ঈদের ছুটি হয়েছে। মাকে দেখিনা অনেক দিন। তাই ঢাকার সীমাহীন যনজট, অতিরিক্ত ভাড়া, পথের নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে ছুটছি স্মৃতিমাখা গ্রামের বাড়ি। সেখানে আছে আমার মা। আত্মীয় পরিজন আর চেনা মানুষের মুখ। আমার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলায়।ঈদে বাড়ি ফেরার কী যে আনন্দ, তা কেবল তারাই জানে, যারা গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করে। ঈদের সঙ্গে গ্রামের একটি সেতুবন্ধ তৈরি হয় আমাদের বাঙালিদের।
তাই গ্রামের বাড়ি পৌঁছে আত্মীয়-পরিজনের দেখা হওয়ার আনন্দের কাছে পথের সব কষ্টই ম্লান হয়ে যায়।ঢাকায় থাকি নয়া-পল্টনের কাছে। সেখান থেকে থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড ২০ মিনিটের পথ, যেতে লাগলো পাক্কা এক ঘণ্টা। বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখি তখনও আমার বাস আসেনি। কিন্তু বাড়ির দিকে আমার মন ছুটে চলেছে জেটের গতিতে। অন্য যে বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে তার ভেতরে, ছাদের ওপরে মানুষে ঠাঁসা। বাসের চেয়ে ভাড়া কিছু কম হওয়ায় অনেকে ট্রাকেও উঠেছেন। তবু বাড়ি যেতে হবে।আমার বাস এসে যাওয়ায় বাসে উঠে পড়লাম। বাসের ভেতরেও একটা ঈদের আমেজ। সবার চোখমুখ বাড়ি ফেরার উত্তেজনায় ঝকমক করছে।
ঘণ্টা তিনেক পর বাস মাওয়া ফেরিঘাট এসে পৌঁছলো। এখানকার ভিড় দেখার মতো।এখান থেকে লঞ্চে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আমার বাড়ি। নদীর ওপারে গিয়ে আবার বাসে উঠতে হবে।অবশেষে ভিড়ের ভেতর ঠেলাঠেলি করে লঞ্চের এক কোণে আসন পেতে বসে পড়লাম। কোথাও কোন জায়গা খালি নেই। লঞ্চের ভিড় দেখে মনে পড়ে গেল পিনাক-৬ লঞ্চডুবি ঘটনা।গত বছর অগাস্টের চার তারিখে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে মাওয়া ঘাটে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবে যায়। বাড়ি ফেরার আনন্দের ভেতরেও এই ঘটনাটা মনে পড়ে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছিল। চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছি মনে মনে, ডুবে যেন না মরি। মাকে যেন দেখতে পাই।লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে এখানে...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭