আবৃত্তির জন্য একটি কবিতা। বড় কবিতা। আশা করি আবৃত্তি শিল্পিদের এবং মানবতাবাদীদের ভাল লাগবে। আবৃত্তি শিল্পিদের আবৃত্তির জন্য উন্মুক্ত থাকলঃ
একমাত্র ভালবাসার কাছেই আমি সমর্পিত।
রাজার রক্তচক্ষু আর আমাকে বিব্রত করে না
কোন কামান-গোলা আর
করে না বিদীর্ণ এই হৃদয়।
কাল-বোশেখীর রুদ্ররুপ, সিংহের গর্জন
আর লোভাতুর জিহ্বার মিথ্যা আস্ফালন
কোনকিছুই শঙ্কিত করে না আর।
চৈত্রের দাবদাহ, পৌষের শীত
শ্রবণের অবিরাম বৃষ্টিধারা
আর ক্লান্ত করে না আজ আমাকে।
উঠোনের কোণে ছোট্ট ফুলের বাগান।
ছোট্ট হাতে লালিত একটি চারা
কুঁড়ি দিয়েছিল- ফুল হয়ে ফুটবে বলে।
দানবের বুটের তলায় পিষ্ঠ হলো যেদিন
বালিকার চোঁখের সমূখে।
সে চোঁখ আমি দেখেছি,
সে মুখ আমি দেখেছি,
সে ছোট্ট হৃদয় আমি দেখেছি।
এর চেয়ে বেদনাতুর আর কী দেখাবে আমাকে?
বালকের পোষা ঘুঘুর ছানাটি-
নিজের অস্তিত্বের চেয়েও বুঝি বেশী।
যেদিন খাঁচা ভেঙে কালো বেড়াল
থাবা বসালো;
কঁচি কলিজা, রক্ত, মাংস, হাড্ডি-
চিবিয়ে চিবিয়ে খেলো ওর চোখের সামনে।
বেদনা কাকে বলে -আমি দেখেছি।
এর চেয়ে ভয়ংকর আর কী দেখাবে আমাকে?
পিতাকে আমার মনে পড়ে না।
যখন শকুনীরা হামলে পড়েছিল আমাদের উঠোনে-
বাবা তার ভালবাসার বিশালতায়
দু বাহুতে আগলে রেখেছিল আমাদের।
শকুনীরা তার বলিষ্ঠ দু বাহু, পিঠ, কাঁধ
এবং বিশাল হৃদয় খুবলে খুবলে খেয়েছিল;
শুধু আমরা রয়ে গেলাম।
আমি আজ সমর্পিত ভালবাসার সে বিশালতায়।
মায়ের মুখ চেয়ে চেয়ে পাড়ি দিয়েছি এতটা সময়।
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রই-
কী করে এক রমণী
একা পাড়ি দিতে পারে অথৈ পাথার?
এমন দৃঢ়তায়!
আমি নতজানু, আমি সমর্পিত
ভালবাসার সে সৌন্দর্যে, সৌকর্যে, দৃঢ়তায়।
ভালবাসার মুগ্ধতায় আজ আমি স্নাত।
ভালবাসার বিশালতায় সমর্পিত।
ভালবাসার সৌন্দর্যে, সৌকর্যে
ভালবাসার দৃঢ়তায়, নান্দনিকতায়
আমি আপ্লুত। ভালবাসায় আমার বসবাস।
যেদিন মানবতা বিধ্বস্ত হলো-
আমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলাম।
আমার হৃদয় বিস্ফোরক হলো
দু চোখ হলো কামানের গোলা
দু হাত হলো স্টেনগান
মুখের এক একটি শব্দ হলো বুলেট।
এবং সেদিনই আমার চোখে
প্রথম চোঁখ রাখলো আমার সন্তান
-তার দু চোখে ভালবাসার আবাহন।
কোথাও যাই না আর-
ভালবাসার কাছেই সমর্পিত আবার।
একবার ঝড় আমাদের করেছিল ঘরছাড়া।
প্রচন্ড সেই ঘুর্ণিঝড়ের সাথে আমরা
যুদ্ধ করতে, করতে, করতে...।
অবশেষে সময়ের সাথে ঘুর্ণির পিছুটান।
আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাত মানুষের মমতা
আর ভালবাসার আবাহনে ঐক্যবদ্ধ হলো।
আবার সভ্যতাকে বিনির্মাণ করলাম-
আরও দৃঢ়তায়, সৌন্দর্যে, সৌকর্যে
ভালবাসার নান্দনিকতায়।
কোমল কিশোরীর অর্ধ-ফুটন্ত গোলাপে
আজ দানবের থাবা।
কিশোরের স্বপ্নের পাখির ছানা
কালো বেড়ালের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত আজ ।
আমার সন্তান আজ কালো হাতের ছোঁয়ায়
বিষে বিষে নীল।
আমার পিতার গৌরবময় মৃত্যুকে ওরা বলে অপঘাত,
মাতার দৃঢ়তাকে কলঙ্কিত করে,
আমার ভালবাসারা আজ ক্ষত-বিক্ষত ।
আজ আর কোন পিছুটান নেই আমার।
লোভাতুর ইন্দ্রিয়কে জয় করেছি বহু আগেই।
হিংসা নয়, ঘৃণা নয়-
ভালবাসার অস্ত্রে দু হাতে আগুন ছড়াবো চতুর্দিক।
আবার মানবতা হবে পূনর্বহাল
শিশুর হাসিতে উদ্ভাসিত হবে বিশ্ব
আবার ফুটবে ফুল, পাখিরা মেলবে ডানা
নির্মল বাতাসে বেড়ে উঠবে আমাদের ভবিষ্যৎ।
একমাত্র ভালবাসার কাছেই আমি সমর্পিত
এবং সমর্পিত হবেই পূরো বিশ্ব।
ভালবাসা যদি সুদূর দিগন্ত হয়
তবু সেদিকেই আমার পথ।
একমাত্র ভালবাসার কাছেই আমি সমর্পিত।
কবি : মোঃ ইফতেখার হোসেন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



