somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইঃ বিজ্ঞান কি ও কেন লেখেছেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজ্ঞান কি ও কেন
লেখেছেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
পড়তে বা ডাউনলোড এখানে

লেখকঃ
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (জন্ম: ১৯ নভেম্বর, ১৯১৮ - মৃত্যু: ৮ মে, ১৯৯৩) ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তার সবচেয়ে বড় কাজ হল লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা করেন এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও শ্রুশ্রুত সম্পর্কে।


১৯৯২ সালের জুনে দেবীপ্রসাদ যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন, তখনো তিনি ইতিহাসের বাঁকবদলের নানা দিক সম্পর্কে নতুন কিছু লেখার কথা ভেবে যাচ্ছিলেন। সে বিষয়টিও আমাদের জানিয়েছেন তার স্নেহভাজন শিষ্য তপতী চক্রবর্তী। দেবীপ্রসাদের মৃত্যুর প্রায়-অব্যবহিত পূর্বেকার এক দিনের স্মৃতিচারণ করে রণবীর চক্রবর্তী লিখেছেন-
“তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা তাঁর মৃত্যুর মাসখানেক আগেÑ তাঁর বাড়িতে। অলকাদি [দেবীপ্রসাদের স্ত্রী] ফোন করে জানালেন দেবীদা আমাকে একটা কাজে খোঁজ করছেন। দেবীদাকে সেদিন খুব কষ্ট পেতে দেখেছিলাম। পিঠের অসহ্য যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী, তার সঙ্গে তাঁর চিরসঙ্গী শ্বাসকষ্টও অব্যাহত। একটা কথা বললে দ্বিতীয় কথার জন্য প্রায় পাঁচ মিনিটে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শয্যাপার্শ্বে বসে আমি ও বন্ধুবর শান্তনু দুজনেই সনির্বন্ধ অনুরোধ জানালাম, ‘দেবীদা, আজ থাক, পরে আবার বসব, একটু সুস্থ হয়ে উঠুন।’ হাত তুলে আমাদের নিরস্ত করলেন। তারপর অপরিসীম যন্ত্রণাকে চেপে রেখে প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে বললেন কেন আমায় ডেকেছেন। তাঁর বিশেষ প্রিয় বিষয় ছিল আর্যভট। আর্যভটের অসামান্য গণিতচর্চা কি নিছকই জ্ঞানচর্চা, না তার কোনো সামাজিক অভিঘাত ছিল? দেবীদার মাথায় ঘুরছিল মধ্যযুগের অন্তিমপর্বে ও প্রাক-আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের কথা। ইতালিতে গণিত ও জ্যোর্তিবিজ্ঞানের যে যুগান্তকারী অগ্রগতি ওই সময়ে হয়েছিল, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল ইতালির সমুদ্রবাণিজ্যে সাফল্যের তাগিদ। এমনভাবে কি আর্যভটের তত্ত্বকে দেখা যায় না? বিশেষ করে দেবীদা বলেছিলেন অন্তত একজন প-িতের মতে আর্যভট উত্তর ভারতের নয়, কেরালা উপকূলের মানুষÑ যে উপকূল ভারতে ও ভারত মহাসগরের সমুদ্র ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। ভারতের সমুদ্র ইতিহাস চর্চায় যে আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে তা দেবীদা বিলক্ষণ জানতেন। ফলে কোনোক্রমে বললেন, তুমি চেষ্টা করে দেখা না আর্যভটের গাণিতিক ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক তত্ত্ব ও মালাবার উপকূলের সমুদ্রবাণিজ্য নিয়ে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায় কি না। এরই সঙ্গে প্রায় এক নিশ্বাসে বলে গেলেন আর্যভট সম্বন্ধে কিছু প্রামাণিক বইপত্র ও প্রবন্ধাবলী; উদ্দেশ্য, আমি যেন ঐগুলো পড়ে যথাশীঘ্র ওর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি ও নিবন্ধ লেখায় হাত লাগাই।”

কী অসামন্য ও বিস্ময়কর জীবনচেতনা! রোগযন্ত্রণাকে তুচ্ছ করে, মৃত্যুভয়কে মনের কোণেও ঠাঁই না দিয়ে প্রকৃত সত্যের সন্ধানে নিরত থাকতে পারেন, বিজ্ঞানের আলোকে নিজে প্রদীপ্ত হয়ে উঠতে ও অন্যকেও সে রকম হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন- দেবীপ্রসাদের মতো এমন আশ্চর্য মানুষের সংখ্যা তো সারা পৃথিবীতেই একেবারে অঙ্গুলিমেয়।
আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি : দেবীপ্রসাদ মৃত্যুর অন্তরে প্রবেশ করেও অমৃতের সন্ধান করে গেছেন।

তথ্যসূত্রঃ
পৃথিবীর ইতিহাস : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, রমাকৃষ্ণ মৈত্র, অনুষ্টুপ, কলকাতা।
ভারতীয় দর্শন : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, এনবিএ, কলকাতা।
লোকায়ত দর্শন : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, নিউ এজ পাবলিশার্স, কলকাতা।
ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ, কলকাতা।
ভাববাদ খণ্ডন : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ, কলকাতা।
বিজ্ঞান কি ও কেন, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, মুক্তধারা।

লেখকের আরো বই পড়ুন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×