন্ত এর পরেও আমার চেহারাতে এমন কিছু একটা আছে, যেটা দেখে মানুষ আমাকে গল্পবাজ ভাবে। উদাহরন দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাসে উঠেছি উত্তরা থেকে ফার্মগেট যাব, যথারীতি আমার পাসের আসনের ভদ্রলোক আমার সাথে কোন এক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গল্প জুড়ে বসবে, চুল কাটাতে গেছি সেলুনে। তো সেই সেলুনের লোক একটু পরে গত রাতে সে কি করেছে, তার এক ফিরিস্তি আমার কাছে পেশ করে, যদিও তার দোকানে আমার প্রথম গমন। এই হলো ব্যাপার। অথচ আমি ঠিক উলটো স্বভাবের এক ছেলে। পারতপক্ষে কারো সাথে যেচে কথা বলি না। আমার নিজের একটা জগত আছে, সেই জগতে থাকতেই আমার বেশি ভালো লাগে।
(২) আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি, তখনকার ঘটনা। আমাদের সময়, ক্লাস টুতে কিন্টারগার্ডেন ব্রিত্তি ছিলো। আমি তখন ময়মনসিংহে একটা স্কুলে পড়ি। আমাদের ক্লাসে বেশ ভালো একটা ছেলে ছিলো সুমন নামে। পড়াশুনায় ভালো আর কি। তো ব্রিত্তি পরীক্ষার আগে আম্মু আমাকে নিয়ে সুমনদের বাসায় গিয়েছিল, কিছু সাজেশন বা নোট আনার জন্য। যেহেতু সুমন ভালো ছাত্র তাই। কিন্তু যাওয়ার পরে ওর আম্মু বললো সুমন বাসায় নাই। অথচ আমরা বাসায় যাওয়ার কিছুক্ষন আগে সুমনকে দেখেছি বাসায় ঢুকতে। যাইহোক, ব্যাপারটা আমি আর আম্মু দুজনেই বেশ ভালো রকম বুঝতে পেরেছিলাম যে সুমনের আম্মু চাচ্ছে না আমরা সুমনের কাছ থেকে নোট নেই। পড়াশুনা জিনিসটাকে আমি কখনোই সিরিয়াস ভাবে নেই নাই, ভবিষ্যতে নিব, সে সম্ভাবনা ও নেই। কিন্তু এরপরেও সুমনের আম্মুর ব্যাবহার আমার ছোট্ট মনে গভীর একটা দাগ কেটেছিল। এবং হ্টাত করে আমার মনে হলো - ব্যাপারটা আসলে আমার চেয়েও আমার আম্মুর জন্য খুব খারাপ হয়েছে। আমার আম্মুর মনটা খারাপ হয়েছে - এই কথা চিন্তা করে আমি রিক্সাতে উঠে আম্মুকে বললাম, আম্মমু মন খারাপ করো না, দেখো আমি ও ব্রিত্তি পাবো। আমি যখন এই লেখাটা লিখছি, তখন দেখি আমার চোখে পানি। এই পানি আমার আম্মুর জন্য - ছোটবেলায় আম্মুর সেই কষ্টটার কথা মনে করে। যাইহোক, এর পরে যেটা ঘটলো, সেটা আমার সাথে যায় না। ক্লাস টুর কোন ছাত্র শেষ রাতে উঠে পড়াশুনা করে - আমি নিজেকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এর ফলাফল হলো ভয়াবহ। ক্লাস টুর প্রতিটা বই আমি এক অর্থে ভাজা ভাজা করে ফেলেছিলাম। যথারীতি ব্রিত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো। রেজাল্ট যেটা হলো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি প্রথম গ্রেডে ব্রিত্তি পেয়েছি আর সুমন নামের সেই ভালো ছেলেটা ব্রিত্তি পাই নাই। আমি ব্রিত্তি পেয়েছি - এতে আমার কোন আনন্দ নাই। আমার সমস্ত আনন্দ - সুমন ব্রিত্তি পাই নাই। আমমু অবশ্য প্রচন্ড খুশী হয়েছিল, সেই খুশীটা ও আমার জন্য কম না। যাইহোক, এই পুরো ব্যাপারটার একটা খারাপ দিক ছিল। আম্মু জেনে গিয়েছিল যে আমি ইচ্ছে করলেই চরম পড়াশুনা করতে পারি, কিন্তু তারপরে ও করি না। তো এর অনেক বছর পরেও আম্মু আমাকে ক্লাস টুর মত সেই পড়াটা প্রায় ই পড়তে বলে। কিন্তু আমি আম্মুকে কিভাবে বোঝাই যে সেই পড়াটা ছিল - একটা ছোট্ট ছেলের, তার মায়ের প্রতি করা অপমানের প্রতিশোধ।
(৩) আমার আম্মু মনে প্রানে বিশ্বাস করে - তার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র মায়া-দয়া বা ভালোবাসা নাই। তিন মাস যাবত আম্মু বাংলাদেশে নাই, আমি একবারো ফোন করি নাই, প্রতিবার ই আম্মু করে। আম্মুকে কিভাবে বোঝাই যে আমার আম্মু ছাড়া আমি অচল, একেবারে অচল।
(৪) অনেক দিন পরে আজ সামুতে আসলাম। লিখতে একদম ইচ্ছে করে না। ভুল বললাম লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কি-বোর্ড টাইপ করতে ইচ্ছে করে না। তাই কিছু বিচ্ছিন্ন লেখা লিখলাম। এটাকে ওয়ার্ম আপ বলা যেতে পারে।